রাজনীতি
অস্থিরতা সমাধানের একমাত্র পথ রাজনৈতিক ঐক্য: ড. কামাল
স্টাফ রিপোর্টার
(২ সপ্তাহ আগে) ৫ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৬:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন
বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা সমাধানের একমাত্র পথ রাজনৈতিক ঐক্য বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘জাতীয় কাউন্সিল-২০২৪ পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। কামাল হোসেনের পক্ষে তার লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন গণফোরাম সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী। এতে ড. কামাল হোসেনকে ইমেরিটাস, মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি এবং ডা. মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরজ করছে তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের জাতীয় চেতনা, যা ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭২ এর সংবিধান এবং ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা। আজ সময়ের প্রয়োজনে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সংবিধান সংশোধন-কিংবা যুগোপযুগি করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে তা আমাদের অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্থ করবে। এব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত ৫৩ বছরেও আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারিনি। আবার ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে কাজে লাগতে হবে। এটা যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষিত একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনা থেকে যেমন সরে আসতে পারিনা, তেমনি ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নসাৎ হতে দিতে পারি না। এই ঐতিহাসিক বিষয়গুলো একটি আরেকটির সম্পূরক ও পরিপূরক।
বিগত বছরগুলিতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, এই সব প্রতিষ্ঠানগুলি সংস্কার করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাদেরকে যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগীতা করা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে তারা অভীষ্ট্য সংস্কার কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।
কামাল হোসেন বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের বিরাজমান রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিবিদ, আইনজীবী, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল। আমি বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে গণফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। গত নভেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে রোববার গণফোরামের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হল। আমি আশা করি, দলে যে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা গণফোরামের ঘোষিত নীতি, আদর্শ ধারণ করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে। এজন্য নবগঠিত কমিটি গণতন্ত্রমনা সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলবে।