খেলা
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলছে না বিসিবি, কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতা পেয়েছে দুদক
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৮ মে ২০২৫, রবিবার
দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুপুর ১টায় এই অভিযান শুরু হয়। তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবি চলছে না, এ প্রসঙ্গে অস্বাভাবিকতার প্রমাণ পেয়েছে তারা। বিসিবি’র গঠনতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা আর নানা অভিযোগ আছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। ২০২৪ সালে গঠনতন্ত্রে নতুন পরিবর্তন এনে আরও বিতর্কিত করে তোলেন নাজমুল হাসান পাপন-ইসমাইল হায়দার মল্লিকরা। গঠনতন্ত্র নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে দুদক কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, ‘বিসিবি যে গঠিত হয়েছে এটা গঠনতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। গঠনতন্ত্রটা কতটুকু বৈধ, কতটুকু সিদ্ধ সেই ব্যাপারটাও আমরা আজকে পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল। আমরা সেই ব্যাপারটা দেখেছি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খুবই স্ট্রাকচারাল এবং সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল বিসিবি। এখানে আমরা গ্যাপ পেয়েছি।’ তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে বিসিবি থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। পাশাপাশি এসব কাজে জড়িত থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। তবে এখনই সকল কাগজপত্র ও বক্তব্য গ্রহণের কাজ শেষ হয়নি বলেও জানান দুদকের কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে আরও কাগজ ও বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও জানানো হয়েছে। এই নিয়ে রাজু আহমেদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের আলোকে আমরা এখান থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছি, সকাল থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করলাম।
বিভিন্ন ব্যক্তিসংশ্লিষ্ট যারা আছে সবার সঙ্গে কথা বললাম, এই অভিযান- আমরা এখনও শেষ করতে পারি নি। কাজ বাকি আছে, আমাদের আরও কিছু রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করব, কিছু বক্তব্য গ্রহণ করব।’ বিসিবি’র সভাপতি ক্ষমতা নিজেদের কব্জায় রাখতে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লীগের নিয়মে পরিবর্তন এনেছিল। তাতে বাছাই লিগে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেত মোটে দুই থেকে তিনটি দল। সেগুলো আবার হতো পাপন-মল্লিকদের অধীনে থাকা নতুন কোনো ক্লাব। ক্লাব ক্রিকেটের নিচের সারির এই করুণ দশায় নতুন খেলোয়াড় উঠে আসার পাইপ লাইনটাই বন্ধ হতে বসেছিল। ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত হওয়া তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ নিয়ে দুর্নীতি খুঁজতে বিসিবিতে এসেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট দল। এ ছাড়া গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়ম নিয়ে থাকা অভিযোগের ব্যাপারেও বিসিবিতে এসেছিলেন তারা। এর আগে গত ১৬ই এপ্রিল প্রথম দফায় বিসিবিতে অভিযান চালায় দুদক। প্রথমবার বিপিএলের টিকিট বিক্রির অর্থের হেরফের, মুজিববর্ষ উদ্যাপনে বাড়তি ব্যয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট বাছাইয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালায় তারা। আর গতকাল বিসিবিতে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় দুদকের অন্য একটি দল। তারা মূলত, তৃতীয় বিভাগ বাছাই লীগে দলগুলো বাছাই প্রক্রিয়া ও বিসিবি’র গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে তদন্ত করবে। ২০১৩-১৪ সালে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লীগে এন্ট্রি ফি ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ করার পাশাপাশি স্থায়ী ঠিকানা ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকার নিয়ম করে পাপনের নেতৃত্বাধীন বিসিবি। এরপর ক্রমশ দল কমতে থাকে। তবে এই সময়ে তৃতীয় বিভাগ বাছাই পেরিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পর্যায়ে খেলা ১৮টি ক্লাবের কোনোটিরই সকল কাগজপত্র সঠিক ছিল না।
ওই ১৮ ক্লাবের মধ্যে এখন ঢাকার বিভিন্ন পর্যায়ে আছে ১৫টি ক্লাব। বাকি তিন ক্লাবের এখন অস্তিত্ব নেই। এন্ট্রি ফি বাড়ানোর পর বাছাইয়ে অংশ নিতো দুই-তিনটি দল। এই লীগ আয়োজনে সিসিডিএমের যেসব কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন তাদেরকেও খুঁজে বের করা হচ্ছে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা। প্রয়োজনে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ঢুকে পড়া ক্লাবগুলো নিজেদের পুরোনো অতীত ঢাকতে ইতোমধ্যে নাম পরিবর্তন ও কমিটি পরিবর্তনের জন্য চিঠি দিয়েছে বিসিবিকে। এটা নিয়েও সন্দেহের ডালপালা মেলা শুরু করেছে। এ ছাড়া ক্লাবগুলোর মালিকানা পরিবর্তনে অর্থের উৎসও খতিয়ে দেখার কাজটিও করছে। মূলত হুট করে এতোগুলো ক্লাবের নাম ও কমিটি পরিবর্তন হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। দুদক এ নিয়েও তদন্ত করবে। গতকাল তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, ‘থার্ড ডিভিশন কোয়ালিফাইং এই প্রক্রিয়াটা একটা সময় ছিল খুব সহজ ছিল। ইজি অ্যাকসেস। সে সময় প্লাস ৬০-৭০ টা টিম অংশগ্রহণ করতে পারত। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ২০২২ এর পর থেকে কিছু বার ক্রিয়েট করা হয়। একটা রেস্ট্রিকশন চলে আসে, সেখানে দুই তিনটার বেশি টিম পার্টিসিপেট করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটা লেস কম্পিটিটিভ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ন্যাশন্যাল টিমের জন্য খেলোয়াড় তৈরির পাইপলাইনটা খুবই সীমিত হয়েছিল। এই ব্যাপারটায় আমরা বরাবরই ফোকাস করেছি।’