ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ঈদের কেনাকাটায় ব্র্যান্ডের পোশাকে ঝোঁক তরুণদের

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার
mzamin

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোতে চলছে জমজমাট কেনাকাটা। বিশেষ করে নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও কেনার প্রবণতা বেশি। ব্যবসায়ীদের কথা- গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া মার্কেটে আসছেন না। যারা আসছেন বেশির ভাগই সন্ধ্যার মধ্যে কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরতে চেষ্টা করছেন। 
সরজমিন রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল, যাত্রাবাড়ী, নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

ক্রেতারা বলছেন, ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা সবসময় থাকে। এগুলো নষ্ট হয় না সহজে। সেলাই, ফিটিংসহ যাবতীয় কাজ সুন্দরভাবে করা থাকে। এ ছাড়া এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে কেনা পোশাক। মানুষ সময় বাঁচাতে উন্নত মানের ব্র্যান্ডের দোকানগুলো থেকে পোশাক কিনেন। শুধু পোশাক নয়। যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষেত্রে মানুষ এখন ব্র্যান্ডের কথা চিন্তা করে। কারণ বাইরের পণ্যগুলো ভাগ্যের উপর। ভালো হলে ভালো না হলে কিছু করার থাকে না। আর ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কিনলে পরিবর্তন করে দেন পছন্দ না হলে। মান নিয়েও থাকে না তেমন কোনো প্রশ্ন। নতুন কেউ কিছু কিনতে আসলেও ঠকার কোনো ভয় নেই। একদরের দোকান ব্র্যান্ডের। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের পরিবর্তন, ভোক্তাদের আচরণ এবং প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে ব্র্যান্ডের চাহিদা। ব্র্যান্ডের চাহিদা বাড়ার কারণ হিসেবে রয়েছে মানসম্মত পণ্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্র্যান্ড লয়্যালটি, শক্তিশালী মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন, ট্রেন্ড ধরতে পারা। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ই-কমার্স এবং ডাটা-ড্রিভেন মার্কেটিংয়ের ফলে ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা বাড়ছে। যারা গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করতে পারছে এবং কাস্টমাইজড সেবা দিতে পারছে, তারা দ্রুত উন্নতি করছে।
শনির আখড়া বাজারে বাটা স্টোরের নাসিম বলেন, এবারের ঈদে আমাদের ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ডিসকাউন্টের অফার থাকায় ক্রেতারা আসছেন। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতাদের অনেক উপস্থিতি ছিল। 

পাশেই এ্যাপেক্স স্টোরের লোকমান বলেন, এবার আমাদের বিক্রি মোটামুটি আছে। কোম্পানি যে অফার দিচ্ছে তা কাজে আসছে না। ২৫০০ টাকার শপিং করলে ১০০ টাকা ক্যাশব্যাক দেয় এটা কোনো অফার হয় না। ১০০ টাকা তো আমরা চা খেতেই খরচ হয়ে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমাদের বিক্রি বেশি হচ্ছে। 

ব্র্যান্ডের পোশাকে ক্রেতা বেশি, সাধারণ দোকানে কম: শহরের নামকরা ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বসুন্ধরা শপিংমলে আড়ং, এমব্রেলা, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, আর্ট, ইনফিনিটি, রিচম্যান, স্টাইলিশ আবিয়া বোরকা, মনেরেখো শাড়িজ, শালিমার, আড়ন ক্লোথিং, নগর শাড়ি, বাটা, লোটো, এ্যাপেক্স, এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, ব্র্যান্ডের পোশাক মানসম্মত ও টেকসই হওয়ায় তারা এগুলো কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিল রেখে পোশাক তৈরি করছেন। যেটা বাজারে ক্রেতা বাড়াচ্ছে। 

বসুন্ধরা শপিংমলের আড়ন ক্লোথিং-এর রনি হোসেন বলেন, বেচা-বিক্রি খুব বেশি নেই। আমাদের দোকান একটু পেছনে পড়ে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারছি না। তবে এখন মানুষের মধ্যে ব্র্যান্ডের চাহিদা বেশি। আমাদের এদিকে  ক্রেতা না থাকলেও ভেতরে দেখেন ব্র্যান্ডের দোকানে ভিড় লেগে আছে। 

ফেস-২ পাঞ্জাবি শোরুমের শিহাব আহমেদ বলেন, চাহিদা ভালো রয়েছে। পাঞ্জাবির চাহিদা এবার মানুষের মধ্যে বেশি। নারীরা আসছেন তাদের পছন্দের পুরুষের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি দোকান। এখন দিন যাবে বিক্রি বাড়বে। ২০ রমজানের পর আরও বাড়বে আশা করছি। 

ইনফিনিটি শোরুমের কাওছার আহমেদ বলেন, বেচা-বিক্রি ভালো। ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে এমনিতেও চাপ থাকে ঈদ আসলে। এখন তো রমজান মাস চলে ঈদকে কেন্দ্র করে সবাই ব্র্যান্ডের জিনিস কিনতে আসছেন। ২০ রমজানের পর আরও বাড়বে। 
রিচম্যানের ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, দেশের পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থায় মার্কেটে ক্রেতা কম। ক্রেতা কম থাকায় ভিড় গত বছরের তুলনায় কম। আমাদের পণ্যগুলো আমাদের ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয়। যার কারণে গুণেমানে অন্য সবার থেকে আলাদা ও টেকসই।

আড়ং-এর কর্মচারী ফাহিম আহমেদ বলেন, মেয়েদের পোশাক আমাদের এখানে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি থাকে। দাঁড়ানোর মতো জায়গা পাওয়া মুশকিল ছিল গতকাল। আজকেই তুলনামূলক কম ভিড়। তবে আড়ংয়ের পণ্য সবার মধ্যে আলাদা ইমেজ তৈরি করে। 

ধানমণ্ডি থেকে আসা আবিদুল ইসলাম বলেন, ব্র্যান্ডের পোশাকের কাপড়, সেলাই, বোতাম সবকিছুই ভালো থাকে। ফিটিংসও থাকে নিখুঁত। তাই দাম একটু বেশি হলেও আমি ব্র্যান্ডের  পোশাকই কিনি।

তবে বিপণিবিতানের সব দোকানেই যে সমান ক্রেতা রয়েছে, তা নয়। অনেক দোকানে বিক্রি কম হচ্ছে। 
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব বাজারে: বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। তারা বলেন, সাধারণত ঈদের দুই সপ্তাহ আগে বাজার জমে ওঠে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। যারা আসছেন তারা তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরার চেষ্টা করছেন। 
শালিমার শাড়ির সেলসম্যান  দেলোয়ার হোসেন বুলু বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম। শাড়ির বেচাকেনা একদম নেই। দেশের সার্বিক অবস্থা দেখতেই পাচ্ছেন। আমরা রাজনীতি করি না, ব্যবসা করি। তবে দেশের সার্বিক অবস্থা সবাই যেটা বলছে অনেকে নিরাপত্তার কারণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে আসতে চাইছেন না। ফলে কেনাকাটা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিক্রির শীর্ষে মেয়েদের পোশাক, শিশুদের পোশাক ও পাঞ্জাবি: ঈদের কেনাকাটায় মেয়েদের পোশাকের চাহিদা বরাবরের মতোই বেশি। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, বোরকা, কুর্তির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। পাশাপাশি শিশুদের পোশাকের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। পুরুষদের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবিই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় থাকায় ক্রেতারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন।

আম্বিয়া খাতুন মিরপুর থেকে এসেছেন বসুন্ধরা শপিংমলে স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি কিনতে। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরেছি। ব্র্যান্ডের কয়েকটি দোকানে পছন্দ না হওয়ায় ইলিয়নে এসেছি। দাম বেশি হলেও ইলিয়নের পাঞ্জাবি টেকসই, দেখতে সুন্দর, পরতেও ভালো লাগবে। আতিক রহমান স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, আজকে আমার জন্য কিছু কিনবো না। স্ত্রীর জন্য কয়েকটা ড্রেস কিনবো। দেখতেছি; তবে কেনাকাটা শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাসায় যাবো।

সন্ধ্যার পর ক্রেতার সংখ্যা কম: বিক্রেতারা বলছেন, বিকাল পর্যন্ত মার্কেটে ভিড় থাকলেও সন্ধ্যার পর ক্রেতার সংখ্যা কমতে থাকে। বেশির ভাগ ক্রেতাই সন্ধ্যার মধ্যে কেনাকাটা শেষ করতে চান। ঈদের আগের কয়েকদিন বিক্রি আরও বাড়বে। অনেকেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য অপেক্ষা করেন, তাই আগামী সপ্তাহে বাজার আরও জমজমাট হবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে শপিংমলগুলোতে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা ঢাকা মহানগরের ২৪ ঘণ্টার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করেছি। বড় বড় শপিংমলগুলোর সামনে যাতে ভিড় না হয়। সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। উৎসবমুখর পরিবেশে রাজধানীতে মানুষ কেনাকাটা করছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status