ঢাকা, ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে বড় সঙ্কট

মানবজমিন ডেস্ক

(১ দিন আগে) ৪ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:৪৭ অপরাহ্ন

mzamin

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং ঝড়োগতির বিজয় অর্জন করেছেন। কিন্তু এই জয়ে তার সমর্থকরা উল্লসিত হলেও মধুচন্দ্রিমা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সাধারণত নতুন নেতারা দুই মাসের নির্ধারিত সময় পান। এ সময়ে তারা নিজের দল গঠন করতে পারেন ও দেশের জন্য একটি সুদৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু লি সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। বরং তিনি সঙ্গে সঙ্গেই দায়িত্ব নিচ্ছেন, কারণ পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করতে হচ্ছে তাকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ইয়ুন ডিসেম্বর মাসে দেশকে সামরিক শাসনের অধীনে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন এবং পরে তাকে অভিশংসিত করা হয়। নির্বাচনে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন লি। এর মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ একপ্রকার জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়োলের সামরিক শাসন। এই সামরিক শাসন তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লি জে-মিউং তার প্রচারে বলেছেন, তিনি দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবেন। বিভক্ত ও অস্থির ছয় মাস পর দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। কিন্তু সেটা আপাতত অপেক্ষায় রাখার বিষয়। প্রথমেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সৃষ্ট সংকট সামলাতে হবে। আগামী মাসগুলোতে ট্রাম্পের হাতে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক অস্থিতিশীল করার ক্ষমতা। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প কোরিয়ান পণ্যের ওপর শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেন। এটা আগে থেকেই স্টিল ও গাড়ি শিল্পের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের ধারাবাহিকতার অংশ। তবে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘটনায় তখন কোরিয়ানরা বিস্মিত হয়ে পড়েন। তারা ধারণা করেছিলেন, কোরিয়ান যুদ্ধের সময় থেকে দীর্ঘদিনের সামরিক মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় থাকায় তারা এই শাস্তি থেকে রেহাই পাবে।

লি’র ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন অভিজ্ঞ উপদেষ্টা মুন চুং-ইন বলেন, এই শুল্ক কার্যকর হলে তা এক অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে। ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি ধীরগতির দিকে যাচ্ছিল। সামরিক আইন সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা সেটিকে আরও সংকুচিত করে। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিতও হয়েছে। ভোটারদের প্রধান দাবি ছিল এই সংকট নিরসন, এমনকি গণতন্ত্র রক্ষার চেয়েও সেই দাবি ছিল বেশি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট না থাকায় ট্রাম্পের সঙ্গে তা নিয়ে কোনো আলোচনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন আর দেরি করা যাবে না। তবে কেবল অর্থনীতি নয়, এসব আলোচনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও বড় কিছু। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়- যদি পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করে, তবে তারা প্রচলিত ও পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে। এর অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে ২৮,৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। তবুও ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো আলাদা করে দেখছেন না। বরং তার দৃষ্টিতে সিউল এই দুই ক্ষেত্রেই তাদের প্রাপ্য অবদান রাখছে না। এপ্রিল মাসে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে প্রাথমিক শুল্ক আলোচনায় তিনি “আমাদের সরবরাহকৃত বিশাল সামরিক সুরক্ষার জন্য অর্থপ্রদানের” বিষয়টি তুলেছেন এবং এটিকে বলেছেন “সুন্দর ও কার্যকর এক-পয়েন্ট শপিং”।

এই ধরণটি সিউলকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সিউলে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক ইভানস রেভিয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জীবদ্দশায় প্রথমবারের মতো আমরা এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখছি যিনি কোরিয়ার প্রতি কোনো নৈতিক বা কৌশলগত দায়িত্ববোধ অনুভব করেন না। ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদেও তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতির মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সতর্কতা দেন- যদি সিউল বেশি অর্থ না দেয়, তবে তিনি সেনা প্রত্যাহার করবেন। এবারও তিনি একই দাবি তুলবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সিউল হয়তো বেশি অর্থ দিতে চাইবে না, কিন্তু তাদের পক্ষে তা সম্ভব। বড় সমস্যা হলো, ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসেব এখন আর আগের মতো নেই। এটি কেবল অর্থের ব্যাপার নয়। এখন ওয়াশিংটনের এশিয়া-ভিত্তিক শীর্ষ অগ্রাধিকার হলো কেবল উত্তর কোরিয়াকে ঠেকানো নয়, চীনের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও তাইওয়ানের বিরুদ্ধে তৎপরতা সীমাবদ্ধ করা।
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status