প্রথম পাতা
উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলা
স্বামীকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে চিৎকার করছিলেন স্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
সোমবার রাত ৯টা। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোড। বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন এক দম্পতি। পথিমধ্যে কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে রিকশা আরোহীদের ঝামেলা দেখে সমঝোতার জন্য তারা এগিয়ে যান। যাদের সঙ্গে কিশোরদের ঝামেলা ছিল তারা সেখান থেকে দ্রুতই চলে যান। কিন্তু ওই কিশোররা উল্টো ওই দম্পতির সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। কথা-কাটাকাটি বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কিশোররা রামদা দিয়ে কোপাতে থাকেন তাদেরকে। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখে স্বামীর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান স্ত্রী। কিন্তু রেহাই মেলেনি। নৃশংসভাবে তিনিসহ তার স্বামীকে কোপান কিশোররা। পরে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে ফুটে এসেছে কিশোরদের নির্মমতার চিত্র। বাঁচার জন্য চিৎকার করেও রেহাই পাননি ভুক্তভোগী দম্পতি। পরে কিশোরদের রামদার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর তাদের চিৎকারে স্থানীয় টহল পুলিশ ও উপস্থিত জনতা এগিয়ে আসেন। পুলিশ পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখান থেকে দু’জন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলের দু’জনের বাইরে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার দাঁড়িয়েছে তিনে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২) ও আলফাজ হোসেন শিশির (২২)। ভুক্তভোগী ওই দম্পতির নাম- মেহেবুল হাসান (৩৭) ও নাসরিন আক্তার ইপ্তি (২৮)। মারাত্মকভাবে আহত হয়ে তারা এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিশোর গ্যাং চক্রটির সদস্যরা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ভেতরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিল। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলে একটি শিশুকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করে। পাশ দিয়ে যাওয়া আরেকটি মোটরসাইকেলে ভুক্তভোগী দম্পতি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের লোকজন ডেকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। এ সময় ভুক্তভোগী নারীর চিৎকারে জড়ো হন লোকজন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ভুক্তভোগী নাসরিন আকতার ইপ্তি (২৮) উত্তরা পশ্চিম থানায় করা মামলায় বলেছেন, আমি টঙ্গীতে চাকরি করি তাই উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯/এ রোডের সাত নম্বর বাড়িতে থাকি। সোমবার আমি মার্কেট করার জন্য স্বামীর সঙ্গে তার মোটরসাইকেলে বের হই। মার্কেট শেষে বাসায় ফেরার সময় রাত ৯টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৭ নং সেক্টরের ৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে রাস্তায় পৌঁছা মাত্র দুটি মোটরসাইকেলে ৩ জন ব্যক্তি আমার মোটরসাইকেলের দুই পাশ দিয়ে এলোমেলো ভাবে বিকট শব্দ করে যায়। টার্নিং ঘোরার সময় এদের মধ্যে একটি মোটরসাইকেল সামনের একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। তখন রিকশায় ৪ বছরের একটি শিশু তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে এসে ওই মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে একটি থাপ্পড় মারেন। আমার স্বামী মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে আসামিদের বলে ভাই সরি বললেই তো হয়ে যায় এত ঝামেলা করার দরকার কি। তখন রিকশাসহ রিকশার যাত্রীরা চলে যায়। পরে মোটরসাইকেলে থাকা ৩ জন আসামি আমার স্বামীর সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে। একপর্যায়ে আসামিরা আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে এবং বলে তুই আমাদের চিনিস? আমরা কে? এরকম বলে মোবাইল ফোনে তারা কথা বলতে থাকে। তখন আমরা দুইজন মিলে তিনজনের একজনকে ধরে ফেলি এবং তার মোটরসাইকেল আটকে দেই। আশপাশের কিছু লোক এসে আমাদের সহযোগিতা করেন। তখন আসামিরা দৌড়ে সামনের দিকে যায়। সেখানে ১০ জন রামদা হাতে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত আশপাশের জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ও জনমনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামী মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ওই সময় আমাদের সঙ্গে থাকা লোকজন ভয়ে দূরে সরে যায়। ওই দৃশ্য দেখে আমি আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে অজ্ঞাতনামা ১ জন আসামি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা দিয়ে কোপ মারলে আমি আসামির কোপের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমার বাম হাত এগিয়ে দিলে উক্ত কোপ আমার বাম হাতের কনুইয়ের নিচে লেগে রক্তাক্ত জখম হয়। তখন আসামিরা আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ডান হাতে কনুইয়ের নিচে, বাম পাশের বগলের নিচে, ডান পায়ের গোড়ালিতে মারাত্মকভাবে জখম করে আহত অবস্থায় টেনে অপহরণের চেষ্টা করে।
আমার স্বামী তখন রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করে সাহায্য চাইলে আশেপাশের লোকজন ও থানা পুলিশের টহল টিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিরা আজমপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পরে আমি ও আমার স্বামীকে উপস্থিত লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ও আমার স্বামীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পথে আরও অসুস্থ হলে আমাদের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলে উচ্চ শব্দ করে দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একটি শিশুকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করে। পাশ দিয়ে আরেকটি মোটরসাইকেলে যাওয়া দম্পতি প্রতিবাদ করে। এরপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের লোকবল ডেকে দম্পতির ওপর রামদা দিয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া গতকাল আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত
২০-২৫ বছরের যুবকেরা কীভাবে কিশোর হিসেবে অভিহিত হয় - বোধগম্য নয়। মিডিয়ার লোকজন কী গণ্ডমূর্খ নাকি গণ্ডগোল পাকাতে ওস্তাদ ?
এই গ্যাং এর সদস্যদের অংকুরেই শেষ করে দিতে হবে।
সংবাদ মাধ্যম এই অপরাধীদের কিশোর বলে অভিহিত করছে। এটা কি একটা তামাশা? এধরনের অপরাধীরা লাগাতার ডাকাতি, খুন, রাহাজানী, ধর্ষনের মত অপরাধ করে যাচ্ছে আর সংবাদ মাধ্যম আদর করে বলছে কিশোর অপরাধী। ফাজলামোর একটা সীমা থাকা উচিত।
অপরাধীদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি বাংলাদেশে যেন কোন গ্যাং না থাকে।
এদেরকে প্রকাশ্য দিবালোকে জুতিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলা হোক। পুলিশ ভাইদের অনুরোধ করছি এদেরকে পিটিয়ে ... মেরে ফেলার জন্যে। সরকারি আইনে আর পোষাচ্ছে না। নাহলে এই জানোয়ারগুলি এসব করার সাহস পায় কিভাবে? দেশের জনগণ এখন নিজেদের আইন প্রয়োগ করবে এটাই সময়ের দাবী।
সচেতন, নির্ভরযোগ্য, দায়িত্বশীল নাগরিকদের আত্ম রক্ষা করার জন্য ট্রেইনিং এবং অস্ত্র বহন করার অধিকার দিলে এইসব নির্মূল হবে, পুলিশের কাজ সহজ হবে, সমাজে নিরাপরতা বাড়বে। পরীক্ষামূলক ভাবে এটা করে দেখা জেতে পারে
অপরাধীদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি বাংলাদেশে যেন কোন গ্যাং না থাকে। ২২, ২৫ বছর কিশোর হয় কি করে ? কিশোর বলে অপরাধকে হালকা করা হচ্ছে। ভূক্তভোগীর নাম ঠিকানা জনসম্মুখে প্রকাশ করা কি তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয় ?
এদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি বাংলাদেশ এ যেন কোন গ্যাং না থাকে
ভূক্তভোগীর নাম ঠিকানা জনসম্মুখে প্রকাশ করা কি তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়?
২২, ২৫ বছর কিশোর হয় কি করে? কিশোর বলে অপরাধকে হালকা করা হয়।
বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সোমালিয়ার রূপ নিচ্ছে।
Need take action against this gang with their family.