ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

অটোরিকশার নৈরাজ্য বাড়ছে দুর্ঘটনা

মোহাম্মদ রায়হান
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবারmzamin

সকালে রমনা পার্কে হাঁটতে বের হয়েছিলেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। হেঁটে বাসায় ফেরার সময় গলির ভেতর হঠাৎ ব্যাটারিচালিত রিকশা তাকে ধাক্কা দেয়। শুধু তাই নয়, তিনি পড়ে যান। একপর্যায়ে তার গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় অটোরিকশাটি। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তার কপালে দিতে হয় ১০টি সেলাই। পরে বিষয়টি তার ফেসবুকে শেয়ার করেন খুশি। 

সম্প্রতি ব্যটারিচালিত অটোরিকশাতে করে অফিসে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক কাজল ঘোষ। রাস্তা ফাঁকা থাকায় দ্রুত গতিতে চালানো হচ্ছিলো রিকশাটি। এমন সময় রাজধানীর সাতরাস্তায় হঠাৎই একটি কুকুর সামনে চলে আসে। চালক রিকশাটি নিয়ন্ত্রণ করতে তাৎক্ষণিক ব্রেক কষেন। সঙ্গে সঙ্গে রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন কাজল ঘোষ। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কাজল ঘোষ বলেন, দুর্ঘটনার পর রিকশা থেকে পরে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। সেখান থেকে উপস্থিত মানুষজন ধরে ফার্মগেটের সেন্ট জন ভিয়ানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর আহত হওয়ার পরে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনদিন নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কাজল ঘোষ বলেন, রাস্তায় কুকুর দেখে বাঁচাতে বলেছিলাম, কিন্তু রিকশার এত গতি ছিল যে, ব্রেক ধরার সঙ্গে সঙ্গে আমি ছিটকে দূরে পড়ে যাই। আমার শরীরের ডানপাশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখমণ্ডল, দাঁত, নাক, কপাল সব জায়গায় জখম হয়।  

মাস দুয়েক আগে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মো. শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে দাঁতের চিকিৎসা নিতে এসে শাহবাগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তানিয়া খানম নামের এক নারী আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই বছরের নভেম্বরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম রাচি নামের মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রতিনিয়ত এমন দুর্ঘটনা ঘটছে সবার চোখের সামনে। এর কারণ সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া চলাফেরা। 

এমন লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানী জুড়ে। এসব রিকশার দৌরাত্ম্যে সড়কে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এত সংখ্যক রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতেও হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকায় এখন যত্রতত্র তৈরি হচ্ছে এ রিকশা। যার কোনো পরিসংখ্যান সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি আয়ের আশায় এখন অল্প টাকায় রিকশা বানিয়ে অনেকেই সড়কে নেমে পড়ছেন। প্রতিদিন শত শত রিকশা তৈরি হচ্ছে শহরের বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানায়। যা ঢাকার সড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকায় অন্তত ১২ লাখ প্যাডেল রিকশা রয়েছে। আর অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে ৬ থেকে ৭ লাখের মতো। 

এদিকে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার আখড়া। যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হচ্ছে তিন চাকার এই অবৈধ বাহনগুলো। স্টেশনের কাছে জটলা করে থাকায় মেট্রোরেলের স্টেশন ঘিরে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট ও বিশৃঙ্খলা। সরজমিন দিয়াবাড়ী, আগারগাঁও, কাওরান বাজার এবং শাহবাগের মেট্রোস্টেশনসহ বেশ কিছু স্টেশন ঘুরে রিকশার এই বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এসব বাহনের কারণে স্টেশনের ঠিক সিঁড়ির প্রবেশ মুখেই জটলা বেঁধে অবস্থান নেয় চালকরা। এতে ভারী যানবাহন চলাচলে বাধা পেয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সড়কে ভিন্ন ভিন্ন গতির গাড়ি চললে দুর্ঘটনা ঘটবেই। অটোরিকশা, ইজিবাইকে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে ট্রাক, বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। 

রাজধানীতে এসব রিকশার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ৫ই আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাফিক ব্যবস্থা কিছুটা ঢিলে হয়ে গেলে সুযোগ পায় এসব অবৈধ যানগুলো। যার দাপটে কাবু হয়ে আছে সড়কের অন্যান্য যান। নিরাপদ হওয়ার পরও যাত্রী কমে গেছে প্যাডেলচালিত রিকশাগুলোতে। অন্যান্য যানবাহনের চালকরাও বেশ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব ঝুঁকিপূর্ণ রিকশার জন্য। 

আলী নামের মগবাজার এলাকার এক প্যাডেলচালিত রিকশাচালক বলেন, এসব রিকশা তুলে দেয়া দরকার। রাস্তায় এগুলোর জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে। জোরে এসে আমাদের প্যাডেলচালিত গাড়িগুলোর সঙ্গে লাগিয়ে দেয়। কিছু বলতেও পারি না, ঝগড়া বেধে যায়। আর তাদের জন্য এখন প্যাডেলের রিকশার যাত্রীও নেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যানচালক মোহাম্মদ লালন বলেন, এদের কোনো কাগজপত্র নেই, লাইসেন্স নেই, প্রশিক্ষণ নেই- রাস্তায় যত জোরে পারে চালায়। অথচ এত জোরে চালানোর ব্রেক নাই তাদের। 

স্বপন নামের একটি সরকারি সংস্থার মাইক্রোবাস চালক বলেন, তারা যেভাবে গাড়ি চালায় এটা সবার জন্যই ক্ষতিকর। আমরা হায়েস গাড়ি চালাই ৫০-৮০ গতিতে, আর তারা যে গতিতে চালায়! আগে তো তারা অলিতেগলিতে চালাতো, তখন ঠিক ছিল। উত্তরা-মতিঝিল রুটের বিআরটিসি দোতলা বাসের এক চালক বলেন, অটোরিকশা চালকরা কোনো কিছু বোঝে না, হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে। তখন এত বড় গাড়ি নিয়ে রিকশা বাঁচাবো না গাড়ির যাত্রীদের বাঁচাবো! তারা রাস্তার সাইড দিয়ে চালালেও কিছুটা ঝুঁকি কমে যেতো। কিন্তু তারা পুরো সড়ক জুড়ে রিকশা চালায়।  

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন,  ঢাকার মূল সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কারণ রিকশাচালকদের সড়ক সম্পর্কে জ্ঞান নেই। সড়কের কোনো ব্যাকরণ তারা জানে না। অনেকেই রাতারাতি চালক বনে গেছেন। এখন এসব ছোট, খুচরা যানবাহন যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট ছোট যানবাহনগুলো বাসেরও সক্ষমতা খেয়ে ফেলছে। একই সড়কে বাসও চলছে, ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলছে। ফলে একজন একজনের সক্ষমতা খেয়ে ফেলেছে। এ যানবাহনগুলো সড়কে অতিরিক্ত চাপ, যানজটও তৈরি করছে। 
 

পাঠকের মতামত

গত সপ্তাহে রবিবার আর এ সপ্তাহের আজ সোমবার অটোরিকসার আঘাতে আমার হাটু ছিলে গেছে। রাস্তার পাশ দিয়েও চললে রক্ষা নাই। গতি কমিয়ে চালালে হয়তো দুর্ঘটনা হতো না। কিছুটা পরিবেশ বান্ধব ও শ্রম আর কষ্ট কম হয় বলে আমি অটোরিকশার বিরুদ্ধে নই। তবে অটোরিকসার আধিক্য কমাতে হবে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চালকের আরো দায়িত্বশীলতার সাথে গতি কম রেখে চালাতে হবে।

Kamrul karim
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ১২:২০ অপরাহ্ন

অটোরিকশা বন্ধ হওয়া দরকার

sumon
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

আমার হাত ভাংছে। ১.৫ মাস কোন কাজ করতে পারি নাই। এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। অথবা বন্ধ করে দাও

Saiful Islam
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

দেশে যতো দুর্ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগের জন্য এই অটো রিক্সা দায়ী।

আসিক
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

অটোরিকশা বন্ধ হওয়া দরকার,

Abu Shofian
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৬:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status