দেশ বিদেশ
ঢাবিতে বহিষ্কৃতদের তালিকায় নেই চিহ্নিত অনেক অপরাধী
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবারজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সহিংস ঘটনায় বহিষ্কৃতদের তালিকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ চিহ্নিত অনেক অপরাধীর নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসা বহিষ্কৃতদের তালিকা প্রকাশ্যে আসলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ১২৮ জনের তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়। এটি অধিকতর তদন্তের জন্য একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আরও যাচাই বাছাই করে অপরাধীদের তালিকা দেবে। বহিষ্কৃত অনেকের ক্ষেত্রে পরিচয় শনাক্তে তথ্যগত ভুল দেখা গেছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। আবার হামলার সময় ক্যাম্পাসে না থাকা অনেকের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। দাবি করেছেন, দ্রুত তালিকাটি পরিমার্জন করে নতুন তালিকা প্রকাশের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, হামলাকারীর যেসব স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে অন্তত চিহ্নিতের সংখ্যা ৫০০-৬০০ ছাড়িয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তালিকাও করেছেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাখ্যা। তদন্ত কমিটিতে যারা আছেন প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। এখানে অসততা, অসঙ্গতি, অনৈতিকতাসহ অন্যান্য কোনো বিষয় জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ভুল শিকার করে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের তালিকা দেবে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা হামলার মদদ দিয়েছেন। ১৭ই জুলাই ছাত্রলীগের অনেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষকের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষকদের দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। যে হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়, সেও অপরাধী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক রিফাত রশীদ বলেন, ছাত্রলীগের চিহ্নিত মাথাগুলোকে বাদ দিয়ে ১৯-২০, ২০-২১, ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়ে ১২৮ জনের তালিকা করেছে তদন্ত কমিটি। সৈকত, আবু ইউনুস, আকিব ফুয়াদ, কামাল উদ্দিন রানাসহ ছাত্রলীগের বড় বড় সন্ত্রাসীদের নাম নেই। ছাত্রলীগের একজন নারীরও নাম নেই। বিজ্ঞানের তিন হল থেকে মাত্র একজনের নাম এসেছে। অথচ শহীদুল্লাহ্ হল রণক্ষেত্র বানিয়েছে কারা? এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৫ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. তাজমেরী এস এ ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার সিন্ডিকেট সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি সত্যানুসন্ধান কমিটি কর্তৃক চিহ্নিত ১২৮ জনের বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সহিংস ঘটনায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে খুব শিগগিরই তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করবে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, সত্যানুসন্ধান কমিটি কর্তৃক চিহ্নিত ১২৮ জনের তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয়। এ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।