ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মেগা প্রকল্পে বাড়তি ব্যয়-সময় চাপ বাড়বে অর্থনীতিতে

নূরে আলম জিকু
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবার
mzamin

সরকারের নেয়া অগ্রাধিকার ভিত্তিক বড় প্রকল্পে দফায় দফায় বাড়ছে সময় ও ব্যয়। নানা কারণে এই ব্যয় এবং সময় বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বড় প্রকল্পের সময়, ব্যপ্তি ও ব্যয় বাড়ার চাপ পড়বে অর্থনীতিতে। সময় বাড়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের সুফল মিলছে না। আর বাড়তি ব্যয়ের প্রভাব পড়ছে বাজেট ও ঋণ পরিশোধে। এখন পর্যন্ত নেয়া প্রায় সবক’টি বড় প্রকল্পের নকশা পবিরর্তন হয়েছে একাধিকবার। ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। বাড়ানো হয়েছে ব্যয়। বর্তমানে দেশের আর্থিক খাত সংকটে থাকলেও এখনো অনেক প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।  অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেগা প্রকল্প সংশোধনের নামে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ায় দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে বড় ধাক্কা আসবে। দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে মেগা প্রকল্প নির্মাণের আগে প্রকল্পের নকশা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই শেষ করতে হবে। সেইসঙ্গে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যথায় ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের বোঝাও বাড়বে।  

অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার দশটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত করেছে। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে গত ২৫শে জুন উদ্বোধন করা হয়েছে পদ্মা সেতু। অন্যগুলো হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সবক’টি প্রকল্পেই একাধিকবার বেড়েছে আর্থিক ব্যয় ও সময়।  পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এখন প্রায় ১ হাজার ৮০০টি প্রকল্প চলমান। এরমধ্যে ১০টি প্রকল্পকে সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাছাই করে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এসব প্রকল্পকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। এখন সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে, পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নেয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে রাশিয়া ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

 বাকি টাকা সরকার বহন করছে।  মেট্রোরেল প্রকল্প: বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। যার অধীনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার এমআরটি-৬ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৬ সালের ২৬শে জুন এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত মাসে এমআরটি লাইন-৬ এ রুট মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়ানোর অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের ফলে মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় বাড়লো ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং নির্মাণ কাজ শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হলো দেড় বছর। এই অংশের মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে এখন পর্যন্ত এর মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধাপে ধাপে প্রকল্পটি সংশোধিত না হলে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হতো। প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল প্রকল্পে নতুন করে মোট খরচ বাড়ছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বা ৫২.২৫ শতাংশ। 

আর প্রকল্পের জমির জন্য অধিগ্রহণ ও ক্রয় বাবদ রাষ্ট্রীয় ১১টি সংস্থাকে ৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে ৪টি স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৮৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নতুন করে ব্যয় হবে। ৪টি এলাকায় ফুটপাথ নির্মাণ ৭৫ কোটি এবং পরামর্শক খাতে বাড়তি ৫৭৬ কোটি টাকা নতুন করে লাগছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হলো ৯২ শতাংশ।  প্রথম রুট এমআরটি-৬ ছাড়াও আরও ৫টি রুটে মেট্রোরেলের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ১২৯ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন স্থাপন করতে চায় সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৬১ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল। বঙ্গবন্ধু টানেল: মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ একটি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ হচ্ছে এটি। চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেইসঙ্গে টানেলটি খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে এই  প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পের শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যদিও ঋণচুক্তি সম্পাদনে দেরি হওয়ায় টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু করতে আরও দুই বছর লেগে যায়। 

আর জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভ্যাট ও কর পরিশোধের হার বৃদ্ধি, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২০ সালে টানেলটির নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সবশেষ গত বছর জরুরি ভিত্তিতে ৪৯৪ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশেষ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। পাশাপাশি মেয়াদ বাড়ানো হয় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত জুন পর্যন্ত মূল টানেল এবং অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সবমিলিয়ে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ: ২০১৬ সালের মে মাসে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে নকশা চূড়ান্ত করার সময় বেশকিছু বিষয় পরিবর্তন আনতে হয়। এতে ২০১৮ সালে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় এক দফা বাড়ানো হয়েছে। সে সময় ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথ নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও প্রকল্পটির ব্যয় আরেক দফা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে এক হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এ ব্যয় করা হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।  মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র: ২০১৪ সালের আগস্টে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। 

তখনকার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তখন বলা হয়েছে- কয়লা খালাসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনায় ছিল ত্রুটি। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিতরণ উপ-কেন্দ্রের সক্ষমতাও কম ছিল। পরবর্তীতে পূর্বের পরিকল্পনা সংশোধন করা হচ্ছে। আর এ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫২ হাজার ৩৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ১৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প: রেলের মেগা প্রকল্পগুলোর সবচেয়ে ব্যয় বেশি বেড়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে। ২০১০ সালে কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। সে সময় ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তা, রুট ও নকশায় পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে প্রকল্পটির বড় ধরনের সংশোধন করা হয়। তখন এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। 

ততদিনে প্রকল্পে ব্যয় আবারো বেড়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় পৌঁছায়। অর্থাৎ এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে মিয়ানমারের অনুমতি না পাওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে না।  বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু: ২০২০ সালের অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দৈনিক ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। সেতুটিতে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চলতে না পারায় এবং সিঙ্গেল-ট্র্যাক রেলপথ হওয়ায় সেতু পার হতে অধিক সময় ব্যয় হয়। পাশাপাশি ট্রেনগুলো শিডিউল বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়ে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলা একটি ট্রেন সেতুটির পূর্ব পাশের স্টেশন থেকে পশ্চিম পাশের স্টেশনে পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নেয়। এছাড়াও সেতুটিতে ওজন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ভারী পণ্যবাহী ট্রেন চলতে পারে না। এজন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশেই বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ৬ই ডিসেম্বরে সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। তখন এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণ ব্যয় আরও ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে যায়। যা এখন ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। 

সংশোধিত প্রকল্পে সময়সীমা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) উদ্যোগে গত মে মাসে প্রকল্প এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করে। পরে আইএমইডি প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বেশকিছু দুর্বল দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়। ইতিমধ্যে এক দফা ডিপিপি সংশোধন করায় ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পর প্রকল্পের ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে যায়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত  রেল সেতুর ৪২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আইএমইডি বলছে, ডিপিপিতে প্রথমে প্রকল্পটি ৯০ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২৪ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  জয়দেবপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে দু’টি পৃথক প্রকল্প: জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চার দফা বৃদ্ধির পর ২০২০ সালের জুনে এ ব্যয় দাঁড়ায় ছয় হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

 তবে পঞ্চম দফা প্রকল্পটি সংশোধন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এ সময় মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ১২১ দশমিক ২১ শতাংশ। এদিকে এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক ১৯০ কিলোমিটার চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। সে সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি ১ লাখ টাকা। তবে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে ৪ হাজার ৪৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪০ শতাংশ। উভয় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে পরিকল্পনার ত্রুটি সংশোধনে। অর্থনীতিবিদ  ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মানবজমিনকে বলেন, মেগা প্রকল্পে বাজেটের বড় একটা অংশ ব্যয় হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আগামী ২০২৪-২৬ সালের মধ্যে এসব মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কা আসবে। দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসায় অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলোয় মোট বাজেটের প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। 

তিনি বলেন, সরকার ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রায় ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে ১১টিই সড়ক ও যোগাযোগ অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। ৪টি রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এবং ২টি করে প্রকল্প রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের। আলোচিত ২০টি প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি দশকে সবক’টি শেষ করা সম্ভব হবে না। এছাড়া প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে চাপ পড়ছে। এতে প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। ফলে প্রকল্প থেকে যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা তার সম্ভবনাও কমে যাচ্ছে। এতে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ঋণ শোধ করতে গেলে অনেক বেশি অর্থ খরচ হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status