ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সেনাবাহিনী কতোদিন মাঠে থাকবে এই সিদ্ধান্ত সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবারmzamin

সেনাসদরের স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার বলেছেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী কতোদিন মাঠে থাকবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সেনাবাহিনী প্রশাসনকে ৬০ দিন সহায়তা করবে এই তথ্যটি সঠিক নয়। ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কতোদিন থাকবো এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। কারণ সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে, সরকারই এটা নির্ধারণ করবে কতোদিন মোতায়েন থাকা প্রয়োজন। গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেতন। এই ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে যে, কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে যেন আমরা সেনাবাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হতে না দেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এটা প্রতিরোধ করার। এ ছাড়া আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে এই ধরনের (মানবাধিকার লঙ্ঘন) কোনো ঘটনা ঘটতে যেন না দেই। যে ঘটনাগুলো ঘটছে আপনারা সেগুলো জানতে পারছেন। এর বাইরে আমাদের কার্যক্রমের কারণে কতোগুলো পরিস্থিতিতে এই ধরনের কোনো কিছু প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে, এটা হয়তো অনেক সময় জনসম্মুখে আসে না। 

ইন্তেখাব হায়দার বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। পুলিশের কাছে অপরাধের যে তথ্য থাকে, এটা নিয়ে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ আমরা করিয়েছি। সে অনুযায়ী, সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার পরে বা নির্বাহী ক্ষমতা পাওয়ার পরে আগের তুলনায় অপরাধের সংখ্যা কমেছে। নথিভুক্তি কমেছে। তার মানে পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। আমাদের হয়তো প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি হয়নি, এটা অনেকে বলতে পারেন। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। 

শিল্প খাতের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইন্তেখাব হায়দার বলেন, শিল্প খাতে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক শ্রমিক অসন্তোষের (আনরেস্ট) ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো সহিংস ছিল, বিশেষ করে শুরুর দিকের যে ঘটনাগুলো। আমাদের সঙ্গে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীও ছিল, তারা যদি সময়মতো গিয়ে তাদের (শ্রমিক) শান্ত করার ব্যবস্থা না করতেন, হয়তো এর থেকে অনেক বেশি ঘটনা ঘটতে পারতো। এসময় তিনি বলেন, পরিস্থিতির প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয় কিন্তু সেনাবাহিনী টার্গেট করে কাউকে মেরেছে এ রকম কোনো ঘটনা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, দেশব্যাপী চলমান অভিযানে ৬ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও প্রায় ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এসব অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৬০০-এর অধিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে বর্তমানে দেশের ২০৮৯টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে প্রায় সবগুলোই এ মুহূর্তে চালু রয়েছে। এর পাশাপাশি ৭০০-এর অধিক বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা, অফিস সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৩৮৮টি।  তিনি আরও জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এবং বহু মানুষের জান ও মালের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তিবর্গ ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করার কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছে। যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের অধিক মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে প্রত্যন্ত এলাকাসহ সকল দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। এ ছাড়া দুর্গত এলাকায় মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তা, মহাসড়কে ট্রাফিক চলমান রাখা, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও সড়ক সংস্কার, এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখে, যা এখনো চলমান রয়েছে। এসময় বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণ ও সহমর্মিতা ছিল সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চলের ৪টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হলে একইভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা কাজে অংশগ্রহণ করে। দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার কর্তৃক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়, যা এখনো চলমান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যাতে সুষ্ঠুভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তার জন্য সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষমতার কার্যকরী প্রয়োগের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শিল্পাঞ্চলের বিশৃঙ্খলা, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে এ মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ।

পাঠকের মতামত

জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সেনাবাহিনী মাঠে থাকা অত্যান্ত জরুরী, কারণ পুলিশ কাজ করতে পারছেনা। আওয়ামীলীগের দালালী করা পুলিশ কিছু পলাতক বাকি যারা ডিউটি করছে তাঁরা গা বাছানোর জন্য এখন বিএনপির সাথে তাল মিলাচ্ছে তাঁদের চাকুরি বাছানোর জন্য।

Imran
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৪ অপরাহ্ন

Very good job

iftekhar ahmed
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন

ওনারা মাঠে থাকুক। তবে স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের পূণর্বাসন ঠেকানো উচিৎ।

স্বাধীন বাংলাদেশী
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১:১৭ অপরাহ্ন

আপনারা মাঠে থাকুন, সরকারের সাথে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনগণের পূর্ণ সমর্থন আছে।

মোহাম্মদ রহমান
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status