প্রথম পাতা
সেনা সদরের ব্রিফিং
চাঁদাবাজি সন্ত্রাস আগের চেয়ে কমেছে
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক অপারেশন পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা আমাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখছি। শুধু মব জাস্টিস নয়, যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি-হত্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে। অপরাধের হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো নজরে রাখছি।অদূর ভবিষ্যতে আরও কমে আসবে। সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদর আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
সারা দেশে মব জাস্টিসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাবাহিনীর কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু মব জাস্টিস নয়, চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও হত্যা আগের চাইতে কমেছে। দুই মাস আগে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল ২৫০ কিন্তু বর্তমানে কমে ১২০ এ এসেছে। চুরি ৮৫০ এর মতো হতো বর্তমানে ৬০০’র নিচে নেমে এসেছে। হত্যা সাড়ে ৩শ’ ছিল বর্তমানে ১২০ এ নেমে এসেছে। তিনি বলেন, এসব অপরাধের হটস্পট চিহ্নিত করেছি। হটস্পটগুলো ২৪ ঘণ্টা নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর মাধ্যমে মব জাস্টিসসহ চাঁদাবাজি, চুরি ও হত্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে। অদূরভবিষ্যতে আরও কমে আসবে।’
বান্দরবানের লামায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক অপহরণ হয়েছে। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী লামা থেকে ২০ জনের মতো শ্রমিককে গুম করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারী কোনো একটি দল অপহরণ করেছে। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীরও অভিযান চলমান রয়েছে। অপহরণকারীরা একটি নম্বর দিয়েছে, হয়তো টাকা চেয়েছে তারা। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম চলমান। পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে প্রশ্নে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর পেট্রোলিংয়ের কারণে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্য অপরোধ করতে পেরেছি। রোববারও কুকি-চিনের দু’টি ক্যাম্প (আস্তানা) ধ্বংস করেছি। এ ছাড়াও কুকি-চিনের অত্যাচারে বাড়িছাড়া ১১টি বম পরিবারকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সহয়তায় তাদের গ্রামে আনা হয়েছে। কুকি-চিনের বিরুদ্ধে আভিযানিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও বনানীতে সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্য ও কিছু অপবসরপ্রাপ্ত অফিসার ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে আইনের আওতায় তাদের বিচার করা হবে। আর যারা অপবসরপ্রাপ্ত সদস্য তাদের দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার করা হবে। কোনো অন্যায়কে সেনাবাহিনী কখনো প্রশ্রয় দেয় না। সেনাবাহিনী সব সময় সততার সঙ্গে আছে এবং থাকবে। জনগণের আস্থার জায়গায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাশে পাবেন।
সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার জায়গা অর্জন করতে কোন কোন পন্থা অবলম্বন করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী সব সময় নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করে কাজ করে। জনগণের আস্থার জায়গায় সেনাবাহিনী সব সময় কাজ করছে। সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করতে গিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কোনো চ্যালেঞ্জ ফেস করছে না। তবে আমরা দীর্ঘ ছয় মাস বাইরে নিয়োজিত রয়েছি। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, এসব গুজব মনিটরিংয়ে সেনাবাহিনীর কোনো তৎপরতা আছে কিনা জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কারোর মত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। সবার মত প্রকাশ করবে। সেনাবাহিনী কাউকে বাধা দিচ্ছে না। তবে কে, কেমন, কি মত প্রকাশ করছে তা কতোটুকু বস্তুনিষ্ঠ এর বিচারের দায়ভার সাংবাদিকদের ওপর দিয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন, ২৮শে ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ফেব্রুয়ারি গত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এই সময়কালে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভুত ৩০বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৭টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে গুটি কয়েক (বেক্সিমকো গ্রুপ, সাউদার্ন ডিজাইনার’স লিমিটেড, স্বাধীন গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং সেলফ ইননোভেটিভ ফ্যাশন লিমিটেড) ছাড়া সকল কারখানাই চালু রয়েছে।
শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ছিল ১৬টি।
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৩১শে ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের লক্ষ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। গত ১৭ই জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে অবস্থিত ফোনিক্স লেদার কমপ্লেক্সে সংঘটিত অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছে। বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইজতেমা ময়দানে তুরাগ নদীর উপরে ৫টি ব্রিজ স্থাপন, বোম ডিসপোজাল দলসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল মোতায়েন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা সদস্য যে কোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীর সংস্কার কর্মকাণ্ড যেমন- এন্টি পলিঘিনি অপারেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পরিচালিত খাল পুনরুদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, গত এক মাসে যৌথ অভিযানে ৩৩৪ জন মাদক কারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন: ইয়াবা, ফেনসিডিল, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ২ হাজার ১৪২ জন ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, এসকল কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সার্বক্ষণিকভাবে পালন করে যাচ্ছে। সেনা সদরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
পাঠকের মতামত
কিছুই কমেনি। সরকার ছাড়া কিছুই পরিবর্তন হয়নি।
you people are blind
চাদাবাজী কিছুটা কমেছে, দুর্নীতি চলমান।কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় একটু নজর দিন প্লিজ। প্রসাশনিক কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দুর্নীতি বাজদের কারনে চাপে আছে। কাজ না করে বিল চাওয়ার মত হুমকি ধামকি চলমান।দিদারের মোর,কদমতলা ও কানদারগাও ষ্ট্যান্ডে চাদাবাজী চলমান।