এ কেমন অধিনায়কত্বের মেয়াদ!

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব যেন গোলক ধাঁধা! কখন কে পেয়ে যায় আর কখন কাকে ছাড়তে হয় কেউ বলতে পারে না। গত বছরের অক্টোবরে অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তকে বুঝিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডেতে রাখা হয়। এরপর ফারুক আহমেদের জায়গা সভাপতি হয়ে এসে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ওয়ানডে থেকে সরিয়ে দিলেন শান্তকে। তার জায়গায় মেহেদী হাসান মিরাজকে আগামী ১২ মাসের জন্য এই ফরম্যাটে অধিনায়ক করা হয়েছে। অথচ বিশ্বকাপের বাকি দেড় বছর! 
মিরাজকে যখন অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত করছেন বোর্ড পরিচালকরা ঠিক সেই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেখানেও অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। শান্ত বলেন, ‘যে- থাকুক, লম্বা সময় যদি দেওয়া হয়, একটা বিশ্বকাপ চিন্তা করে বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সার্কেল চিন্তা করে, তাহলে প্ল্যান করা খুবই সহজ। ইতোমধ্যে টেস্টে একটা সুন্দর শুরু হয়েছে। আশা করব ওয়ানডেতেও এমন কোনো প্ল্যান করবে।’ অর্থাৎ তখনও শান্ত জানেন না বা নিশ্চিত নন ওয়ানডেতে তার অধিনায়কত্ব থাকছে কি থাকছে না। অথচ তখন জুম মিটিংয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বোর্ড পরিচালকরা। এখন এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, শান্ত অধিনায়কত্ব করতে চান না বা মিরাজ নতুন অধিনায়ক হতে পারেন এই আলোচনা তো নতুন নয় তাহলে কেনো জুম মিটিংয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো! অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এমন কোনো নিশ্চয়তাও নেই। 

আবার মিরাজ যে অধিনায়ক হবেন বা হতে পারেন এ ব্যাপারেও আগে থেকে বোর্ড থেকে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার হুট করে তাকে ঢেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ক্রিকেট অপরাশেসন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, আমাকে গতকালকে (বৃহস্পতিবার) ফাহিম স্যার ডেকে নিয়ে বলেছেন, তোমাকে আমরা এরকম দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেহেতু সামনে খেলা আছে, ওয়ানডে দলটা ঠিক করতে হবে। আমরা সেভাবে পরিকল্পনা করছি। তখন তিনি আমাকে জানিয়েছেন।’ হ্যাঁ, বাংলাদেশের সামনে আসলেই অনেক খেলা আছে। ২০২৫ সালের বাকি সময়টা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই যাবে। নাজমুল আবেদীন ফাহিমসহ বাকি বোর্ড পরিচালকরা নিশ্চয়ই এটিও জানেন ২০২৭ সালেই রয়েছে পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এখও সূচী প্রকাশ না হলেও সেটা দেড় বছরের অল্প কিছুদিন বাকি। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে মিরাজকে এক বছরের জন্য অধিনায়কত্ব দেওয়াটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। 

একই সঙ্গে তিন ফরম্যাটে তিনজন অধিনায়ক দেওয়ার মতো অবস্থাতেও নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট। এসব সিদ্ধান্তের যুক্তি খুঁজে পান না সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহও। দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘জানি না আসলে কেনো বিশ্বকাপের দেড় বছর বাকি থাকতে এক বছরের জন্য অধিনায়কত্ব দেওয়া হলো। মিরাজের জন্য আমার শুভকামনা, কিন্তু এতে ওকেই ধাঁধাই ফেলা হলো হয়তো! এখন ওর সামনে লক্ষ্য কি? এ সময়ে তো বিশ্বকাপ সামনে রেখেই আগানোর কথা একজন অধিনায়কের কিন্তু মিরাজ তো জানেই না বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিবে কিনা।’ এর আগে ২০১৭ ও ২০২১ সালে দুই দফায় তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক ছিল বাংলাদেশের। কোনোবারই এটা দীর্ঘস্থায়ী করা যায়নি। রাজিনের মতে বাংলাদেশ এখনও সব ফরম্যাটে ভিন্ন অধিনায়ক রাখার মতো অবস্থায় পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক করার কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাই না। আমরা তো ঐ অবস্থায় এখনও পৌছাইনি। এমনিতেই আমাদের পাইপলাইনের অবস্থাও ভালো নয়, জাতীয় দলের রাডারে থাকা খেলোয়াড়দের সংখ্যাও কম। আর জাতীয় দলে এখন এমন খেলোয়াড় নেই যে ৩ জনকে আলাদা ৩ ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সর্বোচ্চ ২জন রাখা যেতে পারে সাদা বলে একজন আর লাল বলে একজন।’ সবমিলিয়ে অধিনায়কত্ব বিষয়টিকে রীতিমতো হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছে বিসিবি। এর আগে টানা কয়েক মাস সহ অধিনায়ক থাকা লিটন কুমার দাসকে টপকে আচমকাই শান্তকে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক করে ফেলে তারা। অথচ এর মধ্যে এক ফরম্যাটের একাদশেই শান্তর জায়গার নিশ্চয়তা নেই। সেই ফরম্যাট টি- টোয়েন্টিটেই গেলো মাসেই লিটনের কাছে অধিনায়কত্ব দিয়েছে বোর্ড।