বিবিধ
শূন্য থেকে যেভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন হৃদয়
স্টাফ রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

দারিদ্র্যতাকে জয় করে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন মো. হৃদয় হাসান। কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। শেরপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। হৃদয় বাবার সামান্য কৃষিকাজের আয়, সংসারের অভাব-অনটন আর মায়ের আত্মত্যাগ এসব নিয়েই তার শৈশব কেটেছে। তবে দারিদ্র্যতাকে কখনোই থামিয়ে রাখতে পারেনি। মা-বাবা শত কষ্টের মাঝেও ছেলেকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন, আর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন হৃদয়।
১৯৯৫ সালে জন্ম নেয়া হৃদয় ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু করার। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে সেটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এসএসসি পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার খরচ চালাতে শহরে চলে আসেন। সেখানেই শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ একদিকে চাকরি, অন্যদিকে পড়ালেখা করা। ২০১৩ সালে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ধাপে ধাপে কোচিং সেন্টার, এমনকি স্কুল ব্যবসাতেও নামেন। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হন।
২০২১ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন—নিজের জন্য কিছু করতে হবে। শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে হাতে থাকা সামান্য কিছু টাকা নিয়ে শুরু করেন Grammo Food—নামক নিরাপদ, অর্গানিক খাদ্য ব্যবসা। প্রথমদিকে প্রতিযোগিতা ছিল তীব্র, বাজারে পরিচিতি ছিল না, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাও কম ছিল। কিন্তু তিনি দমে যাননি।
নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ট্রেনিং নেন। ডিজিটাল মার্কেটিং শেখেন। নতুন নতুন কৌশল খুঁজতে থাকেন। কঠোর পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান। হৃদয় হাসানের কঠোর পরিশ্রমে মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে Grammo Food নিরাপদ ও অর্গানিক ফুড ব্র্যান্ড হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে। যেখানে শুরুতে একা ছিলেন, আজ সেখানে ৪৫ জন কর্মী কাজ করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী গ্র্যাজুয়েট থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ কোম্পানির টিম লিডাররা প্রতিষ্ঠানটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কৃষকদের থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে তা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে Grammo Food
হৃদয় হাসান বিশ্বাস করেন, ব্যর্থতা মানেই হেরে যাওয়া নয়। বরং প্রতিটি ব্যর্থতা একটি নতুন শুরুর সুযোগ। তিনি বলেন, আমি যখন সবকিছু হারিয়েছিলাম, যখন কেউ পাশে ছিল না, তখন একটাই জিনিস মনে হয়েছে—আমার স্বপ্নের কাছে আমি হেরে যেতে পারবো না। এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুধু তার একার নয়, বরং প্রতিটি তরুণ-তরুণীর, যারা নিজেদের জন্য কিছু করতে চায়, যারা ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েনি।
হৃদয় হাসান গ্রামের কৃষকদের বিভিন্ন পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চান। হাজারো মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং সারাদেশে নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তুলতে চান।ভোক্তাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার ন্যায্য দামে সরবরাহ করা তার উদ্দেশ্য।