দেশ বিদেশ
গুম ফেরত ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার গুম ফেরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গুম-খুনে জড়িতদের বিচার ও আওয়ামী আমলের নির্যাতনমূলক আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ভয়েস অব এনফোর্সড ডিসএপিয়ারড পারসনস (ভয়েড)। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত সরকারের আমলে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। এবং একটি ভীতির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। সর্বদাই গুম হওয়ার এক আতঙ্কে বসবাস করতে হতো। এই সাম্রাজ্যবাদী পরিবেশে আমাদের নিজেদেরকেই সচেতন থাকতে হবে। যারা ২৪-এর আন্দোলন করেছে, তারা এখন হতাশ হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের ফেলে দেয়া যায়, কিন্তু ফ্যাসিবাদ এত সহজে ফেলে দেয়া যায় না। সুতরাং দাবি আদায়ে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে। এ সময় ভয়েস অব এনফোর্সড ডিসএপিয়ারড পারসনস (ভয়েড)’র চিফ কো-অর্ডিনেটর এম মারুফ জামান সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী সন্তানরা তাদের স্বামী বা বাবার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা ভোগ করতে পারেন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ব্যাংকের অর্থ যেন উত্তোলন করতে পারেন এজন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সরকারের তরফ থেকে লিগ্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করা উচিত। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও ফিরে না আসা গুমের শিকার পরিবারগুলোর জন্য এখনো আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লিগ্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ ছাড়া যারা গুম থেকে ফেরত এসেছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোতে হাজিরা দিতে দিতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে জেলে আটক রয়েছেন, এমনকি কাউকে কাউকে মিথ্যা সাক্ষীর ভিত্তিতে নির্যাতন করে সাক্ষ্য নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, গুমের বিচার এখন পর্যন্ত কেন শুরু হচ্ছে না? কিছু অপরাধী যারা বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বা এখনো আছেন, কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? তাদের জন্য আজ আমাদের বাহিনীগুলোর বদনাম হচ্ছে। গুমের বিচার না হলে আমাদের বাহিনীগুলো কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিসমূহ হলো-
১. সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থি সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ বাতিল করতে হবে। ২. বিনা বিচারে হত্যা করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩. মিথ্যা মামলায় বন্দি সব ব্যক্তির অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অ্যান্টি টেরোরিজম কালো আইনে সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবারকে যথাযথ তথ্য দিতে হবে। ৫. রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কালো আইনে বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। ৬. বেআইনি গুমের শিকার সব ব্যক্তির পুনর্বাসনের জন্য আলাদা সরকারি বিভাগ গঠন করতে হবে অথবা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। ৭. গুমের শিকার ব্যক্তিদের আজীবন পেনশন ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে। ৮. গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মিথ্যা মামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। ৯. র্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসি-সহ বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের দায় স্বীকার করে সরকারকে আনুষ্ঠানিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ১০. এসব অপরাধগুলোর সব সরকারি নথি প্রকাশ করতে হবে, যাতে সত্য জনগণের সামনে আসে। ১১. রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ভিকটিমদের পরিবার ও পুরো জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।