ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

যেভাবে দুদকের জালে ফাঁসলেন পারভীন বেগম

মিলন পাটোয়ারী, লালমনিরহাট
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

পারভীন বেগম। সমাজসেবার অফিস কর্মচারী। বড় কর্মকর্তাদের পটাতে পটু। সাবেক মন্ত্রীর দুর্নীতির ফাইল গায়েবের প্রধান হোতা। রয়েছেন লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজকল্যাণ অফিসের কর্মচারী পদে। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানের নিকটতম প্রতিবেশী। মন্ত্রী দুর্নীতির মাধ্যমে ২০১৮ সালে তাকে চাকরি দিয়েছেন। মন্ত্রীর দুর্নীতির কয়েক কোটি টাকার ফাইল গায়েবের নাটের গুরু। মন্ত্রীকে বাঁচাতে দুর্নীতির ফাইল গায়েব করে ফেঁসে গেছেন পারভীন বেগম দুদকের জালে। ফাইল গায়েবের সঙ্গে আরও ছিল সমাজসেবা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ও অফিস সহকারী পারভীন বেগম ফাইল গয়েব করে বলে দুদক চেয়ারম্যানের গণশুনানিতে ফাঁস করলেন ওই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান। সোমবার বিকালে দুদক গণশুনানি চলাকালে তিনি এ তথ্য দেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী পারভীন বেগম। বাড়ি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানের বাড়ির নিকটে। মন্ত্রীর দাপটে সমাজসেবা অফিস নিয়ন্ত্রণ করতো এই পারভীন বেগম। সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানকে দুর্নীতির সুযোগও দিতো পারভীন। ২০১৮ সালে তাকে চাকরি দেন মন্ত্রী নিজেই। মন্ত্রীর ছিল আস্থাভাজন। নুরুজ্জামানের নিজ উপজেলায় পারভীন বেগমের বাড়ি। মন্ত্রীর দুর্নীতির ফাইলগুলো সরিয়ে রাখতো। জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানে হাসিনার সরকার পালিয়ে যায়। আত্মগোপন করে মন্ত্রী-এমপিরা। দুর্নীতির দায়ে পালিয়ে যায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানও। নুরুজ্জামান আহম্মেদ দুর্নীতির কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ও অফিস সহকারী পারভীন বেগম। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট করতো এই সিন্ডিকেট। প্রায় ১০ কোটি টাকার দুর্নীতির ফাইল ধরা খাওয়ার ভয়ে গায়েব করে পারভীন বেগম ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। দুর্নীতির ফাইল হারিয়েছে বলে ৫ই সেপ্টম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডি দায়ের করে অফিস সহকারী পারভীন বেগম। জিডিতে জানায় ফাইল নিয়ে ফটোকপি করতে গিয়ে হারিয়ে গেছে। এটি সাজানো নাটক ছিল বলে অভিযোগ ওই অফিসের অন্য কর্মচারীদের। তরা জানান, মন্ত্রী বরাদ্দ নিয়ে আসে এরা সহযোগিতা করে। মন্ত্রীর দুর্নীতি ঢাকতে ফাইল গায়েব বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২২শে এপ্রিল মানবজমিনের শেষের পাতায়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। গঠন করে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ভাগ্যবান তদন্তকারী হলেন লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান। উপ-পরিচালক বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। অফিস সহকারী পারভীন বেগম এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে সদর অফিসে সংযুক্ত করে। পরে তদন্তকারী প্রধান অধিদপ্তরে ফাইল হারিয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়ে চুপচাপ থাকে। ওই প্রতিবেদনের ওপর অফিস সহকারী পারভীন বেগম মহাপরিচালক সমাজসেবা দপ্তরে গিয়ে (প্রশাসন ও অর্থ) বিভাগের পরিচালক শাহেদ পারভেজকে ম্যানেজ করে গোপনে আবারও কালীগঞ্জ উপজেলায় স্বপদে বদলির আদেশ করিয়ে নেয় পারভীন বেগম। দুর্নীতির ফাইল গায়েবকারীকে একইস্থানে পুনর্বহাল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে কালীগঞ্জে। ওদিকে ২১শে এপ্রিল দুদকের গণশুনানি ছিল লালমনিরহাট জেলা পরিষদ কাম-অডিটোরিয়ামে। দুদকে অভিযোগ দায়ের করলে গণশুনানিতে বিষয়টি দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন আমলে নেয়। দুদকের চিঠি পেয়ে রাতের আঁধারে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে। গণশুনানিতে তদন্তকারী প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে তিনি দুদক চেয়ারম্যানকে বলেন ঘটনাটি সত্য। প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার হিসাব গড়মিলের ফাইল গায়েব হয়। এরসঙ্গে অফিস সহকারী পারভীন বেগম ও অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জড়িত। ফাইল হারিয়ে যাওয়া বিষয়টি সঠিক ছিল না। ওই প্রতিবেদনটি দুদক চেয়ারম্যান নিয়ে নির্দেশ দেন দুদক তদন্ত করবে সরকারি অর্থ গড়মিলের বিষয়টি। তবে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য মানবজমিনকে ধন্যবাদ দিয়ে জানান, এই রকম আরও দুর্নীতির খবর প্রচারের জন্য। ওদিবে সমাজসেবা উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান জানান, আমি যা সত্য দুদক চেয়ারম্যানের নিকট তাই বলেছি যে ফাইল হারিয়ে যায়নি অফিসার রাজ্জাক ও অফিস সহকারী পারভীন বেগম নাটক সাজিয়েছে।

পাঠকের মতামত

বিচার?

জনতার আদালত
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৬:৫৩ পূর্বাহ্ন

বেচারি গরীব মানুষ, মন্ত্রী চাকরি দিয়েছিল, তাই নিমক হারামি করে নি। মন্ত্রীকে বাঁচাতে নিজেই ফেঁসে গেল। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। কঠোর শাস্তি হয়তো এই প্রবণতা বন্ধ করতে পারে।

Kazi
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৬:৫০ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status