ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ট্রাম্পের অভিবাসীমুক্ত কর্মসূচি

যেভাবে রাষ্ট্রহীন হলেন পূর্ণা ভাণ্ডারি

মানবজমিন ডেস্ক
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

পূর্ণা ভাণ্ডারি (৩৮)। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তাকে যখন পরিবারসহ ভুটান থেকে বের করে দেয়া হয় তখন তিনি একজন শিশু। জাতিগত নেপালি, যারা লোতশাম্পা নামে পরিচিত তাদের বিরুদ্ধে তখন জাতিনিধন শুরু হয়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে তারা গৃহহীন হয়ে পড়েন। প্রায় ২০ বছর নেপালের  ভেতরেই রাষ্ট্রহীন হয়ে অন্য প্রায় এক লাখ মানুষের সঙ্গে দেশের ভেতরে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন। এ সময় তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। এ অবস্থায় তারা উন্নত কোনো দেশে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করেন। আইনি লড়াই শেষে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়েন তারা। সেখানে নতুন করে জীবন গড়ে তোলেন পূর্ণা ভাণ্ডারি। সেখানে তিনি কাজ করেন। পরিবার হয়। ট্যাক্স দেন। অতীতের ক্ষত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ২০২৫ সালের ৯ই মার্চ সকালে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের কাছ থেকে একটি ফোন পান তিনি। তারা দাবি করেন, পূর্ণা বার্ষিক চেক-ইন সম্পন্ন করেননি। আপত্তি জানান তিনি। বলেন, তিনি চেক-ইন করেছেন এবং এ বিষয়ে তার কাছে প্রমাণ আছে। তাকে ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে বলা হয়। তিনি পরের দিন ওহাইওর সিনসিনাতিতে অবস্থিত আইসিই অফিসে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তা জটিল ইংরেজি ভাষায় কথা বলছিলেন। তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয় পূর্ণা ভাণ্ডারিকে। ফলে তিনি তাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য আইসিই অফিসে ভাষায় দক্ষ এমন একজন আত্মীয়কে ডাকেন। কিন্তু তারা যখন পৌঁছেন সেখানে, ততক্ষণে ভাণ্ডারিকে কাস্টমস হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ওইদিন বিকালে তাকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটি ফোনকল করতে দেয়া হয় তার প্রিয়জনদের কাছে। তাদেরকে জানানো হয়, তাকে বাটলার কাউন্টি জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পূর্ণা ভাণ্ডারির ঘনিষ্ঠ এমন কয়েকজনের মতে, পরের দুইদিন ভাণ্ডারির স্ত্রী ও তার নিকট পরিবারের সদস্যরা উদ্ভ্রান্তের মতো ওই জেল এবং আইসিই অফিসের মধ্যে ছোটাছুটি করছিলেন। তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথা বলার অথবা তাকে দেখার চেষ্টা করছিলেন। তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পূর্ণা ভাণ্ডারির মতে, তিনি বার বার জেলখানার স্টাফদের অনুরোধ করেছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারীর সুবিধা দিতে। কিন্তু তা বার বার উপেক্ষা করা হয়েছে। তাকে আইনগতভাবে কোনো আইনজীবীও দেয়া হয়নি। ২৫শে মার্চ ভাণ্ডারি ও অন্য তিনজনকে নিউজার্সির নিওয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা ইলিনয়, অ্যারিজোনা এবং পেনসিলভ্যানিয়া থেকে আনা অন্য ৬ জন ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হন। এদেরকেও দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। ফলে ওই গ্রুপে সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১০। তাদের সবাই ভুটানের সাবেক শরণার্থী। বসতি গড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। বোর্ডিংয়ে ওঠার আগে আইসিই’র একজন এজেন্ট ভাণ্ডারিকে সীমিত সময়ের সুযোগ দেন প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে। এ সময় তার স্ত্রী কাজে থাকায় তাকে নাগালে পাওয়া যায়নি। ফলে ভাণ্ডারি তার বোনকে ডাকেন। কিন্তু আইসিই এজেন্ট এই ফোনকলের মধ্যেই হস্তক্ষেপ করে এবং কল কেটে দেয়। ভাণ্ডারি এতে ক্ষিপ্ত হন। তিনি জানতে চান, ২০১৩ সালে অভ্যন্তরীণ সহিংসতার জন্য তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা। কিন্তু তিনি ওই ঘটনায় আগেই আইনের মুখোমুখি হয়ে এর পরিণতি ভোগ করেছেন। তিনি জানতে চান ২০১৯ সালে কানাডা সীমান্তের কাছের ঘটনার জন্য তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা কিনা। ওই সময় তার পরিবার নিয়ে তিনি ভুলভাবে সফর করছিলেন। ফলে মার্কিন কর্মকর্তারা তার গ্রিনকার্ড জব্দ করে। অভিযোগ করে অভিবাসন বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। ওই ঘটনার পর আইসিই’র তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভাণ্ডারি। প্রতি বছর তাকে পুলিশের কাছে গিয়ে চেক-ইন করাতে হতো। ভাণ্ডারি বলেন, তিনি এই চাহিদা সব সময় পূরণ করেছেন। বিমানবন্দরে ভাণ্ডারিকে দুটি ডকুমেন্ট ধরিয়ে দেন আইসিই এজেন্ট। তার একটিতে তাকে ভুটানের পারো এলাকায় ফেরত পাঠানোর কথা বলা আছে। অন্যটিতে বলা হয়েছে, তিনি সেখানে যাওয়ার পর চার বছর পর যদি চান তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারবেন। ভাণ্ডারি শুধু পরের ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন। তারপর তাকে ভুটানে ফেরত পাঠানো হয়। এটা সেই দেশ, যে দেশ থেকে এর আগে তার পিতামাতার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। পুরো পরিবারকে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে ফেরত পাঠানোর এ খবর দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের এবং এর বাইরে ভুটানিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশার ছাপ ফেলে। তাদের মধ্যে ভীতি দেখা দেয়। ১৯৮০’র দশকের শেষে বা ১৯৯০’র দশকের শুরুতে ভুটান থেকে নির্যাতিত হয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে নতুন করে ক্ষত দেখা দেয়। অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। প্রথম দফায় যে ১০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে নিশ্চিত করা হলো যে, দু’জন জন্মেছেন নেপালের একটি শরণার্থী শিবিরে। এ খবরে ভুটানিজদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ আরও তীব্র হলো। কারণ, ওই দুই ব্যক্তিকে জোর করে বের করে দেয়ার আগে ভুটানে কোনোদিন পা-ই দেননি। ভুটানে অবতরণ করার পর ভাণ্ডারিসহ অন্যদেরকে ভুটান কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়। তারপর ভুটান কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ভারত সীমান্তের দিকে নিয়ে যায়। তাদেরকে বলে দেয়া হয়, তারা যেন আর কখনো ফিরে না যান। ফলে আরও একবার ভাণ্ডারি নিজেকে রাষ্ট্রহীন মনে করেন।
সূত্র: দ্য ডিপ্লোম্যাট

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status