ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

সরাইলে চলছে নদী সেচে মৎস্য নিধন

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের কুইট্টা সেতুর দু’পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল তিতাস নদীর শাখা পুটিয়া নদীতে প্রতি বছরের এ সময়ে বাঁধ দিয়ে পানি সেচে নদীর তলদেশ থেকে মৎস্য নিধন করে থাকে। এবারো গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে ৫-৬টি সেচ যন্ত্রে (শ্যালো মেশিনে) দিনে রাতে নদী সেচের কাজ করেছে। নদীর পানি কমতে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন স্থানীয় কৃষকরা। আর ঝুঁকি বাড়তে থাকে ফসল সড়ক ও নদীর উপরের ব্রিজের। এমন অভিযোগ উঠেছে দুর্গাচরণ দাস ও জজ মিয়ার বিরুদ্ধে। লিজের বিধি অমান্য করে মোটা অঙ্কের চুক্তি মূল্যতে জেলেদের কাছে পানির নিচের মাছ বিক্রি করছেন তারা। তাই সেখানকার ৪৭ জন কৃষক নদীর পানির সেচ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বরাবর গত ১৪ই জানুয়ারি লিখিত আবেদন করেছেন। 
জানা যায়, উপজেলাধীন কালীকচ্ছ মোজাস্থ ‘বিল মোড়ল গজারিয়া কুড়ি’ জল মহালটি ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে লিজ প্রদান করা হয়। ১০৫৭৬ দাগের জল মহালটির মধ্যভাগের বড় অংশে গভীরতম কয়েক একর জায়গার একটি গর্ত রয়েছে। এটিকে সকলেই কুড় বলেন। কুড়ের চারিদিকে প্রজার যৌথ সম্পত্তি ও কৃষি জমি রয়েছে। ওই কুড় বা গর্তের পানি দিয়ে কৃষকরা তাদের শত শত বিঘা জমিতে ধান চাষ করে আসছেন। নুর আহাম্মদ জজ মিয়া নামের ব্যক্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি দুর্গাচরণের লোকজন দিয়ে মোটর দ্বারা পানি সেচ করে নদী শুকিয়ে নদীর মৎস্য প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস ও ফসল উৎপাদন ব্যাহত করছেন। কুড়ের পানি শুকিয়ে কাদা মাটি টানাটানি করায় সিএন্ডবি সড়ক ও ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়ে। কারণ ব্রিজের খুঁটিগুলোর গোড়ার মাটি সরতে থাকে। সেচ করে নদী শুকিয়ে ফেলার পরে সেখানকার ইরি বোরো ধান চাষ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ ওই নদীর পানিই সেখানকার ফসলি জমিকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেজন্য তারা জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু পানি সেচের মোটর বৈদ্যুতিক সংযোগ ও তাদের অস্থায়ী আবাসস্থল এখনো আছে বহাল তবিয়তে। সেখানে অবস্থান করছেন কর্মরত লোকজন। পুনরায় সেচ কাজ চালানোর জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।  পানি সেচের দায়িত্বে থাকা প্রাণো দাস বলেন, আমরা দুর্গাচরণকে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি। জজ মিয়াকেও দিয়েছি। বিদ্যুতের জন্য শিপন মেম্বারকে দিয়েছি ১ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে বিলে আমরা ৫১ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখনো কিছুই পায়নি। ১০-১৫ দিন ধরে সেচ কাজ চালিয়ে আসছি। গত সোমবার রাতে ইউএনও স্যার এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন কতোদিন বেকার বসে থাকতে হয় আল্লাহই জানেন। পানির গভীরতা এখনো ১২ ফুট। কমপক্ষে আরো ৮-১০ ফুট পানি না কমালে মাছ ধরা যাবে না। এবার লাভ করতে পারবো না। স্থানীয় একাধিক কৃষক বলেন, প্রতি বছরই একটি মহল আইন অমান্য করে এ কাজটি করলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি দুর্গাচরণ দাস বলেন, আমি সাব লিজ দেইনি। ১৪ হাজার টাকা নেইনি। তারা মিথ্যা কথা বলছেন।  ‘তরী’ বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ ও সরাইল শাখার সদস্য সচিব মো. শাহগীর মৃধা বলেন, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে এভাবে নদী ধ্বংস করে মাছের প্রজনন ধ্বংস ও ফসলি জমির ক্ষতি করতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে প্রশাসনকে সহায়তা করতে তরী পরিবার মাঠে নামবে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, লিজ নেয়া নদী বিল বা জলমহালের পানির সীমানা দেখিয়ে অন্য কারও কাছে সাব-লিজ বা বিক্রি করা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জলমহাল কমিটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কোনো জলমহালই সাব-লিজ দেয়ার কোনো বিধান নেই। নদী থেকে নদীতে বাঁধ দেয়াও সম্পূর্ণ নীতিমালা পরিপন্থি। সেচ করে নদী শুকানোর কোনো বিধান নেই। যে বা যারা এই কাজগুলো করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status