দেশ বিদেশ
২ মাস ধরে বেতন নেই পরমাণু শক্তি কমিশনে
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) ৬শ’ বিজ্ঞানীসহ ২৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী দুই মাস ধরে বেতন-ভাতা প্রদান বন্ধ রয়েছে। সঠিক সময়ে বেতন-ভাতা প্রাপ্তি, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধসহ নানান দাবি জানিয়েছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার আগারগাঁওস্থ কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরমাণু বিজ্ঞানী সংঘের বর্তমান সভাপতি ড. এএমএস সাইফুল্লাহ বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন পরমাণু বিজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে গবেষণা করে আসছে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিশনের বিজ্ঞানীদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পাবনা জেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। পূর্ণ কমিশন না থাকায় এবং মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণের শিকার হতে হচ্ছে। এতে বলা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হলেও এখনো মন্ত্রণালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর আমলারা অন্যায়ভাবে পূর্ণ স্কলারশিপ থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা/প্রশিক্ষণের জিও প্রদান না করে এবং অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে কমিশনের নবীন বিজ্ঞানীবৃন্দকে বঞ্চিত করছে। তারা বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার ঔঝঈ অঃড়সংঃৎড়ুবীঢ়ড়ৎঃ সঙ্গে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চুক্তি হয় ২০১৫ সালে। চুক্তি অনুযায়ী ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। আইন অনুযায়ী রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামক কোম্পানি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালন সংস্থা হিসেবে এবং ধারা-৪ (৩) অনুযায়ী কমিশন মালিক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কমিশনকে বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি পিডিবি ও এনপিসিবিএল’র মধ্যে সম্পাদনের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে বলা হয়, বিগত সরকার ওইঅঝ++ ঝুংঃবস- চবৎংড়হধষ খবফমবৎ (চখ) অপপড়ঁহঃ -এর মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিধায় ওইঅঝ++ সিস্টেমে উক্ত বিশেষায়িত কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. এএমএস সাইফুল্লাহ বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকার পাশাপাশি প্রত্যেকের পরিবারের জীবনবৃত্তান্ত, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আয়-ব্যয়, আমদানি-রপ্তানি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি সব কিছু এই সফটওয়ারে দিতে হয়।
এই সফটওয়ারটি নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে ভারতের চেন্নাই থেকে। বিজ্ঞানীদের অভিযোগ, এই সফটওয়ারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার রীতিনীতি মেনে পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিশেষায়িত গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে কোনো গোপনীয়তাই থাকবে না। কমিশনের কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করায় গত দুই মাস তাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাপশক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, বাপশক অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এটিএম গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিবিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. গোলাম রসুল প্রমুখ।