অনলাইন
ট্রাম্পের অনুদান বন্ধের ফলে প্রবল সমস্যায় দক্ষিণ আফ্রিকার এইচআইভি রোগীরা
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ সপ্তাহ আগে) ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৩:৫১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের একটি গ্রামে ১৯ বছর বয়সী তরুণ নোজুকো মাজোলা বেশ সমস্যায় পড়েছেন। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এইচআইভি ওষুধ সংগ্রহের জন্য এক ঘন্টার রাস্তা পাড়ি দিতে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ আছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন নোজুকো। এতদিন সেই ওষুধ তার বাসায় পৌঁছে যেত। রুক্ষ, অপরিচ্ছন্ন রাস্তার কারণে নোজুকোর গ্রামে পৌঁছানো সহজসাধ্য কাজ নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ রোগীর মধ্যে মাজোলা একজন, যাদের মধ্যে এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি এবং অবশেষে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিউম্যান সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে, মাজোলার গ্রামটি এইচআইভি প্রাদুর্ভাবের নিরিখে দক্ষিণ আফ্রিকা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায়, ১৬% । যেখানে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১,৩০০ তরুণ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অনুমান। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় কোয়াজুলু-নাটালে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল, প্রায় ১৯,৮০,০০০। দেশটিতে ৭৫ লাখেরও বেশি মানুষ এইডস সৃষ্টিকারী ভাইরাসে আক্রান্ত- যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি।
৫৫ লাখ দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের তহবিল এখন প্রশ্নের মুখে। কারণ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর এইডস ত্রাণের জন্য জরুরি পরিকল্পনা বা PEPFAR স্থগিত করে দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি দক্ষিণ আফ্রিকার এইচআইভি প্রোগ্রাম এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোতে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করে, যা মোট তহবিলের প্রায় ১৭%।
জাতিসংঘের এইডস সংস্থার মতে, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বব্যাপী PEPFAR কমপক্ষে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। গত সপ্তাহে, একজন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনকে তহবিল স্থগিতাদেশ সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে যে, PEPFAR প্রকল্পগুলো সীমিত ছাড়ের অধীনে পুনরায় চালু হবে। তবে, এইচআইভি- নিয়ে কাজ করা সাহায্যকারী গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যেই তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, প্রবেশপথে বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে।
PEPFAR প্রকল্পে ব্যবহৃত গাড়িগুলো রাস্তার ধারে অলসভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এইচআইভি রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। PEPFAR তহবিলের বেশিরভাগই বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যারা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার পরিপূরক কর্মসূচি পরিচালনা করে।
উমজিমখুলু অঞ্চলের মাজোলা এবং অন্যান্য এইচআইভি রোগীদের জন্য, যেখানে বেকারত্ব ব্যাপক এবং বেশিরভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজ এবং সরকারি কল্যাণ অনুদানের উপর নির্ভর করে, সাহায্য স্থগিতকরণ তাদের জীবনকে ব্যাহত করেছে। প্রায় ১৫,০০০ স্বাস্থ্যকর্মী যাদের বেতন PEPFAR-এর মাধ্যমে দেয়া হয়, তারা চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি আক্রান্ত জেলা উমগুংগুন্ডলোভু থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দূরে, এইচআইভি পরামর্শদাতারা একটি ছোট অফিসে জড়ো হয়ে আলোচনা করছেন যে মাজোলার মতো রোগীদের কীভাবে সর্বোত্তমভাবে সহায়তা করা যায়।
PEPFAR-এর তহবিলভুক্ত কর্মীরা কীভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন তা নিয়ে কাছের একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে আলোচনা চালাচ্ছেন। নোজুকো এনগকাওয়েনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এইচআইভি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার এক সন্তানও সংক্রামিত হয়েছিল এবং ১৭ বছর বয়সে মারা যায়। তিনি বলেন, সাহায্য স্থগিতের ফলে ইতিমধ্যেই তার সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব পড়েছে এবং অনেকেই তাদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
নোজুকোর কথায়, ‘২০৩০ সালের মধ্যে আমরা একটি এইচআইভি-মুক্ত প্রজন্ম দেখতে চাই। কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে আমরা তা অর্জন করতে পারব না। আমাদের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হবে।’
দরিদ্রদের জন্য এইচআইভি চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করার পক্ষে প্রচারণাকারী ট্রিটমেন্ট অ্যাকশন ক্যাম্পেইনের প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক মাজামো জোন্ডি উমগুঙ্গুদলোভুতে সাহায্য বন্ধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন। তার কথায়, তহবিল ছাড়া নতুন সংক্রামিত রোগীদের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দিতে আমাদের প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি জীবন-মৃত্যুর বিষয়।'
সূত্র : এবিসি নিউজ