ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে

স্টাফ রিপোর্টার
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ই আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। আসিফ মাহমুদ বার্তা সংস্থা বাসস’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকার সহসাই কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এদেশের জনগণকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করি। ফলে ৫ই আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়ার জায়গা আছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে জায়গা থেকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, আমি বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাতে চাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও ৪টি আইন রয়েছে, যেখানে সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এটার লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা (আইনি কাঠামো) কী হবে, এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যেকোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইনের বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে। তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ৫ই আগস্টের পরিবর্তনের পরে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। একটি গণ-অভ্যুত্থান যারা ঘটায়, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি যে, অভ্যুত্থানের অর্জনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তাছাড়া ৫ই আগস্টের পর গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যায়নি।


আসিফ বলেন, বর্তমানে তাদের ভেতরেও রাষ্ট্র গঠনের স্পৃহা তৈরি হয়েছে। এই শক্তিটাকে সংহত করার জন্য একটা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও এ দলের কোনো নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি।’ 

ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো- বর্তমান সরকারে ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন তাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাদের সরকারে থাকাটা ঠিক হবে না। কেউ যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যায় তো অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে তবেই সেখানে যাবে।

কারণ, এ সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব নিয়েছে। পাশাপাশি দেশের সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার কাজ শেষ করার দায়িত্বও তাদের ওপর অর্পিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের ‘কনফ্লিক্ট’ যেন তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলে তিনি থাকবেন কিনা এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।’
সরকার চায় সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন, এক্ষেত্রে বিষয় দুইটি সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এ বিষয়গুলোর পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। 
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ই আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এই মনোভাবই ছিল যে- যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়, তবে সেও ওই একই গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এই সরকারও ফেস করছে। কারণ সমাজের প্রত্যেকটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে। 

আসিফ মাহমুদ সংস্কার কমিশন যে ৬ রিপোর্ট দেয়া হয়েছে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, এই রিপোর্টগুলো যথাযথ স্টেকহোল্ডারের কনসালটেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠ তৈরি হতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার সময় বলে আসছিল, বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন সম্ভব নয়, তারা এখন আবার একই বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনের কথা কোন গ্রাউন্ড থেকে বলছে এটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটাও তাদেরকে স্পষ্ট করতে হবে। একই সংবিধান, আইনকানুন রেখে নির্বাচন করলে সেটা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের নির্বাচন থেকে কতোটা আলাদা হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়।’ 

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিই, তাদের জন্য সরকার চালানো কঠিন হবে। এ কারণেই ছয়টা সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো শাসনতান্ত্রিক। বাকি সংস্কারগুলো জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমরা মনে করি, এখানে মিনিংফুল সংস্কারের মাধ্যমেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে এবং সংস্কার কার্যক্রম ও আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে।’

পাঠকের মতামত

বিষয়টি আইন ও বিধি মোতাবেক যেন হয় সেটা কামনা করি। তবে এ কাজের কোন বিকল্প নেই। ধন্যবাদ।

SM. Rafiqul Islam
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।

MD REZAUL KARIM
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

ভোট হলেই বোঝা যাবে কারা কতটা জনপ্রিয়, এসব চিন্তা না করে চাদাবাজি , ধান্দাবাজী বন্ধ করুন, এবং দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ জামাআতে ইস লামীকে সমর্থন করুন ।

Md. Abdur Razzak
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৩:১২ অপরাহ্ন

দেশের বর্তমান প্রচলিত আইনেই আওয়ামীলীগের বা যেকোনো দলের/ব্যক্তির অন্যায়, অত্যাচার আর দুর্নীতির বিচার করা সম্ভব। আওয়ামীলীগ কে নিষিদ্ধ করলে ৭৫ পরবর্তী অবস্থার মতো হয়ে যেতে পারে যখন ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স করে কিছু ঘটনার সাংবিধানিক/মানবিক/মৌলিক বিচারিক অধিকার রহিত করা হয় এবং পরবর্তী তে দেখা যায় বহুবছর পর তা বাতিল করে দেয়া হয়. নিষিদ্ধের ফলে আওয়ামীলীগ একটি ইস্যু পেয়ে বসবে আর বলতে থাকবে যে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই, আইনের শাসন নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, দল মত প্রকাশের অধিকার নেই. এখন যে অবস্থায় তাদের অন্যায় অত্যাচারের বিচার চলছে সেভাবেই চলতে থাকা টাই উত্তম বলে মনে হয় যাতে করে আওয়ামীলীগ বর্তমান সরকারকে ৭৫ পরবর্তী সরকার বা তাদের নিজেদের মতোই সরকার বলে আখ্যা দিয়ে বসতে না পারে .

প্রফেসর মোবারক হোসেন
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

People will welcome the decision of complete banning of BAL and its auxiliary groups whole-heartedly.

Nam Nai
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৪:২৩ পূর্বাহ্ন

AL BAN

জনতার আদালত
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দেশের সবচাইতে বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।‌ এর মধ্যে যে কোন‌ একটি দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন বৈধতা পাবে না। যাদের ভোটে জেতার কোন সম্ভবনা নেই তারা চাইবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কিছু সিটি দখল করা। সেটা হতে দেয়া হবে না।

Andalib
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status