প্রথম পাতা
মাসুদের স্ত্রীর কান্না থামবে কবে
ফাহিমা আক্তার সুমি
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার‘কী করবো, সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে, কোথায় যাবো আমার সন্তানদের নিয়ে? ঘরে ছড়িয়ে থাকা ওদের বাবার জিনিসপত্র সারাক্ষণ জড়িয়ে ধরে কাঁদে। রাত হলে বাবাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় না। ঘরে-বাইরে বাবাকে খুঁজে।’ এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চল্লিশ বছর বয়সী মো. মাসুদের স্ত্রী। গত ১৯শে জুলাই বিকালে রাজধানীর কদমতলী থানার মেরাজনগর এলাকায় মসজিদে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১টার সময় মারা যান। মাসুদ কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের ব্যবসা করতেন। তার ছোট্ট তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন মাসুদের স্ত্রী হেনা বেগম। সন্তানরাও বাবাকে দেখতে না পেয়ে ভেঙে পড়েছে। রাত-দিন পাগলের মতো বাবাকে তারা খুঁজতে থাকে।
মাসুদের স্ত্রী হেনা বেগম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের তিন সন্তান ওরা সবাই ছোট। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমাদের। সেই ছিল পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তখন মোটামুটি সংসার চলতো। ওদের বাবা চলে যাওয়ার পর বর্তমানে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরা কতোদিন দেখবে আমাদের, তাদেরও তো সংসার আছে। একসময় আমাদের মানুষ ভুলে যাবে। আমার শ্বশুর আব্দুল গফুর অনেক আগে মারা যান। তিনি সচিবালয়ের গাড়িচালক পদে কর্মরত ছিলেন। আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আমি সন্তানদের নিয়ে একটি ভাঙা ঘরের নিচে বসবাস করতাম। উপরে থাকা টিনের চাল দিয়ে পানি পড়তো। ওদের বাবা মারা যাওয়ার পর এলাকাবাসী ঘরটি ঠিক করে একটু ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার বড় ছেলে মাহফুজ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, মেজ ছেলে মারুফ তৃতীয় শ্রেণি আর ছোট ছেলে মাশরাফি প্লেতে পড়ে। সন্তানরা ঘরে ঘুরে-ফিরে আর তাদের বাবাকে খুঁজে। অপেক্ষায় থাকে বাবা কখন আসবে। সারাক্ষণ বাবার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র ধরে বসে থাকে। একটু অসুস্থ হলে আব্বুকে এনে দাও করতে করতে গলা শুকিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, আমি সন্তানদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। তাদেরকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেবো। সারাজীবন কীভাবে যাবে, কী করবো- কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। মাসুদ খুব ভালো মানুষ ছিল। ঘটনার দিন জুমার নামাজ শেষে আমাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছে। বিকালের দিকে মসজিদে আসরের নামাজ পড়তে বের হলে রাস্তার মোড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলিটা এসে তার মাথায় লাগে। এর আগে মেজ ছেলেটাকে বাইরে থেকে এনে বাসায় রেখে যায়। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা তাকে টার্গেট করে হত্যা করেছে। যতক্ষণ সময় পেতো সন্তানদের আগলে রাখতো। সে অনেক ভালো বাবা ছিল। বাসা থেকে বের হওয়ার দুই মিনিটের মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে। সেদিন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। চারদিকে বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছে। ওইদিন ঢাকা মেডিকেলে রাত একটার দিকে মারা যায় আমার স্বামী। আমি তার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এমন সুস্থ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে দুই মিনিটের মধ্যে এই পরিস্থিতি হলো। আমার সন্তানদের কাছ থেকে তাকে কেড়ে নিয়েছে খুনিরা। কিছুতেই ভুলতে পারছি না, সন্তানদের সামনে কাঁদতেও পারি না। কী করবো? কোথায় যাবো সন্তানদের নিয়ে। আমার জীবনটা কীভাবে যাবে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। হেনা বলেন, দেশের জন্য আমার স্বামী জীবন দিয়েছে, আমার এমন অবস্থায় সন্তানদের লেখাপড়াসহ সব দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত। আমাকে সাপোর্ট দেয়ার মতো কেউ নেই। আজ শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে থাকলে যেভাবে হোক কষ্ট করে তাদের নাতি-নাতনিদের দেখতেন, খোঁজখবর নিতেন। এদিকে আমার বাবার বাড়িতেও তেমন কেউ নেই, বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। ওর বাবা এলাকায় একটি দোকান ভাড়া করে ব্যবসা করতো; এখন সেটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের জন্য তেমন কিছু রেখে যেতে পারেনি। এই ক’দিন মনে হচ্ছে আমার জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছি আমি।
মাসুদের ভাই মো. শরীফ উল্লাহ বলেন, গত ১৯শে জুলাই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা কদমতলী থানা এলাকা থেকে এসে আমাদের মহল্লায় আসে। এদিকে অপর পাশ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এলে তাদের দু’-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় আমার ভাই বাসা থেকে বের হলে গুলিবিদ্ধ হয়। তখন ঘটনাটি শুনে আমি বাসার পেছনের গলিতে গিয়ে দেখি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। তার ডান চোখের উপর কপালে একটি গুলি লাগে। ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর রাত ১টার দিকে মারা যায়। আমার ভাই কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের ব্যবসা করতেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বর্তমানে ঢাকার কদমতলীর ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা বাড়ি করে থাকি। আমার ছোট ভাই মাসুদের জন্ম এই ঢাকাতেই। আমাদের চার ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ সবার ছোট ছিল। বাবা সচিবালয়ে গাড়িচালকের কাজ করতেন। তিনি বলেন, ভাইয়ের তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা তিনজনই পড়াশোনা করে। তার স্ত্রী গৃহিণী। আত্মীয়-স্বজন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন সেটি দিয়ে বর্তমানে সংসার চলছে। ভাইয়ের সন্তানরা এখনো অবুঝ, বুঝতেই পারছে যে তাদের বাবা নেই। বাবার এই শূন্যতা কি অন্য কিছুতে পূরণ করা যায়। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমাদের কষ্ট হলেও ভাতিজাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই, তাদের মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। এখন হয়তো শুরুতে অনেকে তাদের কিছু না কিছু সহযোগিতা করছে, খোঁজ-খবর রাখছে কিন্তু একটা সময় তো ওদের সবাই ভুলে যাবে। তখন ওদের মায়ের ও সন্তানদের জীবন চালাতে অনেক কঠিন হবে। ভাইয়ের মৃত্যুটা এখনো মেনে নিতে পারছি না, এলাকার মধ্যে এসে খুনিরা এভাবে গুলি করে মানুষ মারবে- এটি চিন্তাতেও ছিল না। আজ আমার ভাইটা নেই, সে আর ফিরে আসবে না। এখন ভাইয়ের চেয়ে এই অবুঝ বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ভাবছি, তাদের কী হবে? রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া আমার ভাই যেন শহীদী মর্যাদাটা পায়।
We want to help this family ..can you please provide the contact details or any account number
খবরের কাগজ পড়ে আমার কখনো চোখে পানি আসে নি। তবে আজকে ব্যতিক্রম। আমার এমন সমর্থ্য নেই তাদেরকে সাহায্য করার। দোয়া করি।
I want to help her n her family 01941456737
Can I have contact detail of this family please