ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

করানো হতো ভিক্ষা : শিশু সোয়াইবের হাতের নখ উপড়ানো, পুরো শরীরে ছ্যাঁকা

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

পাবনার শিশু সোয়াইব হোসেন বয়স ছয় বছর। গত বছরের ২রা অক্টোবর তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দেয়া হতো। হাতের নখ উপড়িয়ে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। রাতে আটকে রেখে এভাবেই তার ওপর চলেছে নির্যাতন। দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা। অপহরণের পর তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত অপহরণকারী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০)কে। সে শিশুটির মায়ের পূর্ব পরিচিত।
উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তান সোয়াইব হোসেনকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথাভর্তি চুল। মাত্র ছয় মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার অবস্থা। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে শিশুটি। সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান সোয়াইব। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই থাকতো সে। গত বছরের ২রা অক্টোবর একই উপজেলার শানিক দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ই অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছিল। বেশির ভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকতো। জিডির পর ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। 
ঘটনার ছয় মাস পর গত ১৮ই এপ্রিল খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতনের তথ্য। সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখতেন রফিকুল ইসলাম বিপ্লব। সহজে কিছু খেতে দিতেন না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলতো। সারা শরীরে দেয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। 
দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন বিপ্লব। সোহানা জাহান বলেন, পূর্ব পরিচয়ের কারণে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।
তিনি বলেন, ?উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তো আমার ছেলেকে চিনতেই পারিনি। দিনের পর দিন কীভাবে আমার শিশু সন্তানকে নির্যাতন করেছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়। প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে আমার ছেলেকে। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে ছেলেটা নড়াচড়াও করতে পারছে না। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা ও অব্যাহত শারীরিক নির্যাতনের কারণে সোয়াইবের অবস্থা খুবই খারাপ। তার হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো  প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠবে। পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এএসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ?? শিশুটিকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভিক্ষা করাতেন বিপ্লব। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে ১৯শে এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status