প্রথম পাতা
তৃণমূলের মতামত নিয়ে কর্মপন্থা ঠিক করবে বিএনপি
কিরণ শেখ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
দীর্ঘ সাত বছর পর বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছে বিএনপি। এই সভায় তৃণমূলের নেতাদের মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করবে দলটি। আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। সভায় গত ১৭ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলের নির্যাতন-নিপীড়ন, অভিজ্ঞতার কথা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট,ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ, অভিযোগ, অনুযোগ ও সাংগঠনিক বিষয়ে বক্তব্য দেবেন তৃণমূল নেতারা। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দলের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। সর্বশেষ তাদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা। তবে বর্ধিত সভায় ভেন্যু এখনো ঠিক হয়নি। প্রস্তাবনায় রয়েছে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ, সংসদ ভবনের এলডি হল, কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা এবং চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র। গতকাল রাতে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র তিনজন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বর্ধিত সভা সাধারণত আন্দোলনের শুরুতে কিংবা পরবর্তীতে হয়। এবার আন্দোলনের শেষে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৬-১৭ বছর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলন করার জন্য বর্ধিত সভায় নেতাদের ধন্যবাদ জানানো হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কারণে দীর্ঘদিন বিএনপি বর্ধিত সভা করতে পারেনি। মূলত সেকারণেই বর্ধিত সভা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে তূণমূলের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন বিএনপি’র হাইকমান্ড।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হাবিব-উন-নবী খান সোহেল মানবজমিনকে বলেন, বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে নেতারা আসবেন। তারা সেখানে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করবেন। আর আগামীদিনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে মতামত দেবেন।
জানা গেছে, বর্ধিত সভায় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি, মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও কথা বলার সুযোগ পাবেন। তারা তাদের মতামত তুলে ধরবেন, তৃণমূলকে সংগঠিত করার বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। আগামীদিনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিষয়েও তাদের মতামত নেয়া হবে।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কারণে দীর্ঘদিন বিএনপি বর্ধিত সভা করতে পারেনি। মূলত সেকারণেই বর্ধিত সভা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন বিএনপি’র হাইকমান্ড।
যুগ্ম মহাসচিব ও বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ মানবজমিনকে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে আমরা বৃহৎ পরিষদে বর্ধিত সভা করতে পারি নাই। এজন্য আমরা এখন বর্ধিত সভা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সাংগঠনিক, দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সময় নির্যাতন-নিপীড়নের কথা বলবেন নেতারা।
ওদিকে গত রোববার রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি বিএনপি বর্ধিত সভা করবে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থী ছিলেন এবং দলের টিকিট অর্থাৎ প্রার্থী নন, কিন্তু মনোনয়নের জন্য ‘সেকেন্ডারি’ কাগজ পেয়েছিলেন, তারাও বর্ধিত সভায় থাকবেন। এ ছাড়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা অংশ নেবেন বর্ধিত সভায়। বিএনপি ছাড়া ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও থাকবেন সেখানে।
বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে এক সঙ্গে, এক জায়গায় বসে এই সভাটা করার প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণে এবং একটি মহাআন্দোলন শেষে আমরা এই বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছি।
বিএনপি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বর্ধিত সভায় সদস্য ব্যারিস্টার নাসির উদ্দীন অসীম মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন বর্ধিত সভা হয়নি। এজন্য দলকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করতে এবং নেতাদের দুঃখ ও দুর্দশা শুনতে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে দলকে সংগঠিত করা হবে এবং তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।
এদিকে বর্ধিত সভা উপলক্ষে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আহ্বায়ক করে ২৭ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি এবং ছয়টি উপ-কমিটি (ব্যবস্থাপনা, অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন, শৃঙ্খলা, মিডিয়া ও চিকিৎসাসেবা কমিটি) গঠন করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লো মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপি’র বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর তিনদিন পরে ৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যান।