দেশ বিদেশ
ঝিনাইদহে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ গাইড বইয়ের কারখানার সন্ধান
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার
ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই এলাকায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ গাইড বইয়ের গোপন কারখানার সন্ধান মিলেছে। এই গোপন গোডাউন থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব গাইড বই। আর এই অনৈতিক কাজ করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ফকরুল নামে এক অবৈধ ব্যবসায়ী। প্রতারিত হচ্ছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বছরের পর বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটনাটি ঘটছে। অথচ জেলা প্রশাসনের কোনো শাখাই এ তথ্য জানেন না। কিন্তু দেখার কেউ নেই! এদিকে ঝিনাইদহ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. শাহনাজ ফেরদৌস এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে জড়িতরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। ঝিনাইদহ জেলা শহরের পাগলাকানাই মোড়ে আলিশান চারতলা বাড়ির নিচতলায় এই আন্ডারগ্রাউন্ড গোডাউনের অবস্থান। সেখানে হাজার হাজার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ গাইড বই তৈরি করা হচ্ছে। মিরাজ নামে একজন গোডাউন পাহারা দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে ম্যানেজার বলেও দাবি করেন।
মিরাজ গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড ঢাকা থেকে ছাপানো হয়। তারপর ঝিনাইদহের গোডাউনে বাধায় করে লেবেল লাগানো হয়। দেশের লাইব্রেরিগুলোর চাহিদামতো কুরিয়ার সার্ভিসযোগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নোট গাইড বা সহায়ক বই প্রকাশ করার বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ঝিনাইদহ কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. শাহনাজ ফেরদৌস জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোট গাইড, সহায়ক পুস্তক প্রকাশের জন্য দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি শুধু নয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্যর প্রতি এক ধরনের হুমকি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে এ সব দুর্নীতিবাজদের কারণে।
শনিবার সরজমিন তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই মোড়ে মসজিদে সাদাতিয়ার সামনে চারতলা ‘ব্যতিক্রম’ ভবনের মালিক সদর উপজেলার বেড়াশুলা গ্রামের মো. ফকরুল ইসলাম। সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড রুমে হাজার হাজার কপি গাইড বই মজুত রয়েছে। অবৈধ এসব বই বিক্রির টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন এই ফকরুল। এনজিওর চাকরি ছেড়ে তিনি নোট বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা থেকে ছাপা শুরু হয় নোট বই আর গাইড। ব্যবসা ছড়িয়ে দেয়া হয় গোটা দেশে।
ঝিনাইদহ পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক ইনজামুল হক জানান, বোর্ডের বই ব্যতীত নোট গাইড ছাপানো ও বিক্রির বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট বা গাইড সহায়ক বই বিক্রির জন্য কোনো নির্দেশনা নেই। ফকরুল ইসলাম কীভাবে নোট গাইড বা সহায়ক বই ছাপাচ্ছে এবং বিক্রি করছে তা তাদের অজানা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহের এক পুস্তক ব্যবসায়ী জানান, শুধু ফকরুল নয় সারা দেশে নোট গাইড বিক্রি জন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তারা প্রতি বছর প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়ের সভাপতি ও শিক্ষকদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে নিজ নিজ কোম্পানির বই ছাত্রছাত্রীদের বাধ্যতামূলক করেন। যে কারনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফকরুল ইসলাম দাবি করেন, বইগুলোর পাণ্ডুলিপি তিনি নিজে তৈরি করেন এবং ঢাকার প্রেস থেকে ছাপানো হয়। তার দাবি ট্রেড লাইসেন্স আর পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির কার্ডের ক্ষমতাবলে দীর্ঘদিন তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নোট গাইড প্রকাশ করে আসছেন।