বাংলারজমিন
সরাইলে খাস পুকুর, খাল দখল বন্ধ করলেন ইউএনও-ওসি
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে রাতের অন্ধকারে সরকারি খাস পুকুরে ও খালে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ফেলে দখল করছিল আওয়ামী সমর্থিত মিজান গংরা। গভীর রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবা উল আলম ভূঁইয়া ও অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুর রাজ্জাকের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় ওই দখল কার্যক্রম। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সেখানকার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার শাহবাজপুর প্রথম গেট এলাকার পোস্ট অফিস পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। তবে মিজান মিয়া বলছেন, এটা আমার ব্যক্তি মালিকানা নাল ভূমি। ইউএনও, পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহবাজপুর পোস্ট অফিস পাড়ায় সরকারি খাল ও পুকুরে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ফেলে গত বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে ভরাট করতে থাকেন একই এলাকার মিজান মিয়া। এই ভরাটের ফলে পোস্ট অফিস পাড়ার শতাধিক হিন্দু ও মুসলমান পরিবারের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সেখানকার বাসিন্দারা শুরুতেই স্থানীয় ভূমি অফিসের লোকজনের মাধ্যমে দখলদারদের বাধা দিয়েছিলেন। ফলে প্রতিশোধ হিসেবে ওই ভূমি অফিসের কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিল কতিপয় কথিত সংবাদকর্মী। তারা নিউজ না করে ভিডিও করে ওই কর্মকর্তাকে তটস্থ’ করার চেষ্টা করেন। এরপরই বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে ওই পুকুর ও খাল ভরাট শুরু করেন। বিষয়টি জেনে যায় প্রশাসন। পরে গভীর রাতে ইউএনও ও ওসির নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভরাট ও দখল বন্ধ করে দেন এসআই মো. ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ।
স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. কামাল মিয়া বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শোভনের প্রিয়ভাজন শাহবাজপুরের মিজান ও মাজেদ। আওয়ামী সমর্থিত ওই দুই ব্যক্তি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করেন। মাজেদ বর্তমানে প্রবাসে আছেন। আর মিজান শাহবাজপুর পোস্ট অফিস পাড়ায় একটি পুরাতন সরকারি খাস পুকুরে ও সংলগ্ন খালে মাটি ফেলে ভরাট ও দখলের চেষ্টা করছেন গত কয়েকদিন ধরে। নিজের ক্রয়কৃত নিচু জমির দাম বৃদ্ধির জন্যই তারা খাস পুকুর আর খাল ভরাট করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ পাল বলেন, গত দেড়/দুইশ’ বছরের পুরাতন এই খাল দিয়ে গ্রামের পানি তিতাস নদীতে যায়। এটা বন্ধ হলে জনদুর্ভোগ বেড়ে যাবে। মিজান বলেছেন পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করবেন না। তবে মিজান বলেন, তিনি নিজের মালিকানাধীন নাল ভূমি ভরাট করছিলেন। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে প্রশাসনকে দিয়ে মাটি ভরাটের কাজটি বন্ধ করিয়েছেন। পানি নিষ্কাশন বন্ধ করবো না। রাস্তার নিচু জায়গা উঁচু করতে মাটি ফেলেছিলাম। লোকাল আমিন দিয়ে মেপে সীমানা ঠিক করেছিলাম। প্রয়োজনে সরকারি লোক দিয়ে জায়গাটি আবার মাপজোখ করবো। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে আপাতত মাটি ফেলতে বলেছেন ওসি মহোদয়। সরাইল থানার এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুকুর ভরাট বন্ধ করেছি। সেখানে খাস ও ব্যক্তি মালিকানা জায়গা রয়েছে। সরাইল উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, পুকুর ও খাল দুটিই খাস। ব্যক্তি মালিকানা জায়গা থাকলে সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইন পরিপন্থি কাজ। তাই সেখানে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।