দেশ বিদেশ
ইআরএফের সেমিনারে অভিমত
গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে চুরি বন্ধ হলেই দাম বাড়াতে হবে না
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারগ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে ১০ শতাংশ চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই পারে এ চুরি বন্ধ করতে। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই।
গতকাল অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, লাফার্জ হোল সিমের সিইউর নাম মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী।
নতুন করে গ্যাসের দর বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করে এ কে আজাদ বলেন, সরকার যে নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা কোথায় যাবো?। গ্যাস ও ভ্যাট বৃদ্ধির আগে অর্থনীতি ও জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। তিনি বলেন, পণ্য আমদানি, রপ্তানি ও মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে। এই চিত্র বলছে, বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে গ্যাস ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা চিন্তা করা উচিত। এ কে আজাদ বলেন, ব্যবসায়ী মানেই যেন অপরাধী। সবাই চুষে খেতে চায়। অনিয়মে অন্তত ৪০ শতাংশের মতো ব্যয় করতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সব সরকারের চরিত্রই এক। গত সরকার বলেছিল গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
ভ্যাট পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ভ্যাটের বিষয়টি নিয়ে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। গ্যাস পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকা উচিত। মালেশিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশই শিল্পে ব্যবহার হয়। গ্যাসের বরাদ্দ শিল্প মন্ত্রণালয়ই করে থাকে। শিল্পে গ্যাস সরবরাহ সংকটে উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বন্ধ শিল্পকারখানা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ সুবিধা রয়েছে। আশিক চৌধুরী বলেন, এ বছর আমরা একটা ইনভেস্টমেন্ট সামিট করতে যাচ্ছি এপ্রিলের ৭ থেকে ১০ই এপ্রিল। আমরা এবার খুব বড় বড় কিছু বিদেশি ইনভেস্টদের দেশে ইনভাইট করছি। উনারা দেশে আসুক এসে বাংলাদেশের বাস্তবিক অবস্থা দেখুক, তারপর বিনিয়োগ করুক।
গ্যাস ও ভ্যাট প্রসঙ্গে আবুল কাশেম খান বলেন, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এসআরও জারি করে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য ঘনঘন নীতির পরিবর্তন করা হয়। নীতি গ্রহণে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয় না। দুর্নীতির কারণে সব খাত নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ভেঙে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার করতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে, যাতে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয়।
আবুল কাশেম খান বলেন, বিনিয়োগকারীদের একটা কমন প্রশ্ন থাকে যে বাংলাদেশ ট্যাক্স রেটটা কতো আসলে। কেউ বলে ২৭ শতাংশ, কেউ বলে ৩৬ শতাংশ, কেউ বলে ৪৮ শতাংশ, কেউ বলে ১২ শতাংশ। কোনো বেঞ্চমার্ক নেই। কারণ এত স্টেজে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স রেট অ্যাপ্লাই হচ্ছে যে এফেক্টিভ ট্যাক্স রেটের বেসিক কোনো স্ট্রাকচার নেই। এটা হচ্ছে বিনিয়োগের প্রথম বাধা। তিনি বলেন, তার সঙ্গে আছে অসঙ্গত নীতি। সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) দিয়ে পলিসি চেঞ্জ করে দেয়া হচ্ছে। এরকম অনিশ্চয়তার মধ্যে একজন বিনিয়োগকারী যখন বিনিয়োগ করেন তিনি তো দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিয়ে আসেন। যেকোনো ক্ষেত্রে ইনসেন্টিভ দিলে সেটা দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে। ইনভেস্ট করবো কি করবো না। তাদেরকে সেই অনিশ্চয়তা থেকে বের করে সেই পরিবেশ দিতে হবে যেন তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। তিনি বলেন, নতুনদের জন্য ট্যাক্স ভীতিকর এক অবস্থা। আমাদের উচিত তাদের জন্য বিষয়টি একটু রিলাক্স করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবা। নতুন ও ছোট ব্যবসা করার জন্য নতুনদের সুইটেবল পরিবেশ দেয়া দরকার।