ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগী অন্যতম দেশগুলোকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর কার্যাদেশ আসায় পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এ বাজারে ৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এ রপ্তানি গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির এ হার চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে ৭.২০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৯.৪৬ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৬.৮০ বিলিয়ন ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি ২৪.২২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১০.৬৪ শতাংশ বেশি।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, কয়েকটি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে  যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির মন্দাভাব কাটিয়ে উঠছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ট্রাম্প সরকার চীন ও মেক্সিকোর ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের বাজারের দিকে ঝুঁকেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর গত আগস্টের পর থেকে টানা তিন-চার মাস যে চরম অস্থিরতা চলেছে গার্মেন্টস খাতে, সে অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করছে শিল্প এলাকায়। ফলে কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারসহ বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

সূত্র মতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এ রপ্তানি গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির এ হার চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৭২ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.৯০ শতাংশ বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পাঁচ নম্বরে রয়েছে। দেশটি থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩.৬৪ শতাংশ বেশি।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করেছে ৪১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের ৪১.৭০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া মেক্সিকোর মাত্র ১.২৬ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ২৯.৯৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭.৫০ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫.৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া হন্ডুরাসের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ২৬.১০ (-২৬.১০%) শতাংশ।

অটেক্সার হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে তারা আমদানি করেছিল ৬০৩ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে সাড়ে ১৯ শতাংশ।

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ বাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সাল শেষে বড় প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারায় ফেরে। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় ০.৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমেছিল। 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের জন্য সুবিধা তৈরি হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় এ বাজার নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনার কথা বলেন বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ সরাবে। ফলে বাড়তি ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের জন্য। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। বিনিয়োগের সেই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। অবশ্য বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রভাব।

বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রভাব। তবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বায়ার বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে। যারা আগে চীন থেকে আমদানি করতো। 
 

পাঠকের মতামত

A very good news for Bangladesh

Jhinuk
১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ২:৪০ অপরাহ্ন

Thank to DR Ynes

Nesar
১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

ঞ অরাজকতা সত্ত্বেও যদি রপ্তানী বাড়ে - make sure শ্রমিকদের যেন বেতনের দাবীতে হরতাল না করতে হয়

জনতার আদালত
১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

Alhumdulillah

Akash Batash
১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ২:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status