প্রথম পাতা
বরগুনায় ধর্ষণ মামলার বাদীকে হত্যা
৫ দিনেও শনাক্ত হয়নি খুনি
বরগুনা প্রতিনিধি
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবারবরগুনায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার বাদী মন্টু দাস হত্যার পাঁচ দিনেও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করলেও অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শনিবার বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করতে সময় প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন- অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত আসামি শ্রীজিৎ চন্দ্র রায়ের বাবা শ্রীরাম রায়, শ্রীজিতের সহযোগী কালু এবং রফিক। এ মামলার একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামি শ্রীজিৎ রায়সহ গ্রেপ্তার সবাই বর্তমানে কারাগারে আছেন। গত মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি করইতলা নামক এলাকার নিজ বাড়ির পেছন থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে বুধবার বিকালে বরগুনা সদর থানায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে বিচার চেয়ে দায়েরকৃত মামলার বাদী বাবাকে হত্যার অভিযোগ উঠায় এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিন নিহত মন্টুর বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, দেড় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে নির্বাক মন্টুর স্ত্রী। চার বছর ও দশ বছর বয়সী দুই মেয়ের চোখেও বাবাকে হারানোর শোক। আর একটু পরপরই ছেলের শোকে চিৎকার করে উঠছেন স্বামীহারা মন্টুর বৃদ্ধা মা। বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজনরা, সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাদের। তবে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি কীভাবে চলবে তার উত্তর দিতে পারছেন না কেউ।
স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, মন্টু দাস মুরগির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বরগুনা পৌর শহরের কালিবাড়ি এলাকার নিজ ঘরের পেছনের একটি ঝোপঝাড় থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার ছয়দিন আগে ৫ই মার্চ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে শ্রীজিৎ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন তিনি। পরে ওই দিনই এ মামলায় অভিযুক্ত শ্রীজিৎকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী (১৩) বলেন, আমার শুরু থেকেই ভয় হচ্ছিল। মনে হয়েছিল বিচার পাবো না, উল্টো মানুষ জানবে। তাই বাবাকে নিষেধ করেছিলাম মামলা করতে। এখন বাবাকেই হারালাম। মান-সম্মান গেল। নিহতের স্ত্রী বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের পর আমার স্বামী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে যেদিন মামলার তারিখ তার আগের রাতে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহ হয় ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। স্বামীকে হারিয়েছি এখন সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে তা জানি না। এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, মামলাটির তদন্ত চলমান। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আসামি এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলাটি তদন্তের জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল হালিম বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
পাঠকের মতামত
মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ মামলায় যে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া হোল,বরগুনা ধর্ষণ মামলাটি সে গতিতে এগুচ্ছেনা,বরং পিতা বাদীকে তারা হত্যা করলো,-কি জঘন্য! বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারকে কেনো তৎপর করছেনা,জাতি জানতে চায়! এখানেও ৯০-দিনের মধ্যে ধর্ষনের বিচার ও হত্যা মামলারও বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে।