ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য কী দখলদারিত্ব

মানবজমিন ডেস্ক
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবারmzamin

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কৃতিত্ব দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডকে জোরপূর্বক জনশূন্য করার আহ্বানও জানিয়েছেন গত সপ্তাহে। বলেছেন, গাজাবাসীকে মিশর, জর্ডান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানে তারা বসতি গড়বেন। এটা হতে পারে অস্থায়ী সময়ের জন্য। হতে পারে দীর্ঘমেয়াদে। এর অর্থ গাজাবাসীকে গাজা থেকে উৎখাত করা হবে। কিন্তু গাজাবাসী এই প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমন প্রস্তাবের কড়া নিন্দা করেছে হামাস, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ, আরব দেশগুলো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেক দেশ। তারপরও একই কথা বলছেন ট্রাম্প। এতে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অনলাইন আল-জাজিরায় এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক আলী হার্ব। তিনি লিখেছেন, বার বার গাজাকে জনমানবশূন্য করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো তার এ হুমকিকে এথনিক ক্লিনজিং বা জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফিলিস্তিনের গাজাকে যুক্তরাষ্ট্র দখল করে নিতে পারে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। 

এমন অবস্থায় সারা বিশ্বের নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে জোরপূর্বক উৎখাত করা হলে তাতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে ওই অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির জাস্টিস অ্যান্ড পিস প্রোগ্রামের লেকচারার জোশ বুবেনার বলেন,  গাজায় বসবাসকারী কমপক্ষে ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে আক্রোশপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তা জাতি নিধনের সমতুল্য। এতে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে  হেয় করা হয়। অবশ্যই ফিলিস্তিনি জাতিনিধন যুদ্ধবিরতির কোনো অংশ নয়। কিন্তু ট্রাম্প সেই বিষয়টিই আলোচনায় আনছেন। তিনি অতি ভঙ্গুর এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভেঙে দেয়ার পক্ষে। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ২০শে জানুয়ারি শপথ নেন ট্রাম্প। এর আগের দিন ১৯শে জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেছেন তার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিফ উইটকফের নেতৃত্বে আলোচনার প্রস্তাব এগিয়ে গেছে। তার ফলেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একজন পিসমেকার এবং একীভূতকরণ বিষয়ক একটি লিগেসি রেখে যাবেন। এর কয়েকদিন পরেই গাজাকে জনমানবশূন্য করে দেয়ার কথা বলেন। এটা একবার-দু’বার বললে তা উড়িয়ে দেয়া যেত। কিন্তু তিনি বার বার একই কথা বলতে থাকেন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে তিনি তার ওই প্রস্তাব আবার প্রকাশ করেন। ট্রাম্প এ সময় বলেন- আমরা গাজা উপত্যকা দখল করবো। তা নিয়ে কাজ করবো। এটা হবে আমাদের। 

তার এমন মন্তব্যের মধ্যেও যুদ্ধবিরতি চুক্তি অব্যাহত আছে। তবে বন্দুকের ট্রিগার নীরব আছে। একে-একে হাতে থাকা ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে হামাস। গতকালও তারা তিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শেষ পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলোচনা হচ্ছে- গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রথম দফায় মোট ৩৩ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার কথা। এ সময়ে গাজায় ব্যাপক হারে মানবিক সহায়তা দেয়ার কথা। সেখানে মোতায়েন ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা। এর মধ্য দিয়ে চুক্তির প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ১লা মার্চ। দ্বিতীয় দফায় গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা। এর ফলে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা। হামাসের হাতে বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার কথা। তৃতীয় দফায় গাজাকে ৫ বছরের মধ্যে পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে। 

কিন্তু গাজার মানুষকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়ার যে কথা বলছেন ট্রাম্প- তা চুক্তিতে যে আগ্রহের কথা বলা হয়েছে, তার বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই চুক্তির কোনো অংশ মানতে দৃশ্যত এখন অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। 

ট্রাম্পের দূত উইটকফ মঙ্গলবার বলেন, ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রথম দু’টি দফা পূরণে সচেষ্ট থাকবে ওয়াশিংটন। কিন্তু গাজা পুনর্গঠন নিয়ে বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, চুক্তির আলোচনায় যেভাবে বলা হয়েছে এটা যেভাবে এগুবে না। চুক্তি করার সময় তিনি ট্রাম্প টিম থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। বলেছেন, শুরু থেকেই বিষয়টি সুন্দর ছিল না। এরপর কী হবে আমরা জানি না। ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে কথা বলা থেকে সরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে। তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিত বলেছেন, গাজার মানুষকে অস্থায়ীভিত্তিকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, গাজাবাসীকে বাস্তুচ্যুত করার প্রক্রিয়া হবে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য। গাজা পুনর্গঠনের পর তারা আবার ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তা-ই বলেছেন! তিনি গত সপ্তাহে প্রায়দিনই তার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, গাজাবাসীকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা আছে তার এবং গাজার মালিকানা এরই মধ্যে দাবি করে বসেছেন তিনি। আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসি’র নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য সর্বনাশা। হোয়াইট হাউস থেকে যেসব কথা আমরা শুনেছি, আমার সাধারণ বিচারে, তা হবে পুরোপুরিভাবে যুদ্ধবিরতিকে হত্যা করা। গাজা এবং গাজাবাসীর জন্য দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ছিল এ সমস্যার সমাধান। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।  যদি গাজাবাসীকে জাতিগতভাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে আলবেনিয়া বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা হয়, তাহলে এসব প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য কি? এমনকি ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, এই যুদ্ধ শিগগিরই শুরু হয়ে যেতে পারে।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, হামলা পরের দিনই শুরু হয়ে যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক খালেদ এলগিনডি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের মঙ্গলের জন্য যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের আগ্রহ নেই। তিনি শুধু যুদ্ধবিরতিতে সংবাদ শিরোনাম হতে চান। তিনি কৃতীত্ব দাবি করেন। তিনি বলতে চান- আমি জিতেছি। আমিই সেই ব্যক্তি, যে এটা করতে পেরেছে।

পাঠকের মতামত

লক্ষ্য গাজা উপকূলের ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্পদ তেল ও গ্যাস

জনতার আদালত
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৮:০১ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status