বাংলারজমিন
প্রত্যয়নপত্র ছাড়া কুষ্টিয়া জগতি খাদ্যগুদামে চলছে চাল সংগ্রহ
এ. জে. সুজন, কুষ্টিয়া থেকে
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারঅনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে কুষ্টিয়া জগতি খাদ্যগুদামে এবারের সংগ্রহ। তবে অভিযোগ রয়েছে পূর্বেও অনিয়ম করেই সংগ্রহ হয়ে থাকতো। জানা গেছে কর্মকর্তাদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার ও পকেট ভারী হচ্ছে নিয়মবহির্ভূত চাল সংগ্রহের মাধ্যমে।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদরের সবচেয়ে বেশি সংগ্রহের মধ্যে জগতি খাদ্যগুদাম অন্যতম। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রত্যয়নপত্র ছাড়া এবং প্রত্যয়ন অফিসারের অনুপস্থিতিতেই চলছে আমন সংগ্রহ ২০২৪। ২০১৭ সালে সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী একজন খাদ্য পরিদর্শক অথবা একজন খাদ্য উপ-পরিদর্শক মিল থেকে সংগৃহীত চালের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন এবং চালের নমুনা সংগ্রহ করবেন। খাদ্য পরিদর্শক তা বি-নির্দেশনা সম্মত কিনা তা পরীক্ষা করবেন এবং বি-নির্দেশনা সম্মত হলে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন। মিলারদের প্রথম কাজ থাকে খাদ্য পরিদর্শকের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করা। কিন্তু মিলাররা তা না করেই ওসিএলএসডি’র যোগসাজশে বি-নির্দেশনা বহির্ভূত চাল সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে মিলাররা ওসিএলএসডিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। নিয়ম বহির্ভূত বা বি-নির্দেশনা বহির্ভূত সংগ্রহের মাধ্যমে নিম্নমানের চাল, লাল চাল মিশ্রিত চাল, অধিক আর্দ্রতা বিশিষ্ট চাল, খুদ মিশ্রিত চাল সংগ্রহ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী চালের আর্দ্রতা থাকবে সর্বোচ্চ ১৪%, কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১৪.৮%-১৪.১৫% আর্দ্রতার চাল অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব অনৈতিক সুবিধা নেয় মিল-মালিকরা, বিনিময়ে মোটা অঙ্কের পাশাপাশি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ পয়সা এবং টন প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে প্রদান করে কর্মকর্তাদের। রোববার ৮ই ডিসেম্বর জগতি খাদ্যগুদামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমনের চাল সংগ্রহ চলছে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত নেই কোনো প্রত্যয়ন অফিসার এবং প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই আমদানিকৃত চাল গোডাউনে আনলোড হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই গুদামের ওসিএলএসডি সুশান্ত কুমার মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, তাড়াহুড়ো করে সংগ্রহ শুরু হয়েছে, তাই এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র ছাড়াই সংগ্রহ চলছে, ছাড়পত্র অফিসার নেই এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে আমরা অফিসকে জানাবো, কালকে থেকে ছাড়পত্র অফিসারকে পাবেন, ছাড়পত্র ছাড়া সংগ্রহ নিয়ম বহির্ভূত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাড়পত্রের মাধ্যমেই সংগ্রহের নিয়ম রয়েছে কিন্তু ছাড়পত্র অফিসার কুমারখালীতে থাকায় এভাবেই সংগ্রহ চলছে, তিনি এ ব্যাপারে নিউজ না করার জন্য বলেন এই প্রতিবেদককে। অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বোরো সংগ্রহ ২০২৪ মৌসুমেও কোনো ধরনের প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই জগতি গুদামের ওসিএলএসডি বরাদ্দকৃত চাল সংগ্রহ করেন মিলারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এবং সেই ধারা অব্যাহত রেখে আমন সংগ্রহ ২০২৪-এ প্রত্যয়নপত্র ছাড়া একই কায়দায় সংগ্রহ করে চলেছে। জানা গেছে যদি কখনো প্রয়োজন পড়ে তখন প্রত্যয়ন অফিসারকে দিয়ে সংগ্রহের পরে প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। প্রত্যয়ন অফিসার আসাদুজ্জামান টুটুলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি খুলনার পাশাপাশি কুমারখালীতে সংযুক্ত আছি, আমি অসুস্থ থাকায় কুষ্টিয়াতে যেতে পারিনি, সুস্থ হলে কুষ্টিয়াতে যাবো। কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আল ওয়াজিউর রহমানকে মুঠোফোনে প্রত্যয়নপত্র ছাড়া সংগ্রহের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সোজা উত্তর দেন, আপনি প্রতিদিন ফুড অফিস নিয়ে নিউজ করলে আমি কি উত্তর দেব আপনাকে, এত অনিয়ম হলে তো নিউজ হবে, অনিয়ম বন্ধ করেন না কেন? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি লাইনটি কেটে দেন। প্রসঙ্গত, গত রোববার (৮ই ডিসেম্বর) মানবজমিন পত্রিকায় কুষ্টিয়া খাদ্যনিয়ন্ত্রক অফিস থেকে ৭০ পয়সা চুক্তিতে গম যাচ্ছে মিলে শিরোনামে নিউজ প্রকাশ হয়।