দেশ বিদেশ
ডাকসু নির্বাচনের ‘পরিকল্পনা’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সে অনুযায়ী আগামী মাসের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে । তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এ টাইমলাইন ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ টাইমলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন মনে করে, ডাকসু প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদেরও ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আছে। সে কারণেই বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এতে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন প্রশাসনিক কার্যাবলীর কথা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, ডাকসু নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের আলোচনা শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। সবশেষ গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করে ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ছয়টি সভা করা হয়। এটি এখন সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
গত জানুয়ারি মাসে কোড অব কন্ডাক্ট বা আচরণবিধি রিভিউ কমিটি করা হয়। তারা সাতটি সভা করেছে। এটিও চূড়ান্ত হওয়ার পর সিন্ডিকেটে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
পরামর্শ প্রদান কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত না হলেও কমিটি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ও সম্পন্ন করেছে। এসব কাগজ ছাত্র সংগঠনগুলোকেও দেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া চলতি মাসেই শেষ হবে। ডিন, প্রভোস্ট ও বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও এ প্রক্রিয়া চলছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ই তা চূড়ান্ত করা হবে।
নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্ন হবে মে মাসের প্রথমার্ধে। একই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।
ভোট এবং এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রমের চূড়ান্ত তারিখ নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। তবে নির্বাচন কার্যক্রম কোন মাসে চলবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের নানা অংশের মতামত: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই পরিকল্পনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, অভ্যুত্থানের পর সর্বপ্রথম দাবি ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। গত ডিসেম্বর থেকে ডাকসু’র দাবিতে অনেক দিন ধারাবাহিক আন্দোলন করেছি। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি বলেছিলেন কয়েকদিনের মধ্যে ইন্সটিটিউশনাল ই-মেইলের মাধ্যমে ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটি গ্রহণ করতে প্রশাসনের ২ মাসের বেশি সময় লেগেছে। মার্চের শেষে এসে এই মতামত গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ ডাকসু নিয়ে একধরনের গড়িমসি এখানে স্পষ্ট। আমরা নিয়মিতভাবে দাবি জানিয়ে এসেছি যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপটা যেন অন্তত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা মতামত নিয়েছিলাম মতামত দেয়া ৯৩% শিক্ষার্থী মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। নির্বাচনটি যেন সে অনুযায়ী আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন। আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে অনেক দেরি হয়ে গেলেও তারা অবশেষে ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছেন।
তবে সদ্য ঘোষিত ডাকসু’র টাইমলাইন নিয়ে আমাদের কিছুটা আপত্তি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে মে মাসের মাঝামাঝিতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মে মাসের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন চান। মে মাসের মাঝামাঝিতে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সেটি সম্ভব হবে না। আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানাবো শিক্ষার্থীদের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কমিশন এপ্রিল মাসের মধ্যে গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবির আলোকে মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করুন।
এদিকে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা ইতিবাচক, তবে দীর্ঘসূত্রতা ও নানা আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন অংশীজনের প্রয়োজনীয় মিটিং সম্পন্ন হলেও এখনো পর্যন্ত ডাকসু গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত কপি প্রকাশ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণে আন্তরিকতা থাকলে মে মাস পর্যন্ত সময় লাগার কথা নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির বলেন, আমরা মনে করি এ নিয়ে এখনো যথেষ্ট দীর্ঘসূত্রতার অবকাশ রয়েছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ তারা রোডম্যাপ বা টাইমলাইন দেয়ার মতো কাজ করতে পেরেছে এতে তাদের ডাকসু নির্বাচন দেয়ার সদিচ্ছা প্রকাশ পায়। তবে আসলে আমরা শংকিত যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয় কিনা যেখানে তফসিল ঘোষনার আগে নির্দিষ্ট একটি দলের হুমকির মুখে নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়।