দেশ বিদেশ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাত-পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় অভিবাসী ফেরত পাঠানোয় ভারতের ক্ষোভ
মানবজমিন ডেস্ক
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ ভারতীয়দের হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে চরম বিতর্ক। বুধবার সামরিক বিমানে করে এমন ১০৪ ভারতীয়কে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ভারতীয়দের মাঝে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে অমানবিক বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। এদিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভারতীয়দের ছবি প্রকাশের পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিরোধী দলের নেতাদের মাঝেও। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ হ্যান্ডকাফ পরে পার্লামেন্টের বাইরে প্রতিবাদ করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। পাঞ্জাবের উত্তরাঞ্চলের হোশিয়ারপুরের বাসিন্দা কুলভিন্দার কর জানান, তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্র্রে বসবাস করেন। দুই সপ্তাহ ধরে স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ।
চেষ্টা করেও কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার স্বামী খুন হয়েছেন বা ডাকাতের শিকারে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি। কুলভিন্দার কর আরও বলেন, স্বামীকে আর কখনো দেখতে পাবেন কি না ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর খবরে জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে। উল্লেখ্য যে ১১৪ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে তার স্বামী হারভিন্দার সিং (৪০) অন্যতম। কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। জঙ্গল, নদী, সমুদ্র পার হয়ে উন্নত জীবন-যাপনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান হারভিন্দার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আবার সেই পাঞ্জাবেই ফিরে আসতে হলো তাকে। এদিকে, ১৩ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা আছে নরেন্দ্র মোদির। সফরের আগে ভারতীয়দের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ প্রশ্ন তুলেছে মোদি-ট্রাম্পের ‘ভ্রাতৃপ্রেম’ নিয়ে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- ট্রাম্প যদি সত্যিই মোদির বন্ধু হয়ে থাকেন, তাহলে দিল্লি কেন এমন পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্পকে আটকাচ্ছে না, যা দুই দেশের বন্ধুত্ব সংকটের মুখে ফেলে। নয়াদিল্লি ভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক হর্ষ পান্ত বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য কয়েকটি ইস্যু আছে। যার মধ্যে শুল্ক অন্যতম।
এ সময় তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তাহলে আপনি কোথায় ছাড় দেবেন আর কোথায় আলোচনা করবেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি। আল-জাজিরাকে পান্ত জানান, ভারত অভিবাসীদের বিষয় নিয়ে বেশি বাজি ধরতে চায় না। ভারতের সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অভিবাসীদের বিষয়ে খড়গহস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। একে একে দেশে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে। ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভারত তৃতীয়। প্রথম স্থানে আছে যথাক্রমে মেক্সিকো ও এল সালভাদর। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ৭ লাখ ২৫ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা টহল প্রধান মাইকেল ব্যাংকস এক্সে এক ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া পরানো ভারতীয়দের সামরিক বিমানে ওঠানো হচ্ছে।
ওই ভিডিও পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, যদি আপনি অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম করেন তাহলে অপসারিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ভারতীয়দের আসামিদের মতো টানাহেঁচড়া করা- তার কাছে নজিরবিহীন। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে হৈচৈ করেন বিরোধীদলীয় নেতারা। এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর পার্লামেন্টকে জানান, প্রত্যাবর্তনের সময় ভারতীয়দের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার করা না হয়, সে বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছিল সরকার। এ সময় তিনি ২০০৯ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সরকারি নথি প্রকাশ করেন। তাতে দেখানো হয়, ২০১৯ সালে প্রায় ২০৪২ জনকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যা ২০০৯ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। গত বছর ১ হাজার ৩৬৮ জন অনথিভুক্ত ভারতীয় অভিবাসীকে প্রত্যাবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।