প্রথম পাতা
গাজার শিশুরা অভিশাপ দিচ্ছে
মানবজমিন ডেস্ক
২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ। একের পর এক ধসে পড়ছে বসতবাড়ি। প্রাণ হারাচ্ছে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুও। জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ছুটে পালানোর কোনো স্থান নেই। কোনো রক্ষাকারী নেই। যেন সভ্যতার নির্মম পরিহাস শুরু হয়ে গেছে। নতুন করে হামলা করে গাজা উপত্যকার পরিণতি এমনটাই করেছে বর্বর ইসরাইল। বিশ্ববাসী সহসা এমন মর্মান্তিক চিত্র দেখেছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। দখলদার ইসরাইলের হিংস্রতা সভ্যতাকে হার মানিয়েছে। যে শিশুর ভাষা শুধু কান্না- তাকেও রেহাই দিচ্ছে না নেতানিয়াহুর বাহিনী। আকাশ থেকে একের পর এক বোমা ফেলে কেড়ে নিচ্ছে তাদের প্রাণ। চারদিকে রক্ত আর ধ্বংসস্তূপ দেখে শিশুরা নিজ থেকেই মৃত্যু কামনা করছে। নিষ্পাপ এই শিশুগুলোর কান্না বিশ্ববাসীর কানে করুণ সুর ঢেলে দিলেও তাতে যেন মন গলছে না ইসরাইল ও তার মিত্রদের। প্রায় পনেরো মাস যুদ্ধের পর জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি গাজাবাসীর মনে যে আশা সঞ্চার করেছিল তা গত মঙ্গলবারের হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মাত্র তিন দিনে সাত শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে তারা। যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু এবং নারী। শিশুদের মধ্যে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকও রয়েছে। শিশুদের এমন করুণ পরিণতি বিশ্ববাসী শিগগিরই দেখেছে বলে নজির নেই। মঙ্গলবার রাতভর ইসরাইলের হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন। সেদিন বিমান হামলা চালিয়ে মর্মান্তিকভাবে ফিলিস্তিনিদের নিহত করেছে তেলআবিব। পরের দিন থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পদাতিক বাহিনী। নতুন করে শুরু করা হামলার তৃতীয় দিনে ৯১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শিশু।
ইউনিসেফের বরাত দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, গত তিন দিনে ইসরাইলের বোমার আঘাতে ২০০-এর বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছেন। গাজায় নিযুক্ত ইউনিসেফের মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এই সংখ্যা চূড়ান্ত নয়। কেননা, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা শিশুদের কোনো খোঁজ মিলছে না। উদ্ধারকারীরা নিশ্চিত নন চাপা পড়া শিশুরা বেঁচে আছে কিনা। এদিকে ভাগ্যক্রমে ২৫ দিন বয়সী এক শিশুকে উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে উদ্ধারকারীরা। শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্যারামেডিকরা যখন শিশুটিকে পরীক্ষা করছিল, তখন সে থেমে থেমে নড়ে উঠছিল। মঙ্গলবার ইসরাইলের বিমান হামলায় শিশুটির বাবা-মাসহ পরিবারের সকলেই নিহত হয়েছেন। জন্মগ্রহণ করেই পৃথিবীতে এতিম হয়ে গেল শিশুটি। এ ছাড়া শিশুটি বেঁচে থাকবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, ইসরাইলি হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কে জানে হয়তোবা তেলআবিবের ছোড়া অন্য কোনো বোমার আঘাতে শিশুটির জীবন ছিন্নভিন্ন হবে। এই শিশুর নাম ইল্লা ওসামা আবু দাগ্গা। ২৫ দিন আগে গাজায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির মধ্যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা ধরে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ শেষ। যদিও পনেরো মাসের যুদ্ধে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ায় উত্তর গাজায় আটকা পড়েছে লক্ষাধিক শিশু। তাদের জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে গাজায় কর্তব্যরত বৃটেনভিত্তিক শিশু বিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে অতর্কিতভাবে ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর লক্ষাধিক শিশু উত্তর গাজায় আটকা পড়েছে। জীবননাশের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তারা। বিশেষ করে বেইত লাহিয়ায় ইসরাইলের পদাতিক বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার পর লক্ষাধিক শিশু জীবন হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। উত্তর গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে আবারো ওই অঞ্চলে খাদ্য ও ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী সকল সহায়তা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে কর্তব্যরত মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ২রা মার্চ থেকে ইসরাইলি বাহিনী উপত্যকায় প্রবেশকারী সকল সহায়তা এবং বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর বর্তমান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের আঞ্চলিক পরিচালক আহমেদ আলদাউই বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে শিশুরা সকল বেসামরিক নাগরিকদের মতো বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী। কিন্তু গত তিন দিনে গাজার শিশুরা যে নারকীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তা দেখে যে কেউ বলবে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। হামলার ৭২ ঘণ্টায় যে সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন তার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই শিশু। আর ৩০ শতাংশ নারী।
পাঠকের মতামত
Arobar sokol sasok ar rokta vazal asa noyto a vaba nirob thakta Para na.odar bicher Allah korba inshallah
হে আল্লাহ তুমি এই জুলুমের বিচার কর।
যে ইসলামিক বিশ্ব ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি বিবৃতি দিতে পারেনা, সে ইসলামিক বিশ্বের উপর আল্লাহর গজব পড়ুক।
হে আল্লাহ তুমি এই জুলুমের বিচার কর।
ইসরাইলের পতন অনিবার্য হয়ে আসছে । আল্লাহ ছাড় দেন কিন্ত ছেড়ে দেন না।
Have you ever seen any real movement against the barbaric action by the Arab countries? There's saying two Arab countries provided assistance for destroying Gaza.
আমেরিকা করছে এটা, আর কাতার ছাড়া বাকি আরবরা ইজরায়েলর দাস। সৌদি নাকি সেরকম করে ঈদ প্রস্তুতি নিচ্ছে।