বাংলারজমিন
নেদারল্যান্ডসে যাওয়া হলো না জাতীয় যুব পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা সোহেলের
সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
৯ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। ২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় যুব পুরস্কার লাভ করেন। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে আম মেলায় যাওয়ার কথা ছিল সোহেলের। কিন্তু বৃহস্পতিবার কাতার এয়ারের কর্মকর্তার অভিযোগের কারণে নেদারল্যান্ডসে যাওয়া হলো না সোহেলের।
সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তার ১০৫ বিঘা বাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির আম। এছাড়াও পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম এলাকায় সোহেল রানার ৪০ বিঘা জমির আরেকটি আম বাগান রয়েছে।
সোহেল রানা জানান, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। চাকরিও করেন বেশ কিছুদিন। পরে চাকরি ছেড়ে ২০১৫ সালে শুরু করেন ‘বরেন্দ্র এগ্রোপার্ক’ নামে কৃষি খামার। সেখানে বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি কৃষিজ পণ্য উৎপাদন শুরু করেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আম চাষ। ২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার লাভ করেন। গত ২ বছর থেকে গ্লোবাল জিপিএ মেনে আম উৎপাদন করেন। আর সেই আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছেন।
নেদারল্যান্ড মেলায় যাওয়া নিয়ে কী ঘটেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিসা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের জিআরসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজ যাচাই-বাছাই করে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছিল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিমানে ওঠার আগে কাতার এয়ারওয়েজের লোকজন অভিযোগ করেন যে, আমার ভিসা জাল। ভিসা জালের কথা শুনে আমি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ছুটে আসি। তারা পুনরায় যাচাই-বাছাই করেন। পরে ভিসা ঠিক থাকায় আমাকে ভ্রমণের অনুমতি দিতে কাতার এয়ারওয়েজকে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা না শুনে আমাকে ফেরত পাঠায়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সম্ভাবনাময় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ‘আমি কাতার এয়ারওয়েজে ৫ই আগস্ট ঢাকা-আমস্টারডাম টিকিট করি। ফ্লাইট ছিল ভোর সাড়ে ৪টায়। ৪ঠা আগস্ট রাত পৌনে ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১নং টার্মিনাল দিয়ে প্রবেশ করি। এরপর বোর্ডিং পাস দেয়া শুরু হলে পাসপোর্ট, টিকিট, ভ্যাকসিন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করি এবং লাগেজ জমা দিয়ে ইমিগ্রেশনে যাই। ইমিগ্রশেনে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস, জিও কপিসহ সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ করি। এরপর বিমানে ওঠার জন্য ৫নং গেটে অপেক্ষা করতে থাকি। নির্দিষ্ট সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেট পার হওয়ার সময় কাতার এয়ারওয়েজের দায়িত্বরত স্টাফ আমার পাসপোর্ট দেখে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করেন। এ সময় আমার পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস রেখে দিয়ে পাশে দাঁড়াতে বলেন। আমি তাকে জিও কপি, এলওআই, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির কথা বলি। এ ছাড়াও আরও বলি আমি নিজ হাতে ভিসা পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি। এখানে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই। আমি দ্রুত ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা বলি। আমার ইমিগ্রেশন করা কর্মকর্তা এসআই দেলোয়ার আমাকে নিয়ে কাতার এয়ারের কর্মকর্তার কাছে যান। পরে আমার পাসপোর্ট ও যাবতীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরের ভিসা বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিসা সঠিক বলে মত দেয়। এরপর বিমান ছাড়ার আগে এসআই আমাকে সঙ্গে নিয়ে ৫নং গেটে কাতার এয়ারের স্টাফের কাছে ভিসা সঠিক বলে জানান এবং বিমানে যাত্রার জন্য অনুরোধ করেন। কাতার এয়ারের কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রীয় জিও, এলওআই, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তি, গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন সবকিছু বলেন। বিমান যাত্রা নাকচ করে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বরাবর প্যাসেঞ্জার অফলোডের আবেদন করেন। এরমধ্যে আমার ফ্লাইট ফ্লাই করে চলে যায়। ইমিগ্রেশন পুলিশ বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর কাতার এয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি জিডি করে আমার পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল বাতিল করেন।
কাতার এয়ার ওয়েজ আমার মান সম্মান হানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি করেছে। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’ পাশাপাশি এই বিষয়ে নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির কাছে অভিযোগ করবেন বলেও জানান তিনি। কাতার এয়ারওয়েজের এমন নিন্দনীয় কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এহেন ন্যক্কারজনক কাজের সুবিচার চেয়েছেন এলাকার অভিজ্ঞমহল।