প্রথম পাতা
ভাঙচুর-লুটপাটের নেপথ্যে কারা?
স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
সোমবার সিলেট শহরতলীতে কেএফসি ভাঙচুর -ফাইল ছবি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কারা কেন এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যই বা কি ছিল? সোমবার এসব ঘটনার পরপরই তৎপর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে ৫৬ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- দেশে বিনিয়োগ সম্মেলন চলার সময় এভাবে বিদেশি মালিকানা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাটে কারও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুযোগ নেয়ার লক্ষ্যেও কোনো পক্ষ এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সোমবারের কর্মসূচিতে কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ছিল, তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের মিছিল-সমাবেশ থেকেই হামলা-ভাঙচুরে উস্কানি দেয়া হয়। পরে লুটপাটকারীরা সুযোগ নেয়।
সিলেটে ভাঙচুর-লুটপাটকারী কারা?
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে জানান, সিলেটে রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে; ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। শুধু এই ১৪ জনই নয় আরও অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত। তবে ক্ষত চিহ্ন রয়ে গেছে নগরে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ মানুষ। শুধু যে কেএফসি কিংবা বাটাতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে তা নয়। রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান, ফার্মেসিসহ নানা পণ্যের দোকানে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। নগরে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাদের বাধা কোনো কাজেই আসেনি। শেষে সেনা সদস্যরা মাঠে নামায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সিলেটে। বন্দরের বাটা জুতার দোকানে লুট করতে ভেতরে ছিল ১৫-২০ জন যুবক। এমন সময় সেনা সদস্যরা সেখানে যান। তারা যেতেই পালাচ্ছিলো লুটপাটকারীরা। সব ঘটনারই ভিডিও ছবি আছে।
এজন্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের জন্য সহজ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন- ঘটনার পরপরই পুলিশ সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এরপর আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার বিকাল থেকেই ঘটনা শুরু। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসি পরিদর্শন করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- যারাই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পুলিশ কমিশনারের কথার সত্যতা রাতে মিলেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশ অভিযান শুরু করে। আর এই অভিযানে ধরা পড়ে কয়েকজন চিহ্নিত আসামি। কেউ কেউ আবার লুটের ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। উল্লাসের দৃশ্য দেখান।
যারা পোস্ট দিয়েছেন তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চৌহাট্টার আল পাইন রেস্টুরেন্ট। জাসদ নেতা জাকির আহমদের মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী এই হোটেল। সেখানেও হামলা, লুটপাট হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি জানান- ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করেছেন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সিলেট নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ মহানগর নেতারা বিকালে ট্রাক নিয়ে নগরে নামেন। যেখানেই লুটপাটের দৃশ্য দেখেছেন সেগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কয়েস লোদী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিকালে সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে মিছিল বের করা হয়। এ মিছিলটি আম্বরখানা এলাকায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়ে নেতাকর্মীরা যার যার বাড়ি চলে যান। এই সময় খবর আসে ভাঙচুরের। প্রথমে আমরা শুনতে পারি হাউজিং এস্টেট, আম্বরখানা এলাকায় ভাঙচুর হচ্ছে।
এ খবর পেয়ে আমিসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। এরপর আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরের খবর পাই। তিনি বলেন- একের পর এক খবর আসতে থাকায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নগরে নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা কাজ করেছেন। এদিকে- ভাঙচুরের খবর পেয়ে সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরে নামেন। লুটপাট ঠেকাতে তিনি নগরবাসীকে সোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় তিনি সিলেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব আব্দুর রহমান রিপন অভিযোগ করেন- কেএফসি ভাঙচুর করার পরপরই কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক মুখে কাপড় বেঁধে নগরে তাণ্ডব শুরু করে। তারা শুধু তাণ্ডব চালায়নি, লুটপাটও করেছে।
এতে করে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন বলে দাবি করেন তিনি। সাবেক মেয়র আরিফ ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন- যারা ভাঙচুর করছে তারা দুর্বৃত্ত। সম্মিলিতভাবে সবাইকে এক হয়ে ওদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। না হলে সিলেটের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এজন্য সিলেট বিএনপি পরিবারের প্রতিটি সদস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। সিলেটে ভাঙচুর করলো কারা?- এটি এখন প্রশ্ন। কারা ভাঙচুর করেছে সেটি নিয়েও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুখ বন্ধ। তবে রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন- বিকালে নগরে সভা শেষে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। আর এই প্রতিবাদ মিছিল বের করার পরপরই নগরের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।
ওই মিছিল থেকে কর্মীরা এসে মুখে কাপড় বেঁধে ভাঙচুর শুরু করে। কেউ কেউ বলছেন; পরাজিত শক্তিরা প্রতিবাদ কর্মসূচির আড়ালে সিলেটকে অশান্ত করতে এই ভাঙচুর করেছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপের ভাগ হয়ে এ মিশনে অংশ নেয়। সেনা সদস্যরা মাঠে নামার পর তারা চলে যায়। এদিকে- নগরীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক রাতে নগরব্যাপী ট্রাকযোগে মাইক নিয়ে সচেনতার লক্ষ্যে নগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রদক্ষিণ করা হয়। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ইস্যুতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করে শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন- আমরা কোনো যুদ্ধ বা বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা সর্বত্র শান্তি চাই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সিলেটের তথা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে, এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যারাই সুযোগ নিয়ে সিলেটের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।
গ্রেপ্তার হলো যারা: সিলেটে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলো- কাজীটুলা এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন, একই এলাকার আরব আলীর ছেলে ইমন, দীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব, লাল সাদ আহমদের ছেলে মিজান আহমদ, সওদাগরটুলা এলাকার মৃত আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল মোতালেব, গোয়াইটুলা এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জের ফরিদ মিয়ার ছেলে জুনাইদ আহমদ, মিরের ময়দান এলাকার মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে মো. রবিন মিয়া, শাহী ঈদগাহ এলাকার মো. মহছন আহমদের ছেলে মোস্তাকিন আহমদ তুহিন, দরগাহ গেইট এলাকার আব্দুল ছাত্তারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন, শেখঘাট এলাকার শামীম আহমদের ছেলে মো. রিয়াদ, বালুচর নতুন বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মো. তুহিন, বটেশ্বর বাজারের সেলিম রেজার ছেলে আল নাফিউ এবং নোয়াখালীর চাদমিল থানার পশ্চিম নাহার কিল গ্রামের সৈয়দ আলতাফ মানিকের ছেলে সৈয়দ আল আমিন তুষার।
খুলনায় হামলাকারীদের নিয়ে যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শীরা:
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনার শিববাড়ি মোড়ে হোটেল টাইগার গার্ডেনে অবস্থিত বাটা শোরুম ও ময়লাপোতা মোড় এলাকায় কেএফসিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। বর্তমানের শোরুমটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ, র?্যাব এবং যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে বাটা শোরুমের সামনে পুলিশ এবং র?্যাবের সদস্যরা অবস্থান করছে। এ ঘটনায় সিসি ফুটেজ দেখে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অন্তর নামে বাটার একজন কর্মচারী বলেন, মাগরিবের নামাজের পর দেড়শ’ থেকে দুইশ’ বিক্ষুব্ধ জনতা শোরুমের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় শোরুমের ম্যানেজার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করে আহত করা হয়। এ ছাড়া একজন নিরাপত্তাকর্মীও আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা টোকাই শ্রেণির লোক আবার কিছু লুটপাটকারী ঘাট এলাকার শ্রমিক মনে হচ্ছিল।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা এ সময় শোরুমের ৮০ শতাংশ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় যার আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া হামলাকারীরা শোরুমের অধিকাংশ আসবাবপত্র, চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, কম্পিউটার ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। একইভাবে অভিজাত রেস্টুরেন্ট কেএফসি ভাঙচুর লুটপাট করার সময় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাটার শোরুমটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। শোরুমের সামনে পুলিশ এবং র?্যাবের সদস্যরা অবস্থান করছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) আহসান হাবীব বলেন, ভাঙচুর ও লুটপাট হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারে বিক্ষোভ থেকে একদল যুবক ইটপাটকেল মারা শুরু করে:
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল থেকে পাঁচ প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের পর প্রশ্ন উঠেছে, কারা করেছে এ ঘটনা? তৌহিদি জনতার ব্যানারে মূলত এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও সমন্বয়কদের একটি অংশ। কিন্তু তাদের মিছিল থেকেই এ ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।
খোদ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শীর্ষ নেতা ও কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল তার ফেসবুক ওয়ালে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, “ফিলিস্তিনের পক্ষে অহিংস কর্মসূচি পালন করুন। ঢাকায় বহুজাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন হচ্ছে। বিনিয়োগ ব্যাহত হওয়ার জন্য, ভাঙচুর লুটপাটেরউস্কানিতে ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত আছে কিনা?
আরেক ব্যবসায়ী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মিছিলের নেতৃত্বে ছিল শিবির ও তাদের অনুসারী সমন্বয়ক নেতারা। আগে পিছে পুলিশও ছিল। বাইর থেকে কেউ মিছিলে ঢুকে ভাঙচুর করার সুযোগ নেই। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং তা মিছিলে অংশগ্রহণকারীরাই করেছে।
এদিকে কক্সবাজার শহরে ৫টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ছবি দেখে শনাক্ত করে তাকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ হাসিম। তিনি সদরের ভারুয়াখালীর বাইন্না পাড়ার বাসিন্দা।
এদিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার মিছিল থেকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকেই হোটেল মোটেল জোনের এ ঘটনাকে স্যাবোটাজ হিসেবে দেখছেন। পর্যটন ব্যবসায় বিপর্যয় ঘটাতে পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার জেলা রেস্তরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল জানিয়েছেন, ইসরাইলি পণ্য রাখার অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল থেকে কিছু উশৃঙ্খল লোকজন কেএফসি, পিজ্জা হাট, কাঁচা লঙ্কা, পানশি রেস্টুরেন্ট, মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালিয়েছে। তার মতে, বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে এবং তারা পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর চালিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা-ই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস খান জানিয়েছেন, জনতার মিছিল থেকে ঢিল ছুড়ে মারার ঘটনায় ১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এসব ঘটনায় অন্যকোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বরিশালে মিছিলের একটি অংশ কেএফসিতে হামলা চালায়:
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালে কেএফসিতে ভাঙচুর নিয়ে কোনো গ্রেপ্তার নেই। স্থানীয়রা জানিয়েছেন কেএফসিতে হামলার আগে সেখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন নামাজ পড়েছেন। এর পরপরই হামলার ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোমবার বরিশালে গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা কর্মসূচি পালনকালে বগুড়া রোডস্থ কেএফসিতে হামলার ঘটনাটি ঘটে। ছাত্র জনতার ব্যানারে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়কে নামাজ আদায়সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে দিনভর কর্মসূচি পালন করেন। এসময় বিক্ষুব্ধরা ইসরাইলকে অর্থ সহায়তা দেয়ার অভিযোগে কেএফসির বরিশাল ব্রাঞ্চে ভাঙচুর চালান। মিছিল থেকে একটি অংশ ধেয়ে যায় কেএফসির দিকে। কেএফসির কার্যক্রম বরিশাল থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানায়। তারা কেএফসির দেয়ালে ‘বয়কট কেএফসি’ লিখে দেয়। এরপর সড়কে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন। এরপর কয়েকজন দ্রুত দোতালায় উঠে পড়ে। সেখান থেকে কেএফসি’র নিয়ন সাইনবোর্ড ভাঙার চেষ্টা করে। সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তারা কেএফসি থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
গাজীপুরে বাটা শোরুমসহ হোটেল ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪:
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় ইসরাইলের বর্বরতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের সময় পূর্ব পূর্বপরিকল্পিতভাবে তৃপ্তি হোটেল, রাধুনী হোটেল এবং বাটা কোম্পানি ডিলারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নাশকতা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সিয়াম খান (অনিক), শিমুল আহাম্মেদ শাওন, শাহীন ও জয়নাল আবেদীন। এ ব্যাপারে গাছা থানায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সহকারী উপ-কমিশনার হাফিজুল ইসলাম।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল দুপুরে বোর্ডবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ইসরাইালি আগ্রাসনবিরোধী মিছিল বের হয়। মিছিলের সুযোগ নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত এসব নাশকতা ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গাছা থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হামলা-লুটপাটে জড়িত ৫৬ জন গ্রেপ্তার:
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চালাকালে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ইনভেস্ট সামিট-২০২৫ এর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। আইজিপি বলেন, আমাদের কাছে হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ টিম এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সরকার কোনো আইনসম্মত প্রতিবাদে বাধা দেয় না। তবে প্রতিবাদের নামে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বরদাশ্ত করা হবে না।
পাঠকের মতামত
দেশ টা এখন কতিপয় সমন্বয়ক নামধারী প্রতিবন্ধী, জঙ্গি এবং রাজাকারের খপ্পরে পড়েছে। আর এদের ইন্ধন দিচ্ছে RAW/CIA/MOSAD এর এজেন্ট ড.ইউনূস এবং পিনাকী গং রা। এরা দেশ কে জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়ে ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার মিশনে নেমেছে।
গনিমতের মাল ভোগ করা ইসলামে বৈধ।
অনেকদিন থেকেই সুযোগে ছিল লুটপাটলীগের দোসররা। বিনিয়োগ সম্মেলনের মুহূর্তে বৈশ্বিক কর্মসূচিকে কাজে লাগিয়েছে মনে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ভার্চুয়াল মিটিং বলা " যে শহরে আমরা থাকবো না, সে শহরে আমরা কাউকে ঘুমাতে দিবনা।" কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দেয়া উচিৎ হয়নি। আওয়ামী দুর্বৃত্তরা মাঠে। আর্মি ঘুমায়।
ঈসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত মিছিলে অনেক চোর-ডাকাত ডুকে বিভিন্ন প্রতিস্টানে ভাংচুর করে এবং লুটপাট চালাইয়াছে তাই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এদের কে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হউক।
লুটপাটের সাথে জড়িত ব্যক্তি যেই দলেরই হোক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। ইসরাইল এবং তার দোসরদের পণ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হোক। যেসব ব্যবসায়ী ইসরাইল এবং তার দোসরদের পণ্য রাখবেন তাদের বয়কট করা হোক সামাজিকভাবে।
এরা স্বৈরাচারের দোসর
যারা লোটপাটের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই ইসরাইলের দোসর।এরা বংশ পরম্পরায় ডাকাত জনগোষ্ঠি।এদের সমূলে নির্মূল করলেই দেশে শান্তি আসবে।
কক্সবাজার ইয়া বাবা বদির এলাকা আর গাজীপুর মোজাম্মেলের এলাকা।