খেলা
ক্রীড়াঙ্গনের স্থবিরতা কাটেনি তিন মাসেও
স্পোর্টস রিপোর্টার
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবারড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করেছে। এই তিন মাসে দেশের অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারে হাত দিয়েছে বর্তমান সরকার। ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন এসেছে। নাজমুল হাসান পাপনের জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় পরিচালক হয়ে সভাপতি হয়েছেন ফারুক আহমেদ। ফুটবলে সালাউদ্দিন যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তাবিথ আউয়াল। তবে অন্যসব ফেডারেশনের অবস্থা বেহাল। ওইসব ফেডারেশনে গতি ফেরাতে ও ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারে সার্চ কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ভেঙে দেয়া হয়েছে সকল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি। একযোগে ৪২ ফেডারেশন ও এসোসিয়েশনের সভাপতিকে অব্যাহতি দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এসব করেও ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণ ফেরাতে পারেনি বর্তমান সরকার।
স্থবির জেলার খেলাধুলা
জেলার খেলাধুলার মূল চালিকা শক্তি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জাতীয় পর্যায়েও জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে অংশ নেয় জেলাগুলো। গত ৮ই আগস্ট অন্তর্বরর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দায়িত্ব নেয়ার সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই জেলা-বিভাগীয়, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা-বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দেয় তার মন্ত্রণালয়। গত ২১শে আগস্ট অ্যাডহক কমিটি গঠনের একটি রূপরেখা প্রদান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রশাসনিক রদবদলে অনেক জেলায় ডিসি পরিবর্তন হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নিলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠনে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতাই বিরাজ করছে সারা দেশে।
ফেডারেশনগুলোতে স্থবিরতা
১৯৯৮ সাল থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ফেডারেশনের নির্বাচন হলেও ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়া বাকি সকল ফেডারেশনে সভাপতি সরকার থেকে মনোনীত। দলীয় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিরা সভাপতি হিসেবে ছিলেন বিভিন্ন ফেডারেশনের। ক্রীড়া সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও তাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতি মনোনীত করতো। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নিয়েই এক যোগে ৪২ ফেডারেশন/এসোসিয়েশন সভাপতিকে অব্যাহতি দেন। ৪২ ফেডারেশনের সভাপতিদের অব্যাহতির আগে কাবাডি, ব্রিজ ও দাবা ফেডারেশনের সভাপতিকে অপসারণ করেছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৪৫টি ফেডারেশনের সভাপতি নেই। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক ফেডারেশনে কর্মকর্তারা দায়িত্ব ছেড়েছেন। অনেকে আবার পলাতক। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু, যুগ্ম সম্পাদক সরাফত আলী পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব ছেড়েছেন সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ মোল্লা। টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাঙ্গাগীর আলম, হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক সাঈদ পলাতক। ফেডারেশনে এমন অনেক কর্মকর্তার দেখা মিলছে না। এসব জায়গায় এখনো নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়নি ক্রীড়া পরিষদ। অ্যাডহক কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও সেটাও করা হচ্ছে না। নতুন সভাপতিও নিয়োগ দিতে পারেনি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এসব কারণে অনেক ফেডারেশনে চলছে এক প্রকার অস্থিরতা।
দুই মাস পার করেছে সার্চ কমিটি
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২৯শে আগস্ট পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে। দুই মাসের মধ্যে তাদেরকে বিভিন্ন ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র, কার্যক্রমসহ আনুষাঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়। সার্চ কমিটি ইতোমধ্যে দুই মাস পার করেছে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কিছু করতে পারেনি। যদিও এরইমধ্যে বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে সভা করেছে ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারে গঠিত এই কমিটি। এই সভার সারসংক্ষেপ এরইমধ্যে মন্ত্রণালয়েও জমা দেয়া হয়েছে। কমিটিও জমা দিয়েছে বেশ কয়েকটি। কিন্তু কোন কিছুই আলোর মুখে দেখেনি।
আসিফ মাহমুদ ক্রীড়া উপদেষ্টা হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যদিও তার সেই মতবিনিময়ে দু’চারজনের বেশি কথা বলার সুযোগ পাননি। সাংবাদিকদের পর বর্তমান সরকারের ৫০ দিনের মাথায় এসে বিভিন্ন ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থার বর্তমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিয়ম করেন যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা। ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের কথা বলে বর্তমান ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসে সমালোচনার জন্ম দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। বর্তমান সরকারের এই সময়ে বলার মতো গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি ক্রীড়াঙ্গনে।