ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

দিল্লির এক নারী কবুতরবাজ

লিমা সুলতানা
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

দিল্লির পুরুষ শাসিত কবুতরবাজির জগতে পাখিদের প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন এক নারী। এতে তিনি অনেকের মন জিতে নিয়েছেন। তিনি পুরাতন দিল্লির একমাত্র নারী কবুতরপালক বা কবুতরবাজ। তার নাম শাহীন পারভীন। এর জন্য তাকে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। শাহীন দিল্লির খাজা মির দরদ বস্তিপাড়ায় বসবাস করেন। তার ১০০টিরও বেশি কবুতর আছে। মহল্লাবাসীর কাছে তিনি তাদের প্রিয় কবুতরপালক হিসেবে পরিচিত। তবে তার এ পর্যায়ে উঠে আসা সহজ ছিল না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, পুরাতন দিল্লিতে মানুষ শুধু বিনোদনের জন্যই কবুতর পোষেন না। কবুতর পোষার বিষয়টি মুঘল ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির সড়কগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। অটোরিকশাগুলো লাগাতার হর্ন বাজাতে থাকে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (আইএনপিএসিএইচ)-এর রত্নেন্দু রায় এই ঐতিহ্যকে লালন করেন। তিনি বলেন, কবুতরবাজরা তাদের কবুতর নিয়ে বেশ গর্ববোধ করেন। ‘কবুতরবাজি’ নামে কবুতর পালনের ঐতিহ্য প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছে। এর শেকড় মহাভারতে রয়েছে। ওই সময় রাজপরিবারের বিনোদনের জন্য রাজপ্রাসাদে পাখি রাখা হতো।  

লেখক ও ইতিহাসবিদ রানা সাফভি বলেন, দরবারের নারীরা বারান্দায় বসে কবুতর উড়া দেখতেন। তিনি আরও বলেন, মুসলিম শাসকদের অধীনে ওই বিনোদন একটি জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়। এটি হলো- আত্ম, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মীয়তার অনুভূতি। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় এই খেলা অন্য মাত্রায় পৌঁছায়। কবুতরবাজিকে সম্রাট জাহাঙ্গীর ইশকবাজির (ভালোবাসার শিল্প) সঙ্গে তুলনা করেন। কবুতর পালনের প্রথাকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দিল্লিতে কবুতর প্রশিক্ষক আনেন। উল্লেখ্য, দিল্লি শহরের হাজার হাজার কবুতর পালক ওই ঐতিহ্য পালন করে আসছেন। কবুতরবাজি বা কবুতর পালন ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষদের কাজ। শতাব্দী ধরে পিতার পর পুত্র এ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন শাহীন পারভীন। দিল্লিতে একমাত্র নারী কবুতর পালনকারী হিসেবে তিনি  গৌরব অর্জন করেছেন। স্ত্রী থেকে মা তার থেকে দাদি। দিনে এমন একাধিক ভূমিকা পালন করেন তিনি। যখনই একা থাকেন তিনি মই বেয়ে বাড়ির ছাদে উঠে যান। তার ১০০টির বেশি কবুতর  দেখাশোনা করেই তিনি দিন শুরু করেন। সকালে উঠে কবুতরগুলো সুস্থ আছে কিনা তা নিশ্চিত করেন। এরপর সেগুলোকে খাবার খাওয়ান। হাততালি, শিস বাজিয়ে তিনি তার কবুতরগুলোর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেন। প্রতিযোগিতার জন্য তাদের দক্ষতাও নিশ্চিত করেন। সন্ধ্যার সময় কবুতরের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি করে অনেকে কবুতরগুলোকে ডাকেন। এর মধ্যে পারভীনের কণ্ঠ আলাদাভাবে শোনা যায়। যখন তিনি তার কবুতরগুলোকে ডাকেন তখন আশপাশের ছাদ আর ঘরের জানালা থেকে মানুষ উঁকি দেয় প্রিয় কবুতর পালককে এক নজর দেখার জন্য। পারভীন বলেন, কবুতর পালন একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আবেগের বিষয়। আমি যদি তাদের সঙ্গে সময় না কাটাই তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারা আমার বাচ্চার মতো। তবে পুরুষ শাসিত সমাজে কবুতরবাজ হওয়া পারভীনের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসার জন্য তিনি তার পিতাকে কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পর আমার পিতা আমাকে ছাদে নিয়ে যেতেন এবং তার কবুতরগুলো দেখাতেন। সেখান থেকেই মূলত আমার কবুতরের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। তার ভাই পারভীনের শখের বিরোধিতা করেন। এর জন্য তাকে তার ভাইয়ের অসম্মতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। পরবর্তীতে তিনি অন্যদের সমালোচনার সম্মুখীন হন। তবে পাখিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি তার জিদ ধরে রাখেন। তিনি বলেন, যখন সমাজ আপনার দক্ষতার জন্য আপনার প্রশংসা করে তখন আপনি গর্বিত বোধ করবেন। আপনার বিরুদ্ধে কারা কথা বললো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নিন্দুকদেরকে নিন্দা করতে দিন। তিনি বলেন, যা থেকে আমি শান্তি পাই তা আমি করে যাবো। পারভীন তার প্রতিভার জন্য তার কমিউনিটি থেকে ব্যাপক সম্মান পেয়েছেন। মুখে হাসি নিয়ে তিনি বলেন, অনেক মানুষ আমার কাছে আবদার করেন আমি যাতে তাদের কবুতরগুলোকে দোয়া দেই। তবে আমি আমার নিজের কবুতরের জন্যই সময় পাই না। মহসিন উস্তাদের মতো অভিজ্ঞ কবুতর পালক মাঝে মাঝে পারভীনকে কবুতরের খাবার ও ওষুধ দিয়ে সমর্থন করে থাকেন। কারণ কিছু সময় পারভীন তার কবুতর পালনের খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খান।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status