ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ভেন্টিলেটরে আছেন রুশদি, কথা বলতে পারছেন না, হারাতে পারেন চোখও

মানবজমিন ডেস্ক
১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার
mzamin

বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সাস’-এর লেখক সালমান  রুশদিকে শুক্রবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এর ফলে তার অবস্থা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে। হামলাকারী তার গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাত করেছে। মারাত্মক জখম অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ভেন্টিলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি কথা বলতে পারছেন না। বলা হয়েছে, একটি চোখ হারাতে পারেন তিনি। নিউ জার্সিতে এক অনুষ্ঠানে ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতার নামে এক যুবক তার ওপর হামলা করে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে একজন শিয়া মতাবলম্বী বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন
এ খবর দিয়ে অনলাইন সিএনএন বলেছে, অনেক আগে থেকেই সালমান রুশদির বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান। হুমকির প্রেক্ষিতে তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু শুক্রবারের অনুষ্ঠানে সেই নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।   শুক্রবার নিউ জার্জির চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনে একটি মঞ্চে ৭৫ বছর বয়সী রুশদির সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন হেনরি রিস। আকস্মিক  দৌড়ে মঞ্চে উঠে যায় এক যুবক। সে রুশদির গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাত করেন।

 ছুরিকাঘাত করে উপস্থাপককে। উন্মত্তের মতো যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই সে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করে। পুলিশ এই হামলার মোটিভ সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেনি। তারা অনুষ্ঠানস্থলে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও একটি ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখছে। হামলার পরপরই রুশদিকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভ্যানিয়ার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্যদিকে মঞ্চে মিস্টার রুশদির যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, সেই হেনরি রিসেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি মাথায় অল্প আঘাত পেয়েছেন। হেনরি নিজেও হত্যার হুমকি পাওয়া নির্বাসিত লেখকদের জন্য কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।  পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তা ও দর্শক শ্রোতারা দ্রুত দৌড়ে গিয়ে হামলাকারীকে ধরে ফেলেন ও পরে তাকে আটক করা হয়। ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী লিন্ডা আব্রামস নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বাধা দেয়ার পরেও হামলাকারী রুশদিকেও আঘাত করার চেষ্টা করছিল। সে আঘাত করেই যাচ্ছিল। তাকে সরাতে পাঁচ জন লেগেছে। সে ছিল ক্ষিপ্ত। খুবই শক্তিশালী ও দ্রুতগামী। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এসময় কিছু দর্শক দ্রুত মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে থামাচ্ছেন। দর্শকদের মধ্যে থাকা একজন চিকিৎসক আহত লেখককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে সালমান রুশদির এজেন্ট অ্যানড্রু উইলি বলেছেন, সালমান রুশদি একটি চোখ হারাতে পারেন। 

তার বাহুর নার্ভ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ছুরিকাঘাত রুশদির লিভারে আঘাত করেছে এবং তাতে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর ভালো না।  হামলার পর রুশদির পূর্ব থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অনুষ্ঠান হচ্ছিল নিউ ইয়র্কের বাফেলো থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি গ্রামীণ লেক অবকাশযাপন কেন্দ্রে। সেখানে প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর মধ্যে আছে ব্যাগ চেক করা, মেটাল ডিক্টেটর ব্যবহার করা। বলা হয়, এসব ব্যবহার করলে বক্তব্য এবং শ্রোতাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব আশঙ্কা করেছে যে, এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলে তাতে ইনস্টিটিউটের সংস্কৃতি পাল্টে যাবে। পূর্ব থেকে সুপারিশ করা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রুশদির ওপর হামলা বন্ধে যথেষ্ট ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের সময় যখন রুশদিকে অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছিল, তখনই হামলা হয় বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি আরও বলেন, কালো শার্ট পরা একজন ব্যক্তি লেখক রুশদিকে ঘুষি মারতে থাকে। 

মঞ্চ থেকে ওই প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন প্রায় ৭৫ ফুট দূরে। হামলার সময় হামলাকারী কোনো স্লোগান দিয়েছে কিনা বা কোনো অস্ত্র প্রদর্শন করেছে কিনা, সে বিষয়ে জানেন না তিনি। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জয়সে লুসিয়ে বসা ছিলেন দ্বিতীয় সারিতে। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দ্রুত দৌড়ে যায় মঞ্চে। দ্রুত সে রুশদিকে ধরে ফেলে। সে বামপাশে অবস্থান নেয়। পুরো মঞ্চের ওপর লাফালাফি করে। দুই সেকেন্ডের মধ্যে সে পুরো মঞ্চে তাণ্ডব চালাতে থাকে। এ সময় লোকজনকে আর্তচিৎকার করতে শোনেন তিনি। দেখতে পান দর্শক সারি থেকে দ্রুত লোকজন দৌড়ে যাচ্ছে মঞ্চে। ততক্ষণে রুশদির গলায় কমপক্ষে একটি এবং পেটে কমপক্ষে একটি আঘাত করেছে হাদি মাতার। স্টাফ এবং দর্শকরা হামলাকারীর পিছু নেয়। তারা তাকে মাটিতে চেপে ধরেন। এরপর পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে তাকে।   সালমান রুশদির লেখা এ পর্যন্ত অনেক সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছে। এর মধ্যে ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’-এর জন্য ১৯৮১ সলে তিনি বুকার পুরস্কার পান। কিন্তু তার চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সাস’ নিয়েই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি দেখা দেয়। এই উপন্যাসের কারণে মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় এ উপন্যাস। 

তারপর জনবিস্ফোরণ ঘটে বিভিন্ন দেশে দেশে। ইরানের প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এ উপন্যাসকে ইসলাম ও মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবমাননা বলে বর্ণনা করেন। তিনি ধর্মীয় ডিক্রি বা ফতোয়া জারি করেন। ১৯৮৯ সালে রুশদিকে হত্যার আহ্বান জানান।  সালমান রুশদির জন্ম ১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বইয়ে। তার পিতা ছিলেন ভারতীয় একজন সফল মুসলিম ব্যবসায়ী। রুশদি প্রথমে পড়াশোনা করেন রাগবি স্কুলে। পরে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজ জীবন শেষে তিনি লন্ডনে বিজ্ঞাপনী কপিরাইটারের কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭৫ সালে প্রথম উপন্যাস ‘গ্রিমাস’ প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট ১৪টি উপন্যাস লিখেছেন। মিডনাইটস চিলড্রেনের জন্য ৫ বার বুকার মনোনয়ন পান। ইরান থেকে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ৯ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৭ সালে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। 

 ওদিকে সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করায় তার বন্ধু ও লেখকরা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন হরর লেখক স্টিফেন কিং, হ্যারি পটার সিরিজের লেখিকা জেকে রাউলিং প্রমুখ। রুশদিকে যখন হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বুক চেইন তার বিতর্কিত উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সাস’ সরিয়ে  ফেলতে চেয়েছিল। তখন স্টিফেন কিং তাদেরকে বলেছিলেন, যদি তোমরা দ্য স্যাটানিক ভার্সাস বিক্রি না করো, তাহলে স্টিফেন কিংয়ের লেখা বিক্রি করতে পারবে না।  রুশদি আক্রান্ত হওয়ার খবরে জেকে রাউলিং টুইটারে বলেছেন, এই মুহূর্তে খুব খারাপ লাগছে। তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্টিফেন কিং লিখেছেন, আমি আশা করি সালমান রুশদি সুস্থ হয়ে উঠবেন। নিল গাইম্যান লিখেছেন, আমার বন্ধু সালমান রুশদির ওপর হামলা হয়েছে এতে আমি কষ্ট বোধ করছি। তিনি একজন চমৎকার মানুষ।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status