ইসরাইলের বিরুদ্ধে বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ, পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি গাজায়

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরাইলের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে বৃটিশ সরকার। ভয়াবহ বোমা হামলায় গাজায় অকাতরে শিশু সহ অগণিত মানুষ হত্যা ও মানুষকে ভয়াবহভাবে অনাহারে রাখার প্রতিবাদে তারা এমন পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ফ্রান্স, বৃটেন ও কানাডা যৌথ বিবৃতিতে এই যুদ্ধ থামাতে বলেছে ইসরাইল। অন্যথায় তারা কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পশ্চিমতীর দখল করে সেখানে অবৈধভাবে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে বৃটেন। একই সঙ্গে বৃটেনে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত জিপি হোতোভলিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়।

অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেছেন, অধিক পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যাবে দুই দিনের মধ্যে। এরপরও মঙ্গলবার গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও  কোনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যদিও ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর মঙ্গলবার ইসরাইল ৯৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই ত্রাণ গাজায় পৌঁছালেও তা বিতরণ করা যায়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি ও আল জাজিরা। 

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিক বলেন, আমাদের দল কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের গুদামে সরবরাহগুলো নেয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, সরবরাহ আসা একটি ইতিবাচক দিক। তবে এটি আসলে প্রয়োজনের তুলনায় একফোঁটা মাত্র। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গাজার মানবিক সংকট মোকাবেলায় প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করা প্রয়োজন। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা না পৌঁছালে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে। গাজার মা ও শিশুদের অনেকেই চরম অপুষ্টির শিকার এবং মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। যদিও পরবর্তীতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, এই ১৪,০০০ শিশুর সংখ্যা আসলে আগামী এক বছরের মধ্যে মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের অনুমান। তবে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, এই শিশুদের জীবন রক্ষায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১১ সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ৫৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গাজায় চলমান ইসরাইলি সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে ইসরাইলের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে বৃটেন। কয়েকজন চিহ্নিত বসতি স্থাপনকারী ও সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেন, গাজায় শিশুদের দুর্ভোগ একেবারেই সহ্য করার মতো নয়। এটি নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস জানান, গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে ইইউ তাদের বাণিজ্য চুক্তি পুনঃমূল্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, ত্রাণ সহায়তা অনুমতি দেওয়া স্বাগত জানানো হলেও, এটি যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে পূর্ণমাত্রায় সহায়তা প্রবেশ করতে হবে। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটিতে বলেন, ইসরাইল যে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও এর পরিমাণ যথেষ্ট নয়, তবুও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫৩,৪৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩,৩৪০ জন নিহত হয়েছেন যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে হামলা শুরুর পর।