দেশ বিদেশ
দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ: মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারদেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে হোটেল রেনেসাঁ’য় ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)’র উদ্যোগে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি আমার মনে হয়, একটা ব্যাপারে আমরা একমত যে- আমরা আমাদের দেশের যে জাতীয় নিরাপত্তা সেই নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। এখানে কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেছেন যে, কিছুটা বিভেদ আছে, বিভাজন আছে- সেটা জনগণের মধ্যে নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত ও পথে কিছুটা মতপার্থক্য থাকতেই পারে, যেটা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে প্রয়োজনের সময়ে। প্রতিটি ক্রান্তিকালে প্রতিটি সংকটে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে, দেশকে রক্ষা করেছে। আপনারা সেই তিতুমীরের পর থেকে শুরু করে একেবারে ২৪ পর্যন্ত আসেন, দেখবেন প্রতিটি সময়ে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রত্যেকটি জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন বলেন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান বলেন, ’৭০-এর নির্বাচন বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বলেন- সর্বক্ষেত্রে মানুষ এক হয়ে লড়াই করেছে তাদের নিজের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকে তাদের প্রয়োজনের সময়ে।
ফখরুল বলেন, আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করতে পারিনি ঠিকমতো। আমরা গণতন্ত্রকে চর্চা করতে গিয়ে প্রতি পদে পদে বাধা পেয়েছি। সেই জায়গায় আজকে আমাদের একমত হতে হবে। আমার ধারণা, আমরা সবাই এই ব্যাপারে একমত হয়েছি। অনেকে নেতিবাচক কথা বলছেন, আমি কিন্তু খুব ইতিবাচকভাবে দেখতে পারছি সামনে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তর্ক করছে, বিতর্ক করছে, আলোচনা করছে এবং তার মধ্যদিয়ে তারা একটা জায়গায় এসে পৌঁছাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই আলোচনার মধ্যদিয়ে, তর্ক-বিতর্কের মধ্যদিয়ে আমরা সেই জায়গাটায় পৌঁছাবো, যেখান থেকে আমরা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করার জন্য সঠিক পথ খুঁজে বের করতে পারবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে আমরা মনে করি, ইনস্টিউশনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এটাকে শক্তিশালী করতে পারলে জাতীয় নিরাপত্তা আমি নিশ্চিত করতে পারবো এবং অন্যান্য বিষয়গুলোকেও আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। সেই কারণে আমি বলবো, আসুন আজকে কোনো নেতিবাচক চিন্তা না করে এই যে, সামনের সময়টুকু- যে সময়ের মধ্যে আমরা দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে যেতে চাই, সেখানে যেন দ্রুত যেতে পারি তার জন্য আমরা সবাই কাজ করি।
সভাপতির বক্তব্যে এফএসডিএসের সভাপতি মেজর জেনারেল অব. ফজলে এলাহী আকবর বলেন, আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ মেরূকরণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে নানাভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রের শত্রু সব সময় সীমান্তের ওপারে অবস্থান করে না- তা মাঝে-মধ্যে সমাজের ভেতরেই বিভাজন, বিভ্রান্তি, গুজব, ঘৃণা আর আত্মঘাতী রাজনীতির মাধ্যমে জন্ম নেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অস্ত্র হতে হবে জাতীয় ঐক্য। ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এ মাসে তাই সকল শহীদ, নিপীড়িত, ছাত্র-জনতা বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যাদের পরিশ্রমের ফলেই আজকে আমরা বাংলাদেশের একটি নতুন সম্ভাবনাময় পরিবেশ পেয়েছি। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আমাদের জাতীয় পরিচয় ও মর্যাদাকে মহিমান্বিত করে গেছেন তাদের সকলের প্রতিও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই ক্ষেত্রে প্রায় ২ দশক ধরে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে যারা সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সেনা প্রধান (অব.) লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূর উদ্দিন খান, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, কবি ফরহাদ মজহার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক ঊধর্বতন কর্মকর্তারা এই আলোচনায় অংশ নেন।