বাংলারজমিন
প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বাকৃবি’র হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পুনর্বাসন
বাকৃবি প্রতিনিধি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবারজুলাই বিপ্লবের ৬ মাস না যেতেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বেশির ভাগ আবাসিক হলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত আছে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিজেদের দল ভারী করতে ছাত্রদলের নেতারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হলে উঠানোর সুপারিশ করছে। হল প্রশাসন ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে এমনটিই অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি হলের প্রভোস্টকে জানিয়েই হলে থাকছেন তারা। এদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে হলে হলে পুনর্বাসনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫ই আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর হল থেকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। পরে যারা হলে ছিল শিক্ষার্থীরা তাদের বের করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবার হলগুলোতে ঠাঁই পেয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অংশ নিচ্ছে হলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। অনেকেই ঠাঁই পেয়েছে ছাত্রদলের সুপারিশে। আবার অনেকেই প্রভোস্টের সঙ্গে সখ্যতার বশে। আবার অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গেও তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে।
বিভিন্ন হলের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের (ছাত্রলীগ) কর্তৃত্ব সর্বত্র বিরাজমান ছিল। হলগুলোতে রাজনীতির নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, গেস্টরুমে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, বিনামূল্যে ক্যান্টিন ও ডায়নিংয়ের খাবার খাওয়া ছিল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক অভিযোগ। গণ-অভ্যুত্থানের পরে ৬ মাস পার হতে না হতেই হলগুলোতে আবারো পুনর্বাসন করা হচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, ফজলুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, আশরাফুল হক হল, শাহজালাল হল এবং শহীদ জামাল হোসেন হলে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধু কর্মীই নয় রুবেল-সবুজ কাজী এবং রিয়াদ-মেহেদী কমিটির অনেক পদপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা অনায়াসেই হলে থাকছেন। এসব নেতারা একসময় গেস্টরুমসহ বিভিন্ন নির্যাতনের জড়িত ছিল বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফজলুল হক হলের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে যেসকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিভিন্ন হলে অবস্থান করছেন। ছাত্রদলের নেতারা ছাত্রলীগ নেতাদের হলে তুলে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন যাতে পরবর্তীতে ওই হলটি ছাত্রদল নেতা নিজের দখলে নিতে পারেন।
এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো আতিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদধারী ছাত্রলীগের নেতারা হলে না থাকুক। ছাত্রলীগের কেউ হলে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতারা হলে উঠতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ছাত্রদলের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রলীগ নেতাকে হলে তোলেনি।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনরায় হলে ওঠার ক্ষেত্রে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সহায়তা বিষয়ক কোনো তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি। এরকম কোনো তথ্য প্রমাণ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলে তোলার অভিযোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড শরীফ-আর-রাফি বলেন, যাদের হলে তোলার পর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে তারা আগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছিল, তার কোনো প্রমাণও তারা দিতে পারেনি। এমনকি এ বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি। হলের শিক্ষার্থীরা যদি কারও অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানায়, তবে তাকে হলে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি। তাদের সব আলোচনা শুধু ফেসবুককেন্দ্রিক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো রুহুল আমিন বলেন, একজন শিক্ষার্থীর দলীয় পরিচয় ব্যতীত বৈধ শিক্ষার্থী হলে তারা হলে সিট পাওয়ার অধিকার রাখে। সেভাবে হলে উঠলে দোষের কিছু নেই। আমি যতদূর জানি তারা সংগঠনের পরিচয়ে হলে উঠেনি। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের যে হলে উঠানো হয়েছে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো শহীদুল হক বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা ছিল আমরা তাদের চিহ্নিত করে বের করে দিয়েছি। এরকম আরও যদি জানতে পারি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।