প্রথম পাতা
বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত নসরুল হামিদের
স্টাফ রিপোর্টার
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবার
বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার সময় এসেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই ইঙ্গিত দেন। ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ভাবনার কথা গত সপ্তাহ থেকেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ-জ্বালানি বিষয়ে এফবিসিসিআই’র আলোচনায় প্রয়োজনে দাম বাড়িয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি উঠেছিল কয়েকজন ব্যবসায়ীর কণ্ঠে। তার পরদিনই প্রতিমন্ত্রীর কথায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। গত ৫ই জুন গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গত মে মাসে, যার ওপর এ মাসেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের প্রাইসের অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপারে আমরা অপেক্ষায় আছি। গ্যাসের ব্যাপারে আমরা আরেকটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে চাচ্ছি। তেলেও একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে। তেলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী, সেই জায়গায় আমাদের খুব চিন্তাভাবনা করতে হবে। এটার সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ওপর। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন এগুলো যেন একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। দেশ ও দশের কথা চিন্তা করে আমরা একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যাবো। বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিতভাবে জ্বালানির দাম সমন্বয় করার পক্ষে মত দিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘যদি বাড়তির দিকে থাকে, তবে বাড়তি, যদি কমতির দিকে থাকে তাহলে কমতির দিকে।
এখন যেহেতু বাড়তির দিকে, তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ও বিশ্বের অবস্থা বিবেচনায় একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়া উচিত। যদি বিশ্ববাজারে দাম কমে আসে, আমরাও চেষ্টা করবো সেই অনুযায়ী দাম কমাতে।’ কিছুদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে দামটা বাড়িয়েছি সেটা গত বছরের ডিসেম্বরের পরিস্থিতি বিবেচনায়। সে কারণে আমি মনে করি গ্যাসে আমাদের আরেকটা অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়া উচিত। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৭০ ডলারের ওপরে উঠে গেলেই আমরা লোকসানের মধ্যে পড়ে যাই।’ ইতিমধ্যে বিপিসি নিজের থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো লোকসান দিয়েছে। তাই আমি মনে করি বিশ্ব বাজারের সঙ্গে একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট থাকা উচিত। না হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই এভাবে সমন্বয় করতে হচ্ছে মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, আমরাই কেবল বসে আছি। তেলের মার্কেটে এখন পুরোপুরি লস দেয়া হচ্ছে। পাশের দেশে তেলের দাম বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন হচ্ছে। ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে জনজীবনে যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী; দাম বাড়ালেও কৃষি খাতে দাম অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত দেন।
ডিজেলের ক্ষেত্রে কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি তেল ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। খুব বেশি পরিবর্তন হবে না বলে আমরা হিসাব করে দেখেছি। এজন্য আমরা বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করার চিন্তা করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি ডিজেলের দাম বাড়লে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ে ১ টাকা থেকে ২ টাকা। বিষয়টা যদি ওই রকমভাবে সমাধান করা যায়, অবশ্যই অ্যাডজাস্টমেন্ট করা উচিত। দেশীয় চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে আমদানি বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান নসরুল হামিদ। আবার দেশীয় উৎপাদনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য পেয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার কথাও বলেন নসরুল হামিদ। গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যাবো। যারা আমাদের কাছে প্রস্তাব করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। যারা এখনো প্রস্তাব করেনি, তাদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। বিশেষ করে কাতার এখনো প্রস্তাব পাঠায়নি। তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা এবং চুক্তিতে যেতে হবে। এর বাইরে গ্যাসকূপ খননে বাপেক্সসহ বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজে লাগাবো। এজন্য আমরা টেন্ডার করবো।