দেশ বিদেশ
এহ্সান মাহমুদের বইয়ের পাঠ পর্যালোচনায় রিজওয়ানা হাসান
আওয়ামী লীগ যা করেছে তা রাজতন্ত্রের আদলে পরিবারতন্ত্র
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, এতদিন আওয়ামী লীগ যা করেছে তা হলো রাজতন্ত্রের আদলে পরিবারতন্ত্র। মানবাধিকার বলতে যা বোঝায় তা আমরা একদমই পাইনি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। নির্ধারিত সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার ছিল। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও ফ্যাসিজমের কমান্ড শুনে অভ্যস্ত। ফলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা দুয়েকদিনের মধ্যে সংস্কার কমিশিনের সঙ্গে বসবো। রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রয়োজন। বইয়ে যে বাস্তবতাগুলো উঠে এসেছে নতুন বাংলাদেশে তা আর চান না বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আদর্শ ও বঙ্গীয় সাহিত্য সভা আয়োজিত এহ্সান মাহমুদ রচিত ‘স্বাধীনতা গণতন্ত্র মানবাধিকার: আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ ২০০৯-২০২৩’ বইয়ের পাঠ পর্যালোচনায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বইটির পাঠ পর্যালোচনায় বক্তারা আওয়ামী শাসনামলে বিরোধী দল দমন, সভা-সমাবেশকে ভেঙে দেয়া, মেহনতী মানুষের বৈষম্যের শিকার, বাঙালি জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, নির্বাচন ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন এবং নতুন বাংলাদেশে দখলদারের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বইয়ের সঙ্গে বর্তমানের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটা ফ্যাসিস্ট রেজিম চলে গেলে মানুষের আকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। জনগণের আকাক্সক্ষার মধ্যে অর্থনৈতিক চাহিদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা পূরণের জন্য বিশাল একটা গ্যাপ রয়েছে। অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, পাওনা দিতে হচ্ছে, তারপর নতুন ঋণ নিতে হচ্ছে। এই বিশাল গ্যাপ রেখে তিনমাসে আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চাইলেও সম্ভব না। তবে আমরা সবার সহায়তায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করছি একটি সম্মানজনক অবস্থাতে উত্তরণ করতে পারবো। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, শাসকগোষ্ঠী সবসময় মনে করে তারা যা জানায় তা-ই জনগণ জানে আবার মিডিয়াও মনে করে তারা যা দেখায় তা-ই জনগণ বিশ্বাস করে। কিন্তু এটা যে সঠিক নয় এবং জনগণ যে সহজে কিছু ভুলে যায় না তা একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। আর এই বিষয়টা এহ্সান মাহমুদের লেখায় ফুটে উঠেছে। সবসময় গণমানুষের একটা ভিন্ন আওয়াজ থাকে তা এহ্সান মাহমুদ এড্রেস করতে পেরেছেন। নেত্র নিউজ-এর প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, এহ্সানের বইটা একটা গল্প বা উপন্যাস নয়, একটা দলিল। এই বইয়ে আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপি’র ওপর নির্যাতন হওয়ার বিষয়টা তিনি তার কলামে তুলে ধরেছেন। তিনি গণমানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, বিভিন্ন সমাবেশে ঘুরেছেন আর সেগুলো তার লেখনিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। এটা একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে গিয়ে লেখার বিষয় নয়, এটা কেবল সত্যের উপস্থাপনা যেটি তিনি করেছেন। বিএনপি’র করে না এমন লোকও গণতন্ত্রের জন্য সমাবেশে যেতো। বিএনপি জণগণের কাছে কিছু ওয়াদা করেছে। আগামীতে যদি বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তবে ওয়াদার বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতায় বইটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, স্বৈরশাসনের যাত্রা ২০০৯ থেকেই শুরু হয়েছে এবং ২৩ সালে এসে তীব্র হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবাদ সম্মেলনে স্তুতি চর্চা হতো। সাংবাদিকতায় কলামগুলো যেন পত্রিকার পাতায় হারিয়ে না যায়। পাঠ পর্যালোচনা সভায় লেখক এহ্সান মাহমুদ, বঙ্গীয় সাহিত্য সভার সালাউদ্দিন শুভ্র এবং প্রকাশক মাহবুব তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হাসান, লেখক গবেষক ও শিক্ষক পারসা সানজানা সাজিদ প্রমুখ।
one number dalal