ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

দুদকের জালে এবার ফাঁসলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা রাজ্জাক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছিল দুর্নীতির টাকশাল। পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, প্রতিমের টাকা লুটের হোতা। দুর্নীতির টাকা যেতো তার পকেটে। তিন বছরে সরকারি দল করে হয়েছেন কোটিপতি। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা রাজ্জাক ছিলেন মন্ত্রীর পোষ্য। বরাদ্দের টাকা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতির দায়ে আটক সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান ছিল আশীর্বাদপুষ্ট। কোটি কোটি টাকার ফাইল গায়েব নাটকে দুদকের জালে পড়েছেন রাজ্জাক। এবার মানবজমিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো আরও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ১ কোটি টাকার দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। অভিযোগ উঠেছে, ওই অফিসের কয়েকজন কর্মচারী এতে জড়িত।

জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে থাকার পূর্বে রাজ্জাক ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার শিশু পরিবারের দায়িত্বে। কুড়িগ্রাম জেলায় চাকরি করা কালীন সে এতিম শিশুদের বরাদ্দের খাবারের টাকা ও শিশুদের বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের টাকা লুট করেছেন। পরে সাপ্টীবাড়ী আ’লীগ নেতা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০২১ সালের মার্চে যোগদান করেন কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে। যোগদান করেই কালীগঞ্জে মাতিয়ে তোলেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। মন্ত্রীর আশীর্বাদ থাকায় সরকারি বরাদ্দের লুটের টাকা ভাগবাটোয়ারা করতো। অভিযোগে জানা গেছে, মন্ত্রীর নিজ বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা। বরাদ্দও আসতো বেশি। সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ আসা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নের প্রকল্পের কোটি টাকা লুটপাট করে। ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ওই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নের প্রকল্পের ১ কোটি টাকা ভুয়া প্রশিক্ষণ দেখিয়ে লুটপাট করে। ভুয়া বিল ভাউচারে প্রশিক্ষণের নামে ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট রাজ্জাক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নের প্রকল্পের কোটি টাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের নাম প্রশিক্ষণার্থী দিয়ে তাদের মোটাতাজাকরণ করেছে। ৬০২ জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কামার, কুমার, জেলেদের প্রশিক্ষণের কথা বলে।

 ছয় মাস তিনদিন প্রশিক্ষণের কথা ছিল। এরই সঙ্গে জড়িত ছিল ওই সমাজসেবা অফিসের কারিগরি প্রশিক্ষক সুফিয়া বেগম, সুপারভাইজার নাজমা ও অফিস সহকারী পারভীন বেগম। বিষয়টি জানাজানি হলে কুমার পাড়ার অভিজিৎ কুমার জানান, আমরা রাজ্জাকের দুর্নীতির বিচার চাই। কামার আলী হোসেন জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টাকা যদি ধনীরা খায় তাহলে তারা আমাদের চেয়ে বেশি প্রান্তিক- এর বিচার চাই। কয়েকজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ জানান, টাকা লুটের ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে রাজ্জাক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ লেলিয়ে ভয়ভীতি ও মারধর করতো। মন্ত্রীর বরাদ্দ আসে আর রাজ্জাক বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল তৈরি করে মন্ত্রীসহ ভাগবাটোয়ারা করে। অপরদিকে, লুটপাটের বিষয়টি দুদকের নজরে আসায় দুদকের সুপারিশে তাকে গত সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় করা হয় বদলি। ওদিকে, রাজ্জাকের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার সাপ্টীবাড়ী এলাকায়। বাড়িতে এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। এ ছাড়াও দুর্নীতিবাজ রাজ্জাক আদিতমারীর সাপ্টীবাড়ী স্কুলের পথে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। যার মূল্য ৭০ লাখ টাকার বেশি। সেখানে গড়ে তুলেছেন আরও ৩০ লাখের বেশি টাকার ব্যয়ে বসতবাড়ি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজ্জাক দিনমজুর পরিবারের সন্তান। ভিটে থাকলেও ছিল না ইটের বসতবাড়ি। এখন সে কোটিপতি। ওদিকে, আব্দুর রাজ্জাক কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতা থাকালীন জুলাই-আগস্ট পরিবর্তনে পালিয়ে যায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসার আগেই সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামানের সরকারি অর্থ লুটপাট ফাইল গায়েব করে রাজ্জাক। বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো আলোচনা না ওঠে সেজন্য অফিস সহকারী দিয়ে হারিয়েছে বলে কালীগঞ্জ থানায় করেন জিডি।

বিষয়টি দুদক গণশুনানিতে অভিযোগ এলে সমাজসেবা উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান তৎক্ষণিক দুদক চেয়ারম্যানকে জানান, ফাইল হারিয়ে যায়নি গায়েব করেছে- এর সঙ্গে সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জড়িত। গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোয়েন বিষয়টি শুনে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জানান, এই ঘটনাটি দুদক অনুসন্ধান করবে। ওদিকে, সমাজসেবা উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান মানবজমিনকে বলেন, দুর্নীতি করলে সাজা পেতেই হবে। দুদকের গণশুনানিতে ছিলেন- দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজি ও দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেনসহ দুদক কর্মকর্তারা।

ওদিকে, আব্দুর রাজ্জাককে তার মুঠোফেনে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নের প্রকল্পের টাকা দুর্নীতি করায় আব্দুর রাজ্জাকের বিচার দাবি করছে ভুক্তভোগীরা।

পাঠকের মতামত

আমার এলাকার মানুষ, আমি যতটুকু দেখেছি, জানি উনি মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করেন। কিছু ধোয়াশা থাকলেও বিশেষ করে জমি কিনেছেন, কিভাবে কিনলেন সঠিক জানিনা। তবে কেউকে যেন হয়রানি বা সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্য না হয়।

মো নাজমুল হক
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১০:২২ অপরাহ্ন

সকল দূর্নীতিবাজদের ধরুন - কবে যে দেশটা দূর্নীতি মুক্ত হবে!

জনতার আদালত
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪:৫০ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status