ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

জুমার বয়ান থেকে

ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি হওয়া উচিত

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
mzamin

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। মাগুরার শিশু আছিয়া বুঝিয়ে দিয়ে গেছে বিচারহীনতা সমাজকে কোথায় নিয়ে  যেতে পারে। আছিয়ার মৃত্যু দেশবাসীর মনে নাড়া দিয়ে গেছে। শুধু কি আছিয়া? এমন বহু আছিয়া তার সম্ভ্রম হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে ধর্ষণ অনেকটা কমে যেতো বলে মনে করেন ইসলামী স্কলাররা। কেউ কেউ বলেছেন, নরপশুদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক এমন শাস্তি দেয়ার বিধান করলে ধর্ষণের ঘটনা কমে যাবে। সরজমিন গতকাল গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে জুমার বয়ানে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, রমজান মাস এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হালখাতার মাস। এই মাস অনেক ফজিলতপূর্ণ। এ মাসেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কচুপাতার পানিতে যেমন যত ঝড়, তুফান যাই হোক- পানি ধরে না। মানুষের মন এমন হয়ে গেছে। সবকিছু করে নিজের খেয়াল খুশিমতো। মানুষ আমলের দিকে ধাবিত হচ্ছে কম। একেকটা সময় আসছে নতুন নতুন ফেতনা আসছে। রমজান মাসেও একটার পর একটা ফেতনা সৃষ্টি হচ্ছে। 

মাহমুদুল হাসান বলেন, এ মসজিদের খতিব আমি, এ মসজিদে কেউ নামাজ পড়ালে আমার জানা উচিত। আরেকজন আসতে হলে আমার অনুমতি লাগবে। সব বিষয়ে সবাই একমত হবে না। কিন্তু মৌলিক বিষয়ের মধ্যে এক হতে হবে। যারা ২৪ ঘণ্টা মহিলাদের সঙ্গে চলে। দেখার সুযোগ করে দেয়। ভিডিও ছাড়ে- লাখ লাখ মেয়েরা ভিডিও দেখে। ইমামতি করলে মসজিদের এক লাখ মুসল্লির কথা চিন্তা করতে হয়। সমাজের দোহাই দিলে হবে না। না পারলে ইমামতি ছেড়ে দেন। চাকরি করতে পারবেন না আপনি, যে চাকরিতে মেয়েদের সঙ্গে উঠাবসা করতে হয়। তিনি বলেন, যত আন্দোলনই করেন মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে কোনো কিছুই হবে না। আপনারা আন্দোলন করবেন- মালিক কারখানা বিক্রি করে বিদেশ চলে যাবেন। প্রতিষ্ঠান চালালে ভুলভ্রান্তি হবে। এর জন্য বসতে হবে। কারখানায় কাজ করতে হবে। তাহলে মালিক খুশি হয়ে বেতনও বাড়িয়ে দিবে। সঙ্গে অনেক সুযোগ সুবিধা দিবে। মালিকের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করে পারা যায় না। জুলুমবাজ সরকার হলে মুশকিল হয়। ন্যায়বিচারক হলে দেশে অশান্তি থাকে না। মহ্বত থাকলে সব কাজ সহজ লাগবে। রমজান মাসেও  কোনো শিশু সেফ না। আল্লাহ শিশুকে জান্নাত নসিব করুন। 

খতিব বলেন, এই যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো এটার জন্য পাষণ্ডদের বায়তুল মোকাররমের সামনে লক্ষ জনতার সামনে ফাঁসি দেয়া হোক। ইসলামেও তাই বলা আছে।  দেখবেন এক বছরের মধ্যে ধর্ষণ কমে আসবে। তদন্তের বিচারে  গেলে হবে না। এদেশে তদন্ত শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় না। এখানেও তদন্ত? চোখে দেখা জিনিস তদন্ত কিসের। 

ওদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার খুতবায় মাওলানা আব্দুল মালেক বলেছেন, ধর্ষণকারী ব্যক্তি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। ধর্ষণ রোধ কীভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। মাগুরায়  লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে গেছে। এটা পাশবিকতার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। ধর্ষণকারীরা আকৃতিতে মানুষ কিন্তু এরা আসলে মানুষ না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সমাজকে এ ধরনের লোকদের থেকে হেফাজত করুক। এদের থেকে সমাজ পবিত্র হওয়া জরুরি। বেহাইয়াপনা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে তা না হলে ধীরে ধীরে মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে এরকম পাশবিকতায় লিপ্ত হবে। ধর্ষণ, ট্রান্সজেন্ডার এগুলো বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য ইসলাম যা যা নিষেধ করেছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এসময়  সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলে হবে না সকল ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

নারীদের সালাত আদায় করার নিয়ম সমপর্কে তিনি বলেন, নারীদের ঘরে খাস কামরায় সালাত আদায় করতে হবে। ঘরের একটা রুম নারীদের ইবাদতের জন্য রাখতে হবে; এ রুম নারীদের জন্য মসজিদ। নারীদের জন্য ঘরের অন্ধকার কামরা মসজিদের চেয়ে উত্তম। তবে ইসলাম কিছু বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে নারীদের বাইরে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছে। যারা হারাম পোশাক পরিধান করে, হারাম খাবার খায় ও আত্মীয়তার সমপর্ক ক্ষুণ্ন করে তাদের দোয়া কবুল হয় না। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ভেতরে বাইরে যত ষড়যন্ত্র হচ্ছে সব ষড়যন্ত্র থেকে আল্লাহ হেফাজত করুক। ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে সব মুসলিম দেশ আজ নীরব। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুধু নিন্দা প্রকাশ করছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আল্লাহতায়ালা মুসলিম শাসকদের মধ্যে মানবতাবোধ দান করুক। 

তিনি আরও  বলেন, রমজান মাসে ইমান, আমল ও তাকওয়া দৃঢ় হয়। এ মাসে মুমিনরা পুরো বছরের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু মুনাফেকদের অবস্থা বিপরীত কারণ তারা এ মাসকে মূল্যায়ন করতে জানে না। রমজানে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা ঋণ পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করেন। খুতবায় তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত হচ্ছে মুমিনদের জন্য পরীক্ষা। অভাব অনটনের মধ্যে মুমিন দান করেন কিনা তা আল্লাহ টেস্ট করেন। অনেক সময় যাকাত নেয়ার জন্য বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে আসে অনেকে না বুঝে তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে দেন এটা ঠিক না। যারা গরিব ও অভাবী তাদেরকে খুঁজে খুঁজে সরাসরি তাদের হাতে যাকাতের টাকা দিতে হবে।  

কাওরানবাজার আম্বর শাহ (রহ.) শাহী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল ইসলাম যাকাত কি, যাকাতের গুরুত্ব, যাকাতের ফজিলত, কাকে দেয়া যাবে, কাকে দেয়া যাবে না, যাকাত কাদের উপর ফরজ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। জুমার খুতবায় তিনি বলেন, আটটি খাতে দেয়া যাবে যাকাত। খাতগুলো হলো- নিঃস্ব অসহায় ব্যক্তিকে, মিসকিন ও অভাবগ্রস্তদের, যাকাত উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে, ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে, গোলামকে আজাদ করার লক্ষ্যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে এবং মুজাহিদ ও মুসাফির ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে। খুতবায় তিনি ৫ খাতে যাকাত না  দেয়ার কথা বলেন। এরমধ্যে মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও তাদের উপরস্থ ব্যক্তিবর্গ, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে, নাস্তিক, অমুসলিম ও কাদিয়ানিদের, এবং মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ইত্যাদিতে। 

মাওলানা সাইফুল ইসলাম যাকাতের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যাকাত আদায়ে অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেন, যাকাত দেন,  তাদের দান শস্য দানার মতো। শস্য দানা রোপণ করলে একটি গাছ বের হয়, গাছ থেকে সাতটি শীষ হয়, প্রতিটি শীষ থেকে একশ’টি করে দানা বের হয়। তার মানে ১টি বীজ রোপণ করে সাতশ’টি দানা পেলাম। যাকাতের দানও ঠিক এমনই।  আল্লাহ বলেন, “হে রাসুল আপনি তাদের সম্পত্তি থেকে যাকাত আদায় করুন, আর তাদের সম্পত্তিগুলোকে পবিত্র করে দিন। আর তাদের জন্য দোয়া করুন।” তিনি বলেন, “মহানবী (সা.) বলেছেন যারা যাকাত দেবে না, মৃত্যুর পর তাদের সম্পদগুলোকে বিষধর সাপ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সেই সাপগুলো তাদের কামড়াতে থাকবে। আর বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, মাল।

আম্বর শাহ (র.) জামে মসজিদের খতিব বলেন, এই যে একটি শিশু বাচ্চা ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুবরণ করলো, এতে আমাদের সকলেরই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এত পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়েছে যে আমরা এখন ধর্ষকের ফাঁসি চাচ্ছি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার শাস্তি দাবি করছি। তার মানে এটা এমনই নিন্দনীয় কাজ আমরা কেউ-ই এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি না। এ দেশের একজন ধর্ষককে জনসম্মুখে, মিডিয়ার সামনে যদি শাস্তি দিতো, লক্ষ লক্ষ ধর্ষক এর থেকে শিক্ষা নিতো, সতর্ক হয়ে যেতো। লক্ষ কোটি নারীর ইজ্জত ও সম্মান রক্ষা হতো। প্রচলিত আইন অনুযায়ী ধর্ষক যদি পুনরায় বের হয় হয়ে আসে কারাগার থেকে,  সে পুনরায় আরও হিংস্র হয়ে যেতে পারে, আরও বেশি করে অপকর্ম করতে পারে। ধর্ষকের শাস্তি কেবলমাত্র মৃত্যুদণ্ডই আমরা চাই।

পাঠকের মতামত

এটা ইসলামি প্রজাতন্ত্রী দেশ নয়, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি রাষ্ট্রীয় নিয়মে হওয়া উচিৎ।

মিলন আজাদ
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ২:৪৬ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status