প্রথম পাতা
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন নিয়ে কি হচ্ছে?
মরিয়ম চম্পা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমে কয়েক দফায় সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। বড় দিনের ছুটিতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর একসঙ্গে সব অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় সাংবাদিকদের মাঝে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল- দ্রুত নীতিমালা করে নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হবে। নীতিমালা করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি এই কমিটি তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে সরকারের তরফে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিনিয়র সাংবাদিকরা মনে করেন, দ্রুত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন। না হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সরকার যেসব কথা বলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে।
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এখন সীমিত সংখ্যক সাংবাদিক সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন।
তথ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনেককে কার্ড দেয়া হয়েছে যারা সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। দলীয় নেতাকর্মীরা এই কার্ড নিয়েছেন। তাদের কার্ড বহাল রাখলে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে প্রায় আট হাজার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়। যে তালিকায় সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের অনেকে ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভূঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রতিষ্ঠান তথা নিজেদের নামে কার্ড ইস্যু করে সচিবালয়ে তদবিরবাজি করে আসছিল। একইসঙ্গে গণ-অভ্যুথানের পর বিভিন্ন ছাত্রনেতা পরিচয়ে ভেতরে প্রবেশ করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়। পুরো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে এমন যুক্তি দেয়া হলেও সাংবাদিক সংগঠন ও সিনিয়র সাংবাদিকরা বলছেন, নতুন নীতিমালা করে দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের বিষয় সুরাহা না করলে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা তৈরি হবে।
গত ২৯শে ডিসেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে তিন হাজার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের বেশিরভাগই ভুয়া দাবি করেছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, নীতিমালায় পরিবর্তন এনে নতুন করে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু হবে। তিনি বলেন, আপনাদের মধ্যে যাতে ভুল ধারণা তৈরি না হয় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বা সচিবালয়ে প্রবেশ নিয়ে। আমাদের যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয়ার শেষ দিন ২৯শে ডিসেম্বর। এখন আমরা কাউকে অ্যালাউ করছি না সচিবালয়ে প্রবেশ করার জন্য। গত ২৯শে জানুয়ারি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী বা অস্থায়ী কার্ড এ রকম আলাদা না করে একই ধরনের কার্ড দেয়া হচ্ছে। যার মেয়াদ হবে তিন বছর। আর কার্ড দেয়া হবে কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক ও রিপোর্টারের মোট সংখ্যার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অথবা ১৫ জন সাংবাদিককে। নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তথা সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু বিধান সংযোজন-বিয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের জন্য সম্প্রতি পুনরায় ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. সরওয়ার আলমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। এই কমিটি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা ২০২২ পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের সুপারিশ করবে। ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশমালা প্রেরণ করেছে। এখন সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব শিগগিরই এই নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
পিআইডি’র তথ্য কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করে তথ্য সচিবের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ফাইলটিতে সচিব স্বাক্ষর করলে চলতি মাসের মধ্যেই নতুন খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল মানবজমিনকে বলেন, বিগত কোনো রেজিমে (সরকারের আমলে) এভাবে ঢালাও অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল হতে দেখিনি। আমার এত বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় আমি এরকম কখনো দেখিনি। যে কারণে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে এটা কোনো কারণ না। এতে করে অবাধ সংবাদ প্রবাহ যেটা আছে এটাকে বাধাগ্রস্ত করা। যে কারণেই হোক, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ঢালাওভাবে বাতিল করা পুরো বিষয়টির মধ্যে আমি একটি অনৈতিক মতলব দেখতে পাই। যেটা ঠিক না। অফিস যাদের সাংবাদিক হিসেবে অনুমতি দেবেন এমন সকল সাংবাদিকেরই সচিবালয়ে ঢোকার সুযোগ থাকা উচিত। তিনি বলেন, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে অপব্যবহার হয়েছে এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সেটা ঢালাওভাবে সকল গণমাধ্যমকে চাপিয়ে দেয়ার কাজটি ঠিক হয়নি।