প্রথম পাতা
এটাই বাংলাদেশ!
সাজেদুল হক
৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারএটাই বাংলাদেশ। সম্প্রীতির-বন্ধনের। ছাত্র-জনতার ঐক্যের। ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার। মঙ্গলবার বিকাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে রক্ত হিম করা একটি খবর। চট্টগ্রাম আদালতের অদূরে হত্যা করা হয়েছে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের সমর্থকরা কুপিয়ে হত্যা করেছে তাকে। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা-উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আশঙ্কা দেখা দেয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। কিন্তু রাজনীতিবিদ থেকে আলেম, ছাত্রনেতা থেকে সাধারণ মানুষ সবার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয় একটি আহ্বান-‘ধৈর্য ধারণ করুন, সম্প্রীতি বজায় রাখুন।’ এতে মিলে অভূতপূর্ব সাড়া। একটি জাতি ফিরে যায় তার মিলনের স্থলে। মিছিল হয়েছে, প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু সংঘাত এড়িয়ে চলে জনতা। লাশ কাঁধে নিয়েও পরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়। আলিফের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হলেও ঘটেনি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সবার উপরে বাংলাদেশ- এটাই যেন প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকবার। মানুষের ঐক্য আপাত হলেও নস্যাৎ করে দেয় ষড়যন্ত্র।
একটি জানাজা, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক
সাইফুল ইসলাম আলিফ ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টেও। তার সামনে ছিল অনেক পথ পাড়ি দেয়ার হাতছানি। কিন্তু ঘাতকরা দুঃসাহস দেখিয়ে হত্যা করেছে তাকে। শহীদ আলিফের অবুঝ সন্তান জানেও না তার বাবা আর কোনো দিন ফিরবে না। সন্তানের জন্য আহাজারি করতে করতে আলিফের বাবা বার্তা দিয়েছিলেন, সম্প্রীতি রক্ষার। কার সাধ্য আছে তার মাকে সান্ত্বনা দেয়! তবে বাংলাদেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে বিদায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মানই দেখিয়েছে। আমাদের ইতিহাসে অল্প কিছু জানাজাই বারবার আলোচনায় আসে। নিশ্চিতভাবেই সে তালিকায় যোগ হলো সাইফুল ইসলাম আলিফের নাম। চট্টগ্রামে তার জানাজায় যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তারা চোখের পানিতে বিদায় জানিয়েছেন আলিফকে। কিন্তু কোথাও সামান্য বিশৃঙ্খলাও করেননি। জানাজায় শরিক হয়েছিলেন ৫ই আগস্টের পটভূমিতে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা সব পক্ষের প্রতিনিধি। ছিলেন উপদেষ্টা, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পক্ষের প্রতিনিধিরা।
ভারতীয় মিডিয়ার বিরামহীন অপপ্রচার
৫ই আগস্টের পর থেকে বিরামহীনভাবে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশ। ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের দিন এমনকি এ খবরও দেয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্স চলে গেছেন। পাশের বাড়ির মিডিয়ার এ ধরনের প্রচারণা থেমে নেই। সাংবাদিকতার রীতিনীতির বাইরে গিয়ে প্রতিনিয়ত তারা ছড়াচ্ছে নানা গুজব, দিচ্ছে উস্কানি। তবে বাংলাদেশের জনগণ এসব উস্কানির ফাঁদে পা দেয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পরম ধৈর্যের সঙ্গে তার প্রতিবেশীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে গেছেন। তবে কিছু বিচ্যুতি যে ঘটেনি তা নয়। যদিও এর প্রায় সবই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট। ধর্মীয় কারণে কারও ওপর কিংবা কারও বাড়িঘরে হামলা এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
জাতীয় ঐক্যের বার্তা রাজনৈতিক দলের
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এরইমধ্যে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। আলাদা দিনে বৈঠক করেছেন তারা। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি এবং জামায়াত দু’টি দলের পক্ষ থেকেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। যদিও বিশেষত বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিও জানিয়ে আসছে।
ছাত্র-জনতাকে অভিবাদন
বর্তমান পরিস্থিতির ভূমিকার জন্য জনগণকে অভিবাদন জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম। মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, দায়িত্ব ও দরদের নজির দেখিয়ে আপনারা বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন। বাংলাদেশ আর কারও ষড়যন্ত্রের সামনে পরাস্ত হবে না। ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও লিখেছেন, আমাদের ব্যক্তি ও সমষ্টির ‘শক্তি’ সাধনায় দরদি ও দায়িত্ববান হয়ে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠা মোক্ষ। আমাদের এ অভ্যন্তরীণ শক্তি যেকোনো বহিঃশত্রুকে পর্যুদস্ত করবে। আমরা আর Colonizable হবো না।
বিশেষ ধন্যবাদ প্রাজ্ঞ আলেম ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রাপ্য। আপনারা এ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে বাঙালি মুসলমানকে দায়িত্বশীল আচরণে অনুপ্রাণিত করেছেন। ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে আপনাদের আজ ও আগামীর প্রাজ্ঞ উদ্যোগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আপনাদের ইজ্জত ও শরিকানা নিশ্চিত করবে। পোস্টে আরও বলা হয়, হঠকারিতা, নেতিবাচকতা ও ভাঙনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আমাদের সৃজনশীল ও ইতিবাচক মানসিকতায় এ রাষ্ট্রকে গড়তে হবে। এ রাষ্ট্র পরিগঠন করলেই কেবল জুলাই শহীদানসহ শহীদ আলিফের শাহাদাত অর্থবহ হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম লিখেছেন, মঙ্গলবার দেশের মানুষ; রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক সমাজ এবং স্থানীয় ও বিদেশে অবস্থানরত প্রভাবশালী বাংলাদেশিরা অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এখনো কিছু বিষয়ে উত্তেজনা থাকলেও আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমরা মাথা উঁচু করে কঠিন এই পরীক্ষায়ও উতরে যাবো। স্বার্থান্বেষী কিছু গোষ্ঠী ও ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের পাতা ফাঁদে বাংলাদেশের মানুষ কখনো পা দেবে না। দেশের মানুষের বৈপ্লবিক চেতনা যে দারুণভাবে জ্বলজ্বল করছে, সেটা বেশ স্পষ্ট। এটা কয়েক দশক ও শতক ধরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
সংখ্যালঘু সমপ্রদায় আগের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাচ্ছে
ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ) বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। জরিপের ফলাফলে নিরাপত্তা নিয়ে ধারণায় মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।
গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। মাত্র ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য আগের চেয়ে খারাপ নিরাপত্তা দিচ্ছে। ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।
জরিপে এক হাজার উত্তরদাতাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের তুলনা করতে বলা হয়। বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের জন্য এক হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে সমানসংখ্যার নারী ও পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকের একটু বেশির বয়স ৩৪ বছর বয়সের নিচে। উত্তরদাতাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শহুরে মানুষ।
শেষ কথা: যুগের পর যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করেছে এ ভূমিতে। মর্মান্তিক ঘটনা যে কখনও ঘটেনি তা নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে সৌহার্দ্য আর ভালোবাসারই। আরও একবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। মানুষ আগলে রেখেছে মানুষকে। পরাভূত করেছে চক্রান্ত আর প্রচারণাকে। তবে এ লড়াই এখানেই শেষ হবে না। সামনে দীর্ঘ কঠিন পথ।
Nice writings, keep it up
ধন্যবাদ সাজেদুল হক কে সময়উপযোগি এই লেখার জন্য। সেই সাথে ধন্যবাদ মানবজমিন কে।
হিন্দুরা তো আমাদের ই প্রতিবেশী ভাই-বোন, আমাদের ই দৈনন্দিন জীবনের সুখ দুঃখের সাথী। তাদেরকে উস্কানি দিয়ে প্রোলোভন দেখিয়ে ভারতের একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিপথে টানছে, তারা কোন দিন-ও সফল হবে না। দেশপ্রেমিক হিন্দু ভাই বোনেরা ও-দের হীন ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবে, এটা কোন ভাবেই বিশ্বাস হয় না।
শেষ কথা: যুগের পর যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করেছে এ ভূমিতে। মর্মান্তিক ঘটনা যে কখনও ঘটেনি তা নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে সৌহার্দ্য আর ভালোবাসারই। আরও একবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। মানুষ আগলে রেখেছে মানুষকে। পরাভূত করেছে চক্রান্ত আর প্রচারণাকে। তবে এ লড়াই এখানেই শেষ হবে না। সামনে দীর্ঘ কঠিন পথ।
জী এটাই বাংলাদেশ। আমরা সম্পৃতিতে বিশ্বাস করি এবং রক্ষা করি।..... ফ্যাসিস্ট এবং তাদের প্রভুরা চেয়েছিল দাঙ্গা হোক। বিগত ১৫-১৬ বছর ওরা এটাই করেছে। কিন্তু আমরাতো মানুষ। ফ্যাসিস্ট না বা অমানুষ না। দাঙ্গা বাধেনি বলে ফ্যাসিস্টদের মন খারাপ।। আমরা দেশকে ভালবাসি এবং ভালবাসি বলেই সম্পৃতিতে বিশ্বাস করি। হিন্দুরা যদি একটু বোঝার চেষ্টা করত যে তাদেন নিয়ে একদল খেলছে এবং ফাইদা লুটছে তাহলে এ দেশ আরও ভাল থাকত।
নিরপেক্ষভাবেই বলছি, খুশি হতে পারিনি। কারণ প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সহিংসতা হচ্ছে!
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য মানবজামিনকে জানাই নিরন্তর ভালোবাসা
ধন্যবাদ! মানবজমিন দীর্ঘজীবী হোক!
প্রতিবেশীর হাঁক-ডাক প্রমান করে বাংলাদেশ ঠিক পথেই আছে। গোলামী দালালী বাংলাদেশের জনগণ করে না, করবে না।
সঠিক বলেছেন।
এজন্যই আজকে প্রায় ১২/১৩ বছর ধরে শুধুমাত্র মানবজমিন পত্রিকাই পড়ি। কোন সংবাদ আসলে আগে মানবজমিনে চেক করি। যুগ যুগ বেচে থাকুক মানবজমিন সাংবাদিকতার রীতি নিয়ে মানুষের অন্তরে। স্যালুট মানবজমিন। অপসাংবাদিকতার যুগে শুদ্ধ সংবাদপত্র হওয়ার জন্য।
eNactment of Dot? Any visible objects is the production that comes from a dot. A dot always tends to form a meaningful shape, numbers or desirable configurations. •Why do we need constitution? Constitution is a ‘holistic approach’ that helps us designing how a nation would like to see their future to be defined. •Why do we need formal education? Formal education is a platform that helps us to learn how to organize our unorganized thoughts in a ‘disciplined -way’! •How can we be a ‘civilized-nation’? We need : 1. Open ‘mind’, 2. Open ears, eyes: alertness! 3. Pro-active mentality, 4. Inquisitiveness, 5. Self-critic, 6. Soft & short voiced, 7. Logical, 8. Emotional: sympathetic [common feelings], empathetic [be in others shoes], passion, patriotic; 9. Honesty, 10. Hard working!
তবে, আর কত এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে আমাদের। এ যেন নিজ দেশে পরবাস।
জী এটাই বাংলাদেশ। সম্প্রীতির দেশ।
No body will succeed to break the communal harmony in this country.
সাজেদুল হকের রিপোর্ট যেন বাস্তবতার উদাহরণ। চমৎকার লেখা। ভালোবাসা আপনাকে, মানবজমিন অনেক এগিয়ে যাক।
বাংলাদেশের মিডিয়াগুলা সত্যকে সত্য বললে কোন অপশক্তি এদেশে হট্টগোল সৃষ্টি করতে পারবে না। মানবজমিন পত্রকে ধন্যবাদ জানাই ঘটনাগুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করার জন্য
ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হয়েছে, মুঘল আমলের মত বাংলাদেশ ধর্মীয় মূল্যবোধ বিবেচনা সৌহার্দ্যে পরিচয় নিশ্চিত করেছে, ষড়যন্ত্র আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে
কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই! তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেবে।