ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

রেশনসহ ৯ সুবিধা চান ডিসিরা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বার্তা দিয়েছেন সরকার প্রধান। কারও ধমক না শুনে নির্ভয়ে কাজ করতে এবার ডিসি সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাজার নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভোটের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন সাজানোর বার্তা দেয়া হয়েছে সরকারের তরফে। 

অন্যদিকে রেশন, চিকিৎসা-ভাতা ও গৃহ ঋণ বাড়ানোসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ৯টি সুবিধা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত ২১টি প্রস্তাবের মধ্যে ৯ প্রস্তাবেই তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও দিয়েছেন ডিসিরা। রেশন হিসেবে চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দেয়ার কথা বলেছেন তারা।

সরকারের নীতিনির্ধারক এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য সাধারণত প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ডিসি সম্মেলন। রোববার থেকে শুরু হয়ে গতকাল ডিসি সম্মেলনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কার্য-অধিবেশন শেষ হয়। তিন দিনের ডিসি সম্মেলন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করেন ড. ইউনূস। সম্মেলনে ৩৫৪টি প্রস্তাব উঠে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন চলে।

সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সরকারের: কারও ধমক না শুনে নির্ভয়ে কাজ করতে এবার ডিসি সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।  জেলা প্রশাসকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ সরকারের আমলে কারও রক্তচক্ষু বা ধমকের কারণে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই। কারও ধমক শুনবেন না। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজের মতো করে যেটা আইন, যেটা দেশের জন্য করা দরকার, সেটা করতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আইন করে দিয়েছি, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছায়নি। অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি। এই যে দূরত্ব এটা যেন না থাকে।  অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, কারও রক্ত চক্ষুর কারণে, কারও ধমকের কারণে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নাই। অন্তত এই (অন্তর্বর্তী সরকারের) সময়টুকুতে। 

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল: পাসপোর্ট দেয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধান বাতিল করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিক অধিকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 
স্থানীয় পর্যায়ে আগের সরকারের নেয়া জনহিতকর প্রকল্পগুলো শেষ করতে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন  শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিজ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় আসন্ন পবিত্র রমজান ও গরম মৌসুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার উপরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, যেসব লাইনে বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে যাবে সেখানে লোডশেডিং করবো। বাধ্য হয়ে যদি লোডশেডিং করতে হয়, তাহলে আগেই জানিয়ে দেবো। শহর ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। কেপিআই বাদ দিয়ে সমানভাবে লোডশেডিং করবো। লোডশেডিং শুরু হলে আমার বাসা থেকে শুরু হবে।

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে তিনটি শ্রেণিতে (ক্যাটাগরি) ভাগ করে সরকারি সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।  জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এক কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ডিসিরা আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছেন। আমরা ডিসিদের বলেছি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) পুনর্গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করা হবে। সেখান থেকে অমুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গতকাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষদিনে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের  আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইনে যা আছে, নীতিমালায় যা আছে, সংবিধানে যা আছে, সেটা মেনে চললে জনগণের সেবা আর কল্যাণ দেয়া ছাড়া ডিসিদের আর কোনো কাজই নেই। সুতরাং আমাদের শুধু একটা কথাই যে, আপনি আইন অনুযায়ী চলেন, বিবেক মতো চলেন।

সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব ডিসিদের: যুবসমাজের জন্য সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। মঙ্গলবার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সংক্রান্ত অধিবেশনে এ প্রস্তাব দেন তারা। অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আব্দুল হাফিজ বলেন, ডিসিরা নিজ নিজ জেলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে চান। রিমোট জায়গায় বা চরাঞ্চলে যেখানে হয়তো বেশি পরিমাণ ফোর্স দরকার বা লজিস্টিক নিয়ে যেতে হবে, এই ধরনের এলাকায় তারা অভিযান পরিচালনা করতে চান। সে সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল। আব্দুল হাফিজ বলেন, জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। তাদের কাছে জনগণের চাহিদা মূলত তিনটি। এসব প্রত্যাশা আকাশচুম্বী না- যা পূরণ করা যাবে না। তারা নিরাপত্তা চায়, রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চায়। চলাফেরা করতে চায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্র কিনতে চায় এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কোনো ধরনের হয়রানি-ঝামেলা ছাড়াই সরকারি সেবাগুলো পেতে চায়।

ডিসিদের উদ্দেশ্যে যা বললেন প্রধান বিচারপতি: আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে মূল সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন ডিসিরা। প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা জনগণের আস্থা জোরদার করে। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের আইনের শাসন সমুন্নত রাখে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অংশগ্রহণকারী ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা। এবারের ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট ৩৪টি কার্য-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হয় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেওয়াজ থাকলেও এবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ রাখা হয়নি। 

নিজেদের জন্য ৯ সুবিধার প্রস্তাব ডিসিদের: চিকিৎসা-ভাতা ও গৃহ ঋণ বাড়ানোসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ৯টি সুবিধা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)’রা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত ২১টি প্রস্তাবের মধ্যে ৯ প্রস্তাবেই তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রদেয় গৃহনির্মাণ ঋণ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন ও ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ময়মনসিংহের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তার যুক্তি ১. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য গ্রেড ভেদে ৩০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংক বা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স করপোরেশনের মাধ্যমে ঋণ পেয়ে থাকেন। ২. ঋণ গ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঋণ গ্রহণের পর চাকরির বয়স কম হলে তাকে অধিক হারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়, ফলে তার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। ৩. ঋণের কিস্তি কর্তন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রদেয় সরকারি বাড়িভাড়া ভাতা থেকে বেশি হওয়ায় ওই কর্মকর্তার জীবিকা নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। ৪. ঋণগ্রহণকারীর কিস্তির টাকা তাকে সরকার প্রদেয় মাসিক বাড়িভাড়া থেকে কর্তন করা যেতে পারে। এভাবে কর্তনকৃত টাকা দিয়ে সম্পূর্ণ ঋণ ও মুনাফা পরিশোধ না হলে পিআরএলের সময় গ্র্যাচুইটি বা পেনশন থেকে কর্তন করা। ৫. বর্তমানে গৃহ ঋণ বাবদ সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়; যা মানসম্মত গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে খুবই কম। সুতরাং গৃহনির্মাণ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহ ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করা যেতে পারে।

সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানের জন্য প্রদেয় ‘শিক্ষা-সহায়ক ভাতা’ দুই হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাবও করেছেন ময়মনসিংহের ডিসি। তার যুক্তি হচ্ছে, সব সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে এবং অনধিক দুই সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পরিমাণ শিক্ষা-সহায়ক ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ভাতা বর্তমান সময়ে খুবই কম। ফলে এ ভাতা বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা-ভাতা আরও বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন ময়মনসিংহের ডিসি। তার ভাষ্য, চিকিৎসা ব্যয় ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে প্রদেয় ভাতা খুবই অপ্রতুল। সুতরাং চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ ভাতাও সমন্বয় করা প্রয়োজন।

প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য রেশন সুবিধা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং গোপালগঞ্জ ও জয়পুরহাটের ডিসি। তাদের যুক্তি ১. প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন বাহিনীর মতো দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করেন। ২. দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতো বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পেলেও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ সুবিধা নেই। ৩. রেশন সুবিধা প্রদান করা হলে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বাড়বে এবং তারা অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন।

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন সাতক্ষীরার ডিসি। তিনি প্রস্তাবের পক্ষে বলেছেন ১. একজন সরকারি কর্মচারী তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা কার্যভারভাতা পান, যা খুবই কম। ২. যেহেতু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করেন, সেহেতু দায়িত্বশীলতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা ও প্রণোদনা বৃদ্ধিতে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ভাতা মূল বেতনের ৩০ শতাংশ করার পক্ষেও তিনি মত দেন।

মাঠ প্রশাসনে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভাতা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জের ডিসি। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে পার্বত্য জেলাগুলোয় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক পাহাড়ি ভাতা যৌক্তিক হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিসিদের ভাষ্য, ১. পার্বত্য জেলাগুলোর দুর্গম এলাকার ঝুঁকি বিবেচনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাহাড়ি ভাতা হিসেবে প্রদান করা হলে তারা পার্বত্য এলাকার পদায়িত হয়ে চাকরি করতে অনুপ্রাণিত হবেন। ২. পার্বত্যাঞ্চলের শূন্য পদগুলোয় দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং ৩. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির প্রবণতা কমবে। বর্তমানে ডিসি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের বদলি ও পদায়নের কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে মন্ত্রণালয়। পরে বিভাগীয় কমিশনাররা ইউএনওদের বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন করেন। এখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বদলি ও পদায়নের কাজটিও বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। আর স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালককে পদায়নের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) অধীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি প্রশিক্ষণ কোর্স যথাক্রমে বনিয়াদি (ফাউন্ডেশন) কোর্স, সার্ভে সেটেলমেন্ট কোর্স এবং আইন-প্রশাসন কোর্সকে সমন্বয় করে এক বছর মেয়াদি কোর্স করার প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। এ ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপ্ত হওয়ার পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

১১তম থেকে ২০তম গ্রেডে কর্মরত কর্মচারীদের মাসিক টিফিন ভাতা ২০০ টাকার পরিবর্তে দুই হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবনে বাবুর্চির পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ইউএনওদের ২৪ ঘণ্টা কর্মস্থলে থাকতে হয়।
সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে কেপিআইভুক্ত (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) করা ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক। জনপ্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন একজন জেলা প্রশাসক।  জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে নবম গ্রেডের একাধিক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক।

পাঠকের মতামত

এ জগতে হায়, সেই বেশী চায়, আছে যার ভুরি ভুরি। রাজার হস্ত করে প্রশস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।

Muhammad Hussain
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

ডিসি থাকা অবস্থা কেউ দুর্নীতি করলে শাস্তি কি হবে এটাও জানার দরকার ছিল। আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে সরকারিভাবে দাবি জানাই।

Towfiq uddin Ahmed
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮:৩১ অপরাহ্ন

They came up with a list of demands for themselves but did not come up with a list of services they would give to the public.

Nam Nai
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮:২৯ অপরাহ্ন

যখনই এরকম মিটিং হয় তখনি তাদের এটা চাই ওটা চাই। আজ পর্যন্ত কোনদিন এর বাইরে কিছু বলতে শুনলামনা। এই মেধাহীন মেধাবীদের থেকে আসলে বাংলাদেশ কিছু পাবেনা। এরা যত দ্রুত দেশের ঘাড় থেকে নিষ্কাশিত হবে, তত দ্রুত আমাদের শাপমোচন হবে।

Siddq
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৫:২৮ অপরাহ্ন

এগুলো অভাবে নয়, স্বভাবের সমস্যা। অতএব কেবলমাত্র মাটিই এদের পেট ভরাতে পারবে।

Jahangir Hossain
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

ওদেরকে সরকারী ভাবে বন্দোবস্ত করে ২য় বিবাহের সুযোগ করে দেন। ওটা আর বাকী থাকবে কেন। তা হলে অফিসের সাথে বিশেষ কামরার খরচ টা সরকারের সাশ্রয় হবে। তারা জনস্বার্থে আরো অধিকতর মনোযোগী হবে।

মোহাম্মদ এ কোরায়শী
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:১৪ অপরাহ্ন

আফসোস আমাদের, এতো সুযোগ সুবিধা পাবার পরেও এদের আরও সুবিধা লাগবে! শুধু আছে নিজেদের সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যাই সেই ধান্দায়। এই যুলুমের বিচারও একদিন করবে একজন। অপেক্ষা করেন মহাশয়েরা।

Ashiq
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

DC দের আমরা প্রতিপক্ষ ভাবছি কেন? তারা আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা আমাদেরই সন্তান এবং taxpayers, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। আগে পুলিশের সেটাইসহ নিম্ন পর্যায়ে রেশন ব্যবস্থা ছিল, এখন IGP ও রেশন পান। অপরদিকে দুদকসহ সরকারের কয়েকটি সংস্থা রেশন পেতেন না, কিন্তু এখন পাচ্ছেন। সার্বিক বিষয়সমূহ তারা সরকারের দৃষ্টিগোচরে আনতে প্রস্তাবগুলো পেশ করেছেন।

ড. জাহাঙ্গীর আলম
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

ভালো হয়, ডিসিদের ভিজিএফ কার্ড চালু করে দিন! কারো হাই নাই! সবার শুধু চাই আর চাই! সবাই আছে যার যার ধান্দা নিয়ে! দেশের মানুষের বাঁচা মরা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই!

ahshan habib
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

সব সুবিধা তো আপনারাই নিচ্ছেন। সাধারণ জনগন শুধু শোষিত-ই হবে, তাই না!! আমি সরকারকে অনুরোধ করবো, জনগণের সমস্যা জানার জন্য প্রতিটি গ্রাম/মহল্লা/জেলাতে অভিযোগ বক্স বসিয়ে (Grievance box) সেই অনুযায়ী সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সপ্তাহে অন্তত ১ বার জন প্রতিনিধিদের (ইউনিয়নের মেম্বার থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত) জনগণের সম্মুখীন হয়ে জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। আপাতত এগুলো দিয়েই শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে আরো জন বান্ধব পদ্ধতি বের করে দেশ এবং জাতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসুন।

Russel
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

তাদের আবদারের শেষ নাই এরা দেশের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেছে তারপর ও এখন বলছে তাদের রেশন ভাতা দিতে হবে মনে হয় এই সরকার এমন একটা সরকার যার কাজ হচ্ছে আসেন আবদার করেন আর নিয়ে যান গত কয়েক মাসে শুধু সরকারি কর্মকর্তা দের আবদার আন্দোলন দাবি শুনতেছি কিন্ত এই দেশে বিরাট একটা জনগোষ্ঠীর কোন আবদার নাই মনে হয় তারা শুধু সরকার কে দিবে ভ্যাট কর, আর সরকার তার দুনীতি গস্হ প্রশাসন আবদার পূরণ করবে, এদের যে ভাব অহংকার তাদেরকে স্যার না বললে তাদের গায়ে পশকা পড়ে

রিয়াদ হোসেন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

দেন, ওরা যা চায় দিয়ে দেন। ওরা আমাদের দেশের সবচেয় মেধাবী শ্রেণি। ওরা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আমার সোনার ছেলেরা খেলেই আমাদের খাওয়া।ওরা ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি।

আহসানুল করিম
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

ভালো হয়, ডিসিদের ভিজিএফ কার্ড চালু করে দিন! কারো হাই নাই! সবার শুধু চাই আর চাই! সবাই আছে যার যার ধান্দা নিয়ে! দেশের মানুষের বাঁচা মরা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই!

Sakhawat
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি জনগনকে কিভাবে তাঁরা বাড়তি সুবিধা বিশেষ করে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন তার সুস্পষ্ট সুপারিশ দেয়ার দরকার ছিল। দৈনন্দিন সেবা দ্রুততার সাথে সম্পাদনের বিধিব্যবস্থার বর্নণা আমলাদের বক্তব্যে দেখতে চাই। ডিসি সাহেব বা অন্যান্য আমলা হুজুরদের আশেপাশে জনগণ প্রত্যহ ভুগবে, ১ ঘন্টার কাজ নিয়ে মাসের পর মাস ঘুবে আর হুজুরদের সেদিকে খেয়াল থাকবেনা তা হতে পারেনা।

ফেরারি বিবেক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬:১৪ পূর্বাহ্ন

সরকার চায় সব নাগরিকদের নিরাপত্তায় সজাগ। আর ডিসিরা চায় তাদের সুযোগ সুবিধা। ডিসিসহ সরকারী কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা প্রকাশের দাবী জানাচ্ছি। দেশের জনগণের জানবার অধিকার আছে তারা কি সযোগ সুবিধা পায়।

জামশেদ পাটোয়ারী
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

These people have never-ending appetite.

Nam Nai
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৪:২৭ পূর্বাহ্ন

ডিসিদের অফিসে আসতে হবে পকেট ছাড়া শার্ট প্যান্ট পরে।

Manik
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১:৪৪ পূর্বাহ্ন

রেশন আর মহার্ঘ ভাতা, দুটো তো এক সাথে চলতে পারে না। উনাদের মহার্ঘ ভাতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী, এই বেসিক রিসার্চটা আজ পর্যন্ত কেউ করল না। আশ্চর্য!

A. Zaman
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status