রাজনীতি
মানুষকে নিরাপদ-শঙ্কামুক্ত করতে সরকারের উদ্যোগ নেই: রিজভী
স্টাফ রিপোর্টার
(১৬ ঘন্টা আগে) ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৪:১৪ অপরাহ্ন

মানুষকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বছর ৮ই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণ দ্বারা সমর্থিত। সরকারের প্রতি জনগণ বিশাল কিছু প্রত্যাশা করে না৷ কিন্তু জনগণ চায় আইনের শাসন, আদালত কর্তৃক ন্যায় বিচার, দুষ্টের দমন কিংবা শিষ্টের পালন। আওয়ামী আমলে গণতন্ত্রকামী মানুষকে আইন-আদালতের হৃদয়শূন্য নির্মম প্রবঞ্চনা ও কপটতার শিকার হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ আশা করেছিল এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শান্তিতে থাকবে ও ভোগান্তী কমবে। কিন্তু এবারের ঈদেও গত তিনদিন ধরে ঢাকা রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী গাড়িগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে ৫ থেকে ১০ ঘন্টা বিলম্ব হয়েছে। মহাসড়কেই দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহন আটকে আছে। আজ সকাল থেকে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানযটের মধ্যে পড়েছে যানবাহনের যাত্রীরা, এ এক চরম দুর্ভোগ। এর ওপর চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে। এখনও চারদিকে ফ্যাসিস্ট আমলের দখলদার আর চাঁদাবাজদের বৈচিত্রময় বিন্যাস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অনেক বেশি অবনতিশীল হয়েছে। সারাদেশে ছিনতাই আর ডাকাতির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাকাতি-ছিনতাই দস্যুতা ও অপহরণের মত ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে অপরাধ দমনে পুলিশি তৎপরতা অত্যন্ত শিথিল। পুলিশ এখনও প্রো-এক্টিভ হয়নি। মানুষ বলে শেখ হাসিনার আমলে গায়েবী মামলা হতো আর এখন গায়েবী আসামি হচ্ছে!
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরী যেন ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মিরপুর যেন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে। দিনে দুপুরে মগবাজারে চাপাতি দিয়ে গুরুতর আঘাত করে একজন কিশোরের সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। আশপাশের মহাসড়কগুলোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাত্রা কোনোভাবেই কমছে না। সংবাদ পত্রের তথ্যনুযায়ী ফ্যসিবাদের শেষ বছরের তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ৬.১৬ শতাংশ। এই ঈদেও মানুষের মন থেকে চুরি-ডাকাতির আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। মানুষকে নিরাপদ ও শঙ্কামুক্ত করতে সরকারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দ্রুত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান গড়ে তুলতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অতীব জরুরী।
তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের পর পাশ্বর্বর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের এক নতুন বিবর্তিত রূপ দেখা যাচ্ছে। গত মে মাসে বিএসএফ সীমান্তে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ৬জন বাংলাদেশিকে। অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে প্রতিদিনই শত শত লোক বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। ভারত দ্বি-পক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনে ভারতীয় নাগরিকদের গায়ের জোরে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সৎপ্রতিবেশীসূলভ সম্পর্কের নীতির পরিপন্থি কাজ। ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কখনই সু-সম্পর্ক রাখতে চায় না। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে “পুশ-ইন সহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে”।
রিজভী বলেন, কৌশলে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবেই পুশ-ইন, ল্যান্ডপোর্টে বাংলাদেশের পণ্যের পরিবহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতে থেকে হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ইত্যাদি প্রমাণিত হয় তারা বাংলাদেশকে সমমর্যাদার ভিত্তিতে নয়, আগ্রাসি দৃষ্টিতেই দেখে। বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ত্বের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধা নেই। এক সুদূরপ্রসারী মাস্টার প্লানের অংশ হিসেবেই ভারতের নাগরিকদের বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এ বিষয়ে কেন জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। বর্তমান সরকারের নেই কোনো উদ্যোম, নিষ্ঠা ও মৌলিকতা। এ নিয়ে জনমনে বড় আকারের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি সরকারের জনগণের প্রতি যে দায় থাকে, তা কখনই এড়াতে পারে না। শ্রমজীবী মানুষের জন্য দুর্ভাগ্যজনক যে ঈদের একদিন আগেও অনেক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। ঈদের আনন্দ সমভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়, অথচ স্বল্প আয়ের শ্রমজীবীরা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঈদুল আযহা পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব ছিল এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে ফেলা। এটাই একটি জনসমর্থিত সরকারের প্রধান কাজ। অথচ এ বিষয়ে সরকার নির্বিকার ও উদাসীন। আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দেয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।