প্রথম পাতা
চলতি মাসেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবারউচ্চ হারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে। চলতি মাসেই বাড়ানো হতে পারে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের উপর গণশুনানিকালে বিইআরসি’র টেকনিক্যাল কমিটি পাইকারি বিদ্যুতে ২ দশমিক ৯৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। অর্থাৎ প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশকেই গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে বিদ্যুতের নয়া দাম। এমনিই ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর একজন সদস্য। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হলেও খুচরা কোম্পানিগুলোও দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে বিইআরসি’র সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী শুনানির পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আশা করি, চলতি মাসেই বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা করতে পারবো। দাম কতো টাকা বাড়বে জানতে চাইলে এই সদস্য জানান, গণশুনানিতে বিইআরসি’র টেকনিক্যাল কমিটির একটি সুপারিশ মানুষ জেনেছে।
সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে কমিশন আগাচ্ছে।
পাইকারিভাবে বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৩৯ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এতদিন সরকার ৩ টাকা ৩৯ পয়সা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাব গ্রহণ করলে সরকারের আর ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাব উপদেষ্টা জানতে চান, সরকার ভর্তুকি দিতে চায় কিনা। শামসুল আলম জানতে চান, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি প্রায় ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। বিদ্যমান পাইকারি মূল্য হার ৫ টাকা ১৭ পয়সা। মূল্য হার ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে পাইকারি বিদ্যুতের রাজস্ব চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং মূল্যহার ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘাটতি সমন্বয়ে সরকারি ভর্তুকি বিবেচনা করা হয়নি। তার মানে যখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করে, তখন সরকার ভর্তুকি দিতে রাজি হয়নি? সরকার কি ভর্তুকি দিতে সম্মত না? শুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ ও ন্যায় সঙ্গতভাবে আদেশ দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাইকারি দাম ঘোষণা হলে খুচরার ওপর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। বিপিডিবি’র এই প্রস্তাব গ্যাসের বর্তমান দর বিবেচনায়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে ৯.১৪ টাকা এবং ১২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেলে ৯.২৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি ২ দশমিক ৯৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিপিডিবি’র পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে বিপিডিবি’র।
অন্যদিকে, করোনা মহামারির মন্দা অর্থনীতির মধ্যে আবারো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব কিছুইতে এর প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় আরও নাভিশ্বাস হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষ যখন তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, ঠিক তখনই জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যেমন থমকে গিয়েছিল, একইভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আয়ের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়েছে। ফলে আয় কমে এসেছে দেশের একটি বড় অংশের মানুষের। যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হয় তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।