শেষের পাতা
লাশ পোড়ানোর মামলা দিয়েই আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জন তরুণকে গুলি করে হত্যার পর তাদের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিলের মধ্যদিয়ে এই মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। মঙ্গলবার প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য ২ সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র পক্ষের শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এই ৩ পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম ও সাবেক ডিবি পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আশুলিয়াতে ৫ জন শহীদ এবং একজন জীবন্ত লোককে পোড়ানো হয়েছিল। এই মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন গত ৮ই এপ্রিল দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল ১৫ই এপ্রিল আসামিদের হাজিরের নির্দেশ দেয়। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। আমরা শর্ট-টাইমে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবো। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু করতে পারবো। দ্বিতীয় মামলায় চট্টগ্রামে গত ১৬ ও ১৮ই জুলাই হেলমেট বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছিল। যেখানে ৭ জন শহীদ হয়েছিল। এই মামলায় যুবলীগের অস্ত্রধারী ২ নেতার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চাওয়া হলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। এই ঘটনায় পুলিশকে কেন আসামি করা হয় নাই জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালকে প্রসিকিউশন জানায় তদন্তে যদি কোনো পুলিশের নাম থাকে, তাহলে তাকেও এই গ্রেপ্তারের জন্য আবেদন করা হবে।
এ ছাড়া শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম করার অভিযোগে নতুন একটি মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েলকে আসামি করা হয়েছে। তাকে এই মামলায় আগামী ১৮ই জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি একসময় র্যাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে গোলাম মর্তূজা মাহিম নামের এক ছাত্র নেতাকে র্যাব কর্তৃক অপহরণ করে ৪৭ দিন আটক রাখার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো মোহাম্মদ সোহায়েলকে। তিনি একসময় র্যাবে কর্মরত ছিলেন। প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে মাহিম রাজশাহী থেকে ঢাকায় তার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসলে র্যাব কর্মকর্তা সোহেল তাকে ধানমণ্ডি থেকে গুম করে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতন করে। তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনায় র্যাব অফিসার রিয়াল অ্যাডমিরাল সোহায়েলকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল। তিনি বর্তমানে ডিএমপি’র দুটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। গতকাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে আগামী ১৮ই জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোহাম্মদ সোহায়েলকে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পাঠকের মতামত
দেরি কেন? এতদিন লাগলো কেন? ঐ সোহায়েল নামের লোকটাকে জনতার আদালতে ফাসি দিতে হবে। আসিয়ার ধর্ষন হত্যার বিচারের আপডেট কি? জনতা জানতে চায়।
আলহামদুলিল্লাহ। বিচার শুরু হল । ফাঁসির সাজা আশা করছি।
এত সময় কেন লাগে? সবকিছু দিনের আলোয় স্পষ্ট। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত (কার্যকর) করা হোক এক মাসের মধ্যেই। ইতোমধ্যে ৮ মাস পার হয়ে গেছে!